Pages

Tuesday, 13 December 2016

হামরা সাঁওতাল বটে , শরদিন্দু উদ্দীপন





যেখানে কামিন মরদ 
দিন রাত গতর খাটে
ধান পুঁতে, জনার ফলায়
থালা ভরা শাকভাঁজা মাড়ভাত খায়্যে
তুদের ছানার মুখে অন্ন জোগায়
যেখানে পলাশ রাঙা বাগালের বাঁশি
ঝিম ধরা দুপুরের বেহাগী বাতাস
শাল, মহুল আর শিমুলের বনে
দিনরাত খেলা করে মাতাল ভ্রমর। 

Monday, 28 November 2016

নৈরাজ্য, মন্বন্তর, মহামারীর বাহক নরেন্দ্র মোদিঃ



কারে একেবারে খর্বাকৃতি হলেও “বামন” রাজা মহাবলীকে হত্যা করতে পারে তার প্রতীকী কাহিনী আমরা ভগবত পুরাণে পেয়েছি। এই কাহিনীতে গর্বভরে দাবী করা হয়েছে যে বামন আকারে ক্ষুদ্র হলেও কূটকৌশল এবং বুদ্ধিতে অপ্রতিরোধ্য দুর্জেয়। এখানে বামন ভারতবর্ষের ৩.৫% ব্রাহ্মণের প্রতিনিধি এবং রাজা মহাবলী মূল ভারতের ৯৬.৫% জনগণের শাসক। এই বিশাল সংখ্যক মানুষকে যে বুদ্ধি এবং কৌশলে গোলামীর জঞ্জির পরিয়ে একেবারে প্রসাদান্নভোগী বা উচ্ছিষ্টভোগী পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হয় তার নাম ব্রাহ্মন্যবাদ।
বেদ থেকে একেবারে খ্রিষ্টীয় বার শতক পর্যন্ত লেখা ব্রাহ্মন্যবাদি গ্রন্থগুলি সতর্ক ভাবে পাঠ করলেই আমরা বুঝতে পারব যে ব্রাহ্মন্যবাদ টিকে আছে সম্পূর্ণ আবেগ ও অন্ধবিশ্বাসের উপরে। আর এই অন্ধ বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখার জন্য ব্রাহ্মণেরা মানুষের শরীরে বেড়ি না পরিয়ে মস্তিষ্কতে ঠুলি বসিয়ে দিয়েছে এবং মানুষের আবেগকে ধর্মীয় রসায়নে জারিত করে ব্রাহ্মণের বানীকে অমৃত ভক্ষন এবং তাদের কাজগুলিকে দৈবশক্তির মহিমা হিসবে চিরস্থায়ী করে তুলেছে। তাই এখনো ভারতের মানুষ ব্রাহ্মণের জালিয়াতি, লাম্পট্য, মিথ্যাচার, শঠতা, ভেদনীতি, নরহত্যা, গুপ্তহত্যা এবং নৈরাজ্যকে অন্ধের মত অনুসরণ করে। দেব লীলা হিসেবে মেনে নিচ্ছেন ।
ভারতের আরএসএস এবং তার তৈরি বিজেপি এই ব্রাহ্মন্যবাদী ব্রিগেড। এদের প্রতিটি পদক্ষেপেই রয়েছে এই জালিয়াতির প্রকৌশল। নৈরাজ্য, অরাজকতা, খুন, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, মহামারী, মন্বন্তর এবং মহাপ্রলয়কে এরা এদের ধর্ম প্রতিষ্ঠার উপযুক্ত সন্ধিক্ষণ বলে মনে করে। তাই সুযোগ পেলেই, ক্ষমতা পেলেই ব্রাহ্মণ্যশক্তি ধর্মপরায়ণ হয়ে ওঠে। ব্রাহ্মণ্য ধর্ম মানে অব্রাহ্মণের সর্বনাশ সাধন। 
 
ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি এই ব্রাহ্মন্যবাদীদের পুতবারি সিঞ্চিত এবং নরমেধ যজ্ঞের মনোনীত কান্ডারী। তার গোটা জীবনের প্রোফাইলটাই জালিয়াতী প্রামাণ্য দলিল। তার চা বিক্রেতা ভূমিকা থেকে গত নভেম্বরের ৮/১১/২০১৬ তারিখে নোটবন্দি সবই জালি কারবার। 

মোদিজী একেবারে ধুমকেতুর মত ভারতের দূরদর্শনের মাধ্যমে দেশের জনগণের প্রতি এক জরুরী ঘোষণা করে বলেন যে আজ মধ্য রাত্রের পরে ভারতের ৫০০টাকা এবং ১০০০টাকার নোট আর বাজারে চলবে না। সেগুলি এখন ছেড়া কাগজের টুকরা। এই ঘোষণাকে দূরদর্শনে লাইভ টেলিকাস্ট হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু গবেষক এবং সাংবাদিক সত্যেন্দ্র মুরালীর করা RTI (PMOIN / R / 2016/53416) এবং DOEAF / R / 2016/80904 and MOIAB / R / 2016/80180 থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে প্রধানমন্ত্রীর এই টেলিকাস্ট লাইভ ছিল না। ধরা পড়ে যাবার ভয়ে এখনো এই তথ্য জানানো হচ্ছেনা। ঘোরানো হচ্ছে এ দপ্তর থেকে সে দপ্তরে। প্রশ্ন উঠছে এর পরেও নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে নরেন্দ্র মোদির দেশের এক মহান দপ্তরে পদ আঁকড়ে থাকা উচিৎ কি না?
নোট বদলের আসল উদ্দেশ্য কি?
নোট বদলের পরের দিনই পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে আমি দাবী করেছিলাম যে এটি মোদির নেতৃত্বে “ভারতের খাজানা লুট” এর সব থেকে বড় কেলেঙ্কারি। সেই দাবীর সমর্থন মিলেছে ভূতপূর্ব রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর এবং প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী মনোমোহন সিংহের কাছ থেকে। মোদিজীর এই প্রক্রিয়াকে 'Organised Loot, Legalised Plunder' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন যে পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যেখানে মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখবেন কিন্তু তুলতে পারবেন না। এটা জোর করে মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া।
আসল ঘটনাঃ
এই মহুর্তে দেশের ব্যাঙ্কে মোট অনাদায়ী লোন (Bad loan) এর পরিমান হলো ৬,০০,০০০ কোটি৷
কয়েক সপ্তাহ আগে Credit Rating Agency মোদী সরকারকে রিপোর্ট দেয় যে এই মহুর্তে ভারতীয় ব্যাঙ্ককে ১.২৫ লক্ষ কোটি Capital Infusion দরকার৷
জুলাই ২০১৬ তে ১৩টি ব্যাঙ্ককে ২৩,০০০ কোটি টাকা inject করা হয়৷
২০১৫ সালে অর্থমন্ত্রী অরুন জেঠলি বলেন যে আগামী ৪ বছরে (PSU) ব্যাঙ্ককে চাঙ্গা করতে আরো ৭০,০০০ কোটি দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্র৷
এই পরিমাণে টাকা বাড়াতে পারলেই শিল্পপতিদের লোন মাফ করা যাবে এবং আবার তাদের নতুন লোন দেওয়া যাবে!
ব্যাঙ্ককে টাকা বাড়ানো এবং প্রিয় শিল্পপতিদের ঋণ মকুব ক্রবার জন্য মোদী ২০০০টাকার নোট বাজারে এনে ৫০০টাকা এবং ১০০০টাকার নোট বাতিল বলে ঘোষণা করে দিলেন। ঘোষণা করলেন এই টাকা ব্যাঙ্কে রাখা যাবে কিন্তু যেমন খুশি টাকা তোলা যাবে না। সংসার চালানোর জন্য সামান্য টাকা তুলতে পারবেন।
মোদী সরকার, মোদিপন্থী এবং তাদের পোষা মিডিয়াগুলি ঢাক পেটাতে শুরু করলেন যে এটি কালো টাকা উদ্ধার, জাল টাকা বন্ধ করা এবং সন্ত্রাসবাদীদের আটকানোর জন্য সঠিক পদক্ষেপ যা ৭০ বছর ধরে কোন সরকার করে নি। এই প্রক্রিয়ায় মোদিজী ভারতকে একেবারে ডিজিটাল দুনিয়ার সর্বোচ্চ দেশ হিসেবে টক্কর দেবেন।
RBI এর তথ্যানুযায়ী ১৪লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে ৩৮% নোট ১০০০টাকার, আর ৪৯% নোট ৫০০ টাকার৷
'Bussiness World' এর তথ্যানুযায়ী দেশে 'Fake note' 0.002% of Rs 1,000 notes, and 0.009% of Rs 500 notes.
কাদের দিয়ে খাজানা লুট করলেন মোদি ?
১) ভারতের সেরা ১০০ জন Wilful ডিফল্টার দের মধ্যে State bank of India ৬৩ জনের ৭,০১৬ কোটি টাকা যার মধ্যে Kingfisher এর বিজয় মালিয়ার ১,২০১ কোটি টাকা মুকুব (Write off) করলো সরকার৷
২) রিলায়েন্স গ্রুপের মালিক অনিল আম্বানি মোদীর এবং বিজেপির খুব স্নেহভাজন৷তিনি দেশের সবচেয়ে বড়ো ডিফল্টার৷
টাকার পরিমান মার্চ ২০১৫ তে ১.২৫ লক্ষ কোটি৷
৩)বেদান্ত গ্রুপের মালিক অনিল আগরওয়াল৷ ধাতু ও খনির ব্যাবসায়ী দ্বিতীয় বৃহত্তম ডিফল্টার যার পরিমান ১.০৩ লক্ষ্য কোটি৷
৪) ইএসএসআর গ্রুপের মালিক রুইয়া ব্রাদার্স (শশী রুইয়া ও রবি রুইয়া) ডিফল্টার, ঋনের পরিমান ১.০১ লক্ষ কোটি৷
৫) আদানী গ্রুপের মালিক গৌতম আদানি, মোদীর খাস লোক৷ডিফল্টার ৯৬,০৩১ কোটি টাকা৷
৬)জয়াপি গ্রুপের মালিক মনোজ গৌড় ৭৫,১৬৩ কোটি টাকার ডিফ্লটার।
৭) #JSW Group: মালিক সজ্জন জিন্ডাল৷ডিফল্টার রাশি ৫৮,১৭১ কোটি
৮) #GMR Group: মালিক প্রোমোটার GM Rao. যিনি দিল্লী T3 International Airprt Terminal বানালেন৷ ডিফল্টার রাশি ৪৬,৯৭৬ কোটি টাকা৷
৯) #Lanco Group: যার মালিক মধূসুদন রাও৷ডিফল্টার রাশির পরিমান ৪৭,১০২কোটি টাকা৷
১০) #Videocon Group: মালিক বেণুগোপাল৷ডিফল্টার রাশি ৪৫,৪০৫ কোটি টাকা৷
১১) #GVK Group: মালিক GVK Reddy৷ডিফল্টার ৩৩,৯৩৩ কোটি টাকা৷
১২) #Usha Ispat: ডিফল্টার ১৬,৯৭১ কোটি টাকা৷কোম্পানিটির বর্তমানে কোনো হদিস নেই৷একটি সংবাদ সংস্থা তদন্ত করতে গিয়ে দেখে যে কোম্পানীটি বন্ধ এবং রহস্যময় ভাবে কোম্পানীর মালিকের অস্তিত্বই নেই৷
১৩) #Lloyeds Steel: ডিফল্টার ৯,৪৭৮ কোটি টাকা৷কোম্পানীটি বর্তমানে অন্য একটি কোম্পানী অধিকৃত৷
১৪) #Hindustan Cables Ltd.:ডিফল্টার ৪,৯১৭ কোটি টাকা৷বর্তমানে ব্যাবসা গুটিয়ে নিয়েছে৷
১৫) #Hindustan Petroliam Mfg.Co.: ডিফল্টার ৩,৯২৮ কোটি টাকা৷বর্তমানে কোম্পানীটি বন্ধ৷
১৬) #Zoom Developer: ডিফল্টার ৩,৮৪৩ কোটি টাকা৷কোম্পানীটির অস্তিত্ব মেলেনি৷
১৭) #Prakash Industry: ডিফল্টার ৩,৬৬৫ কোটি টাকা৷কোম্পানী চালু অাছে৷
১৮) #Crane Software International: ডিফল্টার ৩,৫৮০ কোটি টাকা৷কোং চালু অাছে৷
১৯) #Prag Bosimi International: ডিফল্টার ৩,৫৫৮ কোটি টাকা৷কোং চালু অাছে৷
২০) #Kingfisher Airlines: ডিফল্টার ৩,২৫৯ কোটি টাকা৷এখানে বলে রাখা প্রয়োজন এটা PNB অর্থাৎ পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া৷অার অাগে যেটা মাফ হয়েছে বললাম সেটা শুধু মাত্র SBI অর্থাৎ state bank of india র ৬৩ জনের তারমধ্যে Kingfisher এর বিজয় মালিয়া একজন৷kingfisher aviation ekhon বন্ধ৷
২১) #Malvika Steel: ডিফল্টার ৩,০৫৭ কোটি টাকা৷কোম্পানীটি বন্ধ৷
(তথ্য সংগৃহীত)


ইতি মধ্যে মাননীয় রঘুরাম রাজন হিসেব করে দেখিয়েছেন যে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার কোটি টাকার রাজস্য, ১.৫ লক্ষ কোটি জিডিপি এবং ৩০ কোটি শ্রমদিবস নষ্ট হয়েছে। আরো ৫০ দিন এই ভাবে চললে যে পরিমাণে অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে তা কালো টাকার কয়েক গুন বেশি।

 প্রখ্যাত নোবেল জয়ী এবং অর্থনীতিবিদ মাননীয় অমর্ত্য সেন এই প্রক্রিয়াকে স্বৈরতান্ত্রিক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কোন অর্থনৈতিকই বিশেষজ্ঞ মোদির এই নোট কাণ্ডকে কালোটাকা ফিরিয়ে আনা বা নোটের জাল কারবার রোখার জন্য সঠিক পদক্ষেপ বলে স্বীকার করেন নি। বরং মানুষের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া এই অর্থনৈতিক অবরোধ দেশের চরম ক্ষতি এবং নৈরাজ্যের কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
আমরা দাবী করছি মোদি আসলে ব্রাহ্মন্যবাদী নৈরাজ্যের বাহক। ব্রাহ্মণ্য ধর্ম অনুসারেই মোদির এই জালিয়াতি দেশে মহামারী এবং মন্বন্তর ডেকে আনবে। এখনি সতর্ক হওয়া দরকার।


Monday, 10 October 2016

অসুর আমরা, ভুঁইপোতা হেঃ

 শরদিন্দু উদ্দীপন

প্রকৃতি লালিত করে
আমাদের রক্ত বীজ
অসুর আমরা, ভুঁইপোতা হে
আমাদেরই চেতনায় রূপময়
এ দেশের জল-জংল-জমিন
আকাশ, বাতাস।
দিকুর ঝলসে ওঠা খড়্গ কৃপাণ,
ঘোড়ার পায়ের শব্দ
বিষকন্যা, দেবীর প্রতারণা
পিঞ্জর ফুঁড়ে দেওয়া ত্রিশূল
মস্তক ছেদন করা সুদর্শন
আমাদের ছিন্ন ভিন্ন করলেও
এ মাটির জঠরে জঠরে আমরা অসুর।


শহর জুড়ে ওদের জৌলুস
চোখ ধাঁধানো উল্লাস
ঢাকের গগনভেদী বীভৎস নিনাদ
ভগ-লিঙ্গ কারণের ব্যপক আয়োজন
বলির খড়্গ, হাড়িকাঠ।


এদিকে, একান্তে আমরা সবাই কালের নিভৃত নীড়ে সমাগত
তুংদা, টমাক, চিড়চিড়ি
আর আমাদের দাসাই।
আমদের অসুর গাঁথা
আমাদের সোহরাই।


অসুর আমরা, ভুঁইপোতা হে
কালের নিভৃত নীড়ে সমাগত
আমরা সবাই।
শব্দ পরিচিতিঃ ১। ভুঁইপোতা- ভূমিপুত্র ২। দিকু - শত্রু ৩। কারণ- মদ ৪। তুংদা- মাদল ৫। টমাক- ধমসা (এক প্রকারের বাদ্যযন্ত্র) ৬। চিড়চিড়ি- নাকড়া ( বাদ্য যন্ত্র) ৭। দাসাই- অসুর স্মরণ উৎসব ৮। সোহরাই- শারদ কালীন প্রাচীন উৎসব (আমদের প্রাচীন লোকগাঁথা পরিবেশন করা হয়)

শুভ ধম্মবিজয়ঃ




শুভ ধম্মবিজয়ঃ  
 



হাবংশম, কুলবংশম এবং দ্বীপবংশম অনুসারে দেখা যায় যে বোঙ্গা দিশমের সন্তান বিজয় সিংহ মাদুরাই এর রাজা পাণ্ডুর কন্যাকে বিবাহ করে রাজ্য অভিষেকের সময় শাদীয় উৎসবের দিনে ধম্মবিজয়পালন করেন। মাদুরাইয়ের রাজা পাণ্ডু বিজয়ের ৭০০ অনুগামীর জন্যও ৭০০টি কন্যা দান করেন। এই সময়টি গোতমা বুদ্ধের জন্মপূর্ব কাল। এই ধম্মবিজয়ের দিনে রাজা বিজয় সিংহ সহ তার ৭০০ অনুগামী বুদ্ধধম্ম দিশা গ্রহণ করেন।

শারদ উৎসব যে অতিপ্রাচীন একটি লোক কল্যাণকারী উৎসব তারও প্রমান পাওয়া যায় প্রাচীন তামিল সাহিত্যে ও ওনাম উৎসবের ইতিহাসে।

Friday, 9 September 2016

দলিত-বহুজন স্বাধিকার আন্দোলন ঃ পথ নির্দেশিকা



আমাদের নিবেদন পত্র ও নির্দেশিকা
কান্ধামালের দানা মাঝির শবযাত্রা থেকে আমাদের অনুভূত হয়েছে যে ভারতবর্ষে এখনো জাতপাতের ভেদনীতি সমান ভাবে কার্যকরী। যদিও গর্বের সাথে স্বাধীনতার ৬৯ বছর পূর্তি  উপলক্ষে ওড়ানো হয়েছে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা। আমরা সচেতন ভাবেই অনুভব করেছি যে একটি মনুবাদী সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই এই বিভেদজনিত ঘৃণা, বঞ্চনা হিংসা এবং প্রতিহিংসার  বহর উত্তরোত্তর বেড়েই  চলেছে। স্বঘোষিত স্বয়ংশাসকদের  হাতে নিহত হয়েছেন গোবিন্দ  পানসারে, নরেন্দ্র  দাভোলকর এবং এম এম কুলবর্গিদের মত মানুষ

Sunday, 24 July 2016

হিন্দু শাস্ত্রে গরু খাওয়ার নির্দেশঃ




ব্রাহ্মন্যবাদী শাস্ত্রগুলি শাকান্ন ভোজনের উপর তেমন বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি বরং শাকান্ন ভোজন থেকে গোমাংস ভোজনের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। অতিথিদের ভোজনের উদ্দেশ্যে গোমাংসই শ্রেষ্ঠ এমন উপদেশ আমরা বেদ এবং অন্যান্য গ্রন্থগুলিতে ভুরি ভুরি দেখতে পাই। অতিথিরা গরুর মাংস বেশি খেতে পছন্দ করত বলে তাদের গোঘ্নবলা হত। মহাভারতের অনুশাসন পর্বে শ্রাদ্ধাদি কাজে অতিথিদের গোমাংস ভক্ষন করালে পূর্বপুরুষ এক বৎসর স্বর্গসুখ পেতে পারে এমন উপদেশ পিতামহ ভীষ্ম দিয়েছিল যুধিষ্ঠিরকে (মহাভারতের অনুশাসন পর্ব ৮৮ অধ্যায়)। বিরাট রাজার গোশালায় অজস্র গরু বলি দেওয়া হত তার উল্লেখ পাওয়া যায়। রামায়ন কাহিনীতে রাম যে গরুর মাংসের সাথে মদ খেতে ভাল বাসত তার উল্লেখ আছে। বনবাসকালে রাম তার মাতার কাছে আক্ষেপ করে বলেছিল যে সে ১৪ বছর গরুর মাংস খেতে পারবেনা, সোমরস পান করতে পারবে না এবং স্বর্ণ পালঙ্কে ঘুমাতে পারবে না।

শতপথ ব্রাহ্মণে গো হত্যা এবং গোমাংস খাওয়ার বিধান রয়েছে(১১১/১/২১)

ঋকবৈদিক কালে আর্যরা গরু খেত তার পরিষ্কার উল্লেখ পাওয়া যায়।
ইন্দ্র বলল তাদের খাওয়ার জন্য ১৫ প্লান ২০টি ষাঁড় রান্না করা হয়েছে (ঋক X.86.14)এই ভাবে ঋকবৈদে অগ্নির উদ্দেশ্যে ঘোড়া, বলদ, ষাঁড়, দুগ্ধহীন গাই এবং ভেড়া বলি দেবার কথা উল্লেখ আছে। এই সময় আরো দেখা যায় যে গরু বা ষাঁড়গুলিকে আর্যরা তরোয়াল বা কুড়ুল দিয়ে হত্যা করত।
একটি বেঁটে ষাঁড় বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে, একটি চিতকপালী শিংওয়ালা গরু ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে, একটি কাল গরু পুষানের উদ্দেশ্যে, একটি লাল গরু রুদ্রের উদ্দেশ্যে বলি দেওয়া হত।
তৈত্রিয় ব্রাহ্মণে পঞ্চশারদীয়-সেবানামে একটি ভোজন অনুষ্ঠান পাওয়া যায় যেখানে যার প্রধান বৈশিষ্ট হল ১৭টি ৫ বছরের নীচে গোবৎস কেটে রান্না করে অতিথিদের পরিবেষণ করা।

বাল্মীকি রামায়ণের আদি ও অযোধ্যাকাণ্ডে স্পষ্ট করে লেখা আছে — “রাম গোমাংস ভক্ষণ করতেন। বনবাসে যাবার পথে রাম, লক্ষ্মণ ও সীতা ভরদ্বাজ মুনির আশ্রমে উপস্থিত হলে মুনিবর মধুপর্ক, বৃষ মাংস এবং ফলমূল দিয়ে তাদের ভোজনের ব্যবস্থা করেছিলেন (বাল্মীকি রামায়ণ ২/৫৪)।

ঋক বেদ সংহিতায় বিবাহসূক্ত”-এ কন্যার বিবাহ উপলক্ষ্যে সমাগত অতিথি-অভ্যাগতদের গো-মাংস পরিবেশনের জন্য একাধিক গোরু বলি দেওয়ার বিধান আছে (ঋগ্বেদ সংহিতা ১০/৮৫/১৩)।

চাণক্য তাঁরঅর্থশাস্ত্র”-, বলেছেন — (১) গোপালকেরা মাংসের জন্য ছাপ দেওয়া গোরুর মাংস কাঁচা অথবা শুকিয়ে বিক্রি করতে পারে (অর্থশাস্ত্র ২/২৯/১২৯)।

চরক বলছেন গো-মাংস বাত, নাক ফোলা, জ্বর, শুকনো কাশি, অত্যাগ্নি (অতিরিক্ত ক্ষুধা বা গরম), কৃশতা প্রভৃতি অসুখের প্রতিকারে বিশেষ উপকারী (চরকসংহিতা ১/২৭/৭৯)।

সুশ্রুতও একই সুরে বলেছেন গো-মাংস পবিত্র এবং ঠান্ডা। হাঁপানি, সর্দিকাশি, দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, অতি ক্ষুধা এবং বায়ু বিভ্রাটের নিরাময় করে (সুশ্রুতসংহিতা ১/৪৬/৪৭)।

স্বামী বিবেকানন্দতো পরিষ্কার বলেছেন ব্রাহ্মণরা গরুর মাংস ভক্ষন করত। তবে হঠাৎ কেন বামুনেরা এত গো-প্রেম দেখাতে শুরু করেছে যে তারা নিরীহ মানুষকেও হত্যা করতে দ্বিধা করছে না?

Tuesday, 19 July 2016

আলোর বৃত্তে



আলোর বৃত্তে
শরদিন্দু উদ্দীপন
10.07.2016
 
শ্রাবণের ঘনঘোর হামা দেওয়া রাত
ঝগড়ুটে ঝঞ্ঝার ক্রমাগত হানা
জানলার ফাঁক দিয়ে বেয়াড়া বাতাস
শিস দিয়ে বলে যায় সামাল সামাল।


সামাল সামাল হো সামাল সামাল
দামাল মেঘের পাল ঘিরেছে আকাশ


ভাঙনের কুলে কুলে ঝপাং ঝপাং
হুড়মুড় ভেঙে পড়ে বিশ্বাসের বাঁধ
জোড়াতালি দেওয়া ঘরে অসহায় একা
কিলবিল সরীসৃপ ঘোরে চারিধার।

যেটুকু সলতে ছিল পুড়ে পুড়ে শেষ
হাত দিয়ে আগলে রাখি নিভু নিভু বাতি
ঝাপসা চোখ ভিজে যায় শ্রাবনের জলে
প্রতিক্ষায় তবু এক রাত জাগা পাখি।

একটু ভোরের আলো একটি প্রত্যূষ
একটি শিশুর মুখ উষ্ণ ভালবাসা
একমুঠো রোদ্দুর সেওতো অনেক
আলোর বৃত্তে তবু ঘুরে ফিরে আসা।




 যেতে হবে
শরদিন্দু উদ্দীপন


যেতে হবে আরো কিছু দূরে
আরো কিছু অগম প্রান্তর
আনাবিষ্কৃত মেরুচূড়া
পেঙ্গুইন ঈপ্সিত
অনন্ত আরো কিছু অসম নুড়ির সন্ধানে
যেতে হবে।

পথ পড়ে আছে বিস্তর
দুস্তর দুরন্ত উৎরাই
আঁতেলের অপকীর্তি
প্রত্যয় কুয়াশানিলীন
পড়ে আছে এই পথে
কালান্তক সাপেদের বিষাক্ত খোলস।
বহুতর পৃথিবীর ঊর্ধ্বতন ভাঁড়
ভাগাড়ে ভাঁড়ার ভরে গেছে

শ্রান্তি কেন ?
শ্রাবস্তী এখনো সুদূর
বুকে বাঁধ সাহস কাঁচুলি
তারপর হেঁটে চলো
কেমন সহজে হাঁটা যায়।

এখনো যক্ষের গাছে অনিকেত ফুল
ফাগুয়ার পরাগ বাহার
প্রজাপতি ঝিলমিল সরল বৈকালী
এখনো অলক্ষ্যে আছে
জোনাকির গাঢ় তমোবোধ।

যেতে হবে
আরো কিছু দূরে...
আরো কিছু অগম প্রান্তর
নীল নীল শৈবাল
অতলান্তিক সফেন সৈকত
ঈপ্সিত নুড়ির খোঁজ
পেঙ্গুইন পেয়ে যাবে
চলো যেতে যেতে

Wednesday, 13 July 2016

রবীন্দ্রনাথের “নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ” গোতমা বুদ্ধের ‘আত্তদীপ ভব” উপলব্ধির গভীরতম অনুরণনঃ




 “Attā hi attanō nāthō
kō hi nāthō parō siyā
attanā hi sudanténa
nātham labhati dullabham” (Dhammapada verse 160)

ত্ত মগ্নতায় নিজের অস্তিত্বের খোঁজে  রবীন্দ্রনাথ ছিলেন এক অনন্য পরিব্রাজক ভাবুক কবি। অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা, অজ্ঞানতা থেকে জ্ঞানের মার্গে বিচরণ এবং আত্তোপলব্ধির সর্বোচ্চ পরাকাষ্ঠায় উত্তীর্ণ হয়ে নিব্বানা লাভের মাধ্যমে সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্ত জীবন এবং বিশ্বমানবতার বিজয় কেতন ওড়ানোই ছিল তার অভিলাষ। “আত্তোদীপ ভব” মহামতি গোতমা বুদ্ধের এই প্রগাঢ় সনাতন বাণী তাঁর জীবন প্রকোষ্ঠের কন্দরে কন্দরে ছড়িয়ে দিয়েছিল এক শুচি শুভ্র চেতনার আলো। বুদ্ধের দয়া, প্রেম, করুণা এবং আত্তমগ্নতা তার জীবনকে এমন ভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিল তার প্রকাশ পাই “নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ” কবিতায়। কবিতাটি তার ২২ বছর বয়সের একটি অনন্য রচনা যা “কড়ি ও কোমল” কাব্যে প্রকাশিত হয়েছিল।  

Tuesday, 12 July 2016

কান্ডারী বল ডুবিছে মানুষ...



সাম্প্রতি আমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর বাৎসরিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের উপরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। জুন মাসের শেষে দেশ বিদেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলি যে প্রতিবেদন পেশ করেছে তা বাংলাদেশের পক্ষে লজ্জাজনক। এই সংগঠনগুলি জানিয়েছে যে মে মাসেই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৭৪জন মানুষ। রাজনৈতিক কারণে আহত ১৩৩২ জন। হত্যা করা হয়েছে ১৪জন শিশুকে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪০ জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে শিশু ২১ জন। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ২০১৬ব সালের প্রথম তিন মাসে শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল ২০ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৪ জনকে। রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে টাঙ্গাইলের নিখিল জোয়ারদার নামে এক ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বান্দারবনে হত্যা করা হয়েছে অহিংসের পূজারী এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে। ১লা জুনে প্রকাশিত এইবেলা ফাউন্ডেশন নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন তার প্রতিবেদনে জানাচ্ছে যে, মে মাসে সংখ্যালঘুদের উপর কম করে ৮৩টি জানঘাতী আক্রমণ করা হয়েছে জতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কম করে ৫১০টি পরিবার। অসংখ্য সংখ্যালঘু গ্রাম অবরুদ্ধ করে হামলা চালানো হচ্ছে। জমিজমা, ঘরবাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চলছে। ভিটে ছাড়া করা হয়েছে অসংখ্য পরিবারকে। সম্পত্তি দখল এবং গণধর্ষণের শিকার হয়েছে অসংখ্য সংখ্যালঘু নারী ও শিশু।

যে ভাবে সে দেশের সংখ্যালঘু, মুক্তমনা লেখক, সাহিত্যিক, নারী, শিশু ও সমকামীদের উপর একের পর এক জীবনঘাতী আক্রমণ সংঘটিত হয়ে চলেছে তা এক কথায় অমানবিক। পরিকল্পিত জাতিসংঘের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের উপর যে নির্মম রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে তা একবগগা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও নিকেশ নীতির ইঙ্গিত বহন করে। এই দীর্ঘমেয়াদী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে এটাই প্রমানিত হয় যে সরকার রাজনৈতিক কারণেই চাপাতি সংস্কৃতিকে পোষণ করে চলেছে এবং ইচ্ছে করেই ঘাতক এবং তাদের উন্মাদ ধর্মীয় গুরুদের নরহত্যার ময়দানে ছেড়ে দিয়ে রেখেছে। এই নরপিশাচদের প্রতি সরকারের নিস্ক্রিয়তা থেকে প্রমানিত হয় যে বাংলাদেশ বিশ্বমানবিকতার বোধ একেবারেই হারিয়ে ফেলেছে। বিশেষত গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার পরে বাংলাদেশের মাথায় সন্ত্রাসীদের আঁতুড়ঘর হিসেবে আর একটি পালক উঠে এসেছে। ডি কে হোয়াং নামের কোরিয়ান ভদ্রলোকের গোপন ক্যামেরা এবং আইসিস প্রকাশিত সন্ত্রাসীদের তালিকা থেকে একেবারে পরিষ্কার হয়েগেছে যে, বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সন্তান সন্ততিরাও চাপাতি সংস্কৃতি থেকে কাফের নিধনের জান্নাত সংস্কৃতিতে উঠে এসেছে।

এই নিতিহীন, নির্মম বাতাবরণে উৎসাহিত হয়ে উঠেছে আর একদল জল্লাদ। ইতিমধ্যে তারাও ত্রিশূল-তলোয়ারে ধার দিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে। নির্লজ্জ ভাবে হুঙ্কার দিচ্ছে যে ওপারে হিন্দুদের গায়ে নখের আঁচড় পড়লে এপারের সমস্ত মসজিদ মাদ্রাসা থেকে ইমাম শুন্য হয়ে যাবে। অর্থাৎ আমদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে এই জল্লাদেরা আসলে একে অন্যের পরিপূরক। একজনের রাজনৈতিক পুষ্টি বাড়াতে আর একজন সম্পূর্ণভাবে ইন্ধন যোগায়। নিরীহ জনগণকে ধর্মীয় আবেগে আবিষ্ট করে ভ্রাতৃঘাতি দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি করে। হাতে তুলে দেয় চাপাতি, খড়গ, ত্রিশূল-তলোয়ার। নিরীহ মানুষের লাশের উপরে প্রতিষ্ঠিত হয় এদের ক্ষমতার মন্দির-মসজিদ।

আদিম হিংস্রতার এই নিষ্ঠুর প্রবণতা দেখে নিজেদের সভ্য বলতে সত্যি আমাদের ঘৃণা হয়। রাষ্ট্র পরিচালকদের এই নির্লজ্জ আহম্মকি দেখে মনে হয়, জান্তব জীবন ছেড়ে আমারা এক পা ও এগোতে পারিনি। পৃথিবীর সত্যি বড় দুর্দিন আজ। নেতৃত্বের বড় অভাব। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান প্রাতিষ্ঠানিক পরিচ্ছদ ছেড়ে এখনো বেরোতে পারছি না। জড়ত্ব ঝেড়ে ফেলে এখনো উদাত্ত কন্ঠে বলতে পারছিনা, “কান্ডারী বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র”।

Wednesday, 29 June 2016

হুল শেঙ্গেল

 হুল শেঙ্গেল




পাহাড় কেন ডাকে?

জ্যৈষ্ঠের কাঠ ফাটা রোদের পর আষাঢ়ের এক পশলা বৃষ্টি পেয়েই পাহাড়টা ডাকে! গম্ভীর এই ডাক!  ঝিম মারা গাছগুলি চমকে ওঠে।  একটা দমকা হাওয়ার মত খবরটা ছড়িয়ে যায় কুলি কুলি ডুংরিতে ডুংরিতে!

শালগিরা……শালগিরা।

সিধু মাঝি, কানু মাঝি শালগিরা পাঠিয়েছে।

পাতা সমেত ছোট শালের এই ডাল পৌঁছে গেছে ঘরে ঘরে।

তাই বুঝি পাহাড়টা আজ ডাকছে।

নিদারুন যন্ত্রণায়, আহত অভিমান নিয়ে আত্তসম্মান ফিরে পাবার জন্য অনবরত ডেকে চলেছে পাহাড়টা।
এই ডাক অবসম্ভাবী এক ঝড়ের বার্তা বহন করে টাইড়, বাইদ, বোহাল, কানালী পেরিয়ে ডুংরিতে ডুংরিতে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে।

পাহাড় ডাকছে......
আর বাঁশী
ফুঁকা মানুষগুলি, জোষ্ঠা রাতের তুংদা, টমাক বাজানো মানুষগুলি, ছেঁড়া টেনা পরা মানুষগুলি পাথর ভাঙ্গা গতর নিয়ে শার্দূলের মতো ক্ষিপ্রতায় কাঁড়বাঁশ, টাঙ্গি, তরোয়াল, বল্লম নিয়ে হাজির হচ্ছে ভগনা ডিহি গ্রামে। তাঁরা ধরে রাখতে চায় তাঁদের মাটি। তাঁরা ফিরে পেতে চায় জল-জঙ্গলের অবাধ অধিকার। তাঁরা প্রাণ দিয়ে আগলে রাখতে চায় তাঁদের লাই লাকচার, আড়িচালি।

ভগনা ডিহির সভায় পাহাড় ডাকা ক্ষোভ নিয়ে সিধু, কানু, চাঁদ, বৈরভ গর্জে উঠে বলেন, সুদখোর মহাজন এবং গোরা পল্টন আমাদের সব কিছু কেড়ে নিতে চায়। সাঁওতালদের সুখসাচ্ছন্দ দেখতে চায় না দিকু জমিদার। তাঁরা জোর করে আদিবাসীদের কাছে থেকে খাজনা আদায় করতে চাইছে। অন্যায় ভাবে আমাদের চুরির দায়ে অপরাধী করছে। প্রকাশ্যে অপমান করছে এবং জোর জবরদস্তি গরু, ছাগল, ভেড়া, মোষ কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। জমিদারের সঙ্গে জুটেছে পুলিশ, পাইক, পেয়াদা, জজ, ম্যাজিস্ট্রেট। এরা সবাই মিলে আদিবাসীদের শেষ করে দিতে চায়। এটা চরম অন্যায়। আমরা স্ত্রী-পুত্রের জন্য, জমি-জায়গা বাস্তু-ভিটার জন্য, গো-মহিষ লাঙ্গল ধন-সম্পত্তির জন্য “হুল সেঙ্গেল” করতে চাই। আমরা আমাদের মান সম্মান এবং হৃতগৌরব ফিরে পেতে চাই।