শুভ ধম্মবিজয়ঃ
মহাবংশম, কুলবংশম এবং দ্বীপবংশম অনুসারে দেখা যায় যে বোঙ্গা দিশমের সন্তান বিজয় সিংহ মাদুরাই এর রাজা পাণ্ডুর কন্যাকে বিবাহ করে রাজ্য অভিষেকের সময় শাদীয় উৎসবের দিনে “ধম্মবিজয়” পালন করেন। মাদুরাইয়ের রাজা পাণ্ডু বিজয়ের ৭০০ অনুগামীর জন্যও ৭০০টি কন্যা দান করেন। এই সময়টি গোতমা বুদ্ধের জন্মপূর্ব কাল। এই ধম্মবিজয়ের দিনে রাজা বিজয় সিংহ সহ তার ৭০০ অনুগামী বুদ্ধধম্ম দিশা গ্রহণ করেন।
শারদ উৎসব যে অতিপ্রাচীন একটি লোক
কল্যাণকারী উৎসব তারও প্রমান পাওয়া যায় প্রাচীন তামিল সাহিত্যে ও ওনাম
উৎসবের ইতিহাসে।
২৬১ খ্রিষ্টপূর্বে কলিঙ্গ যুদ্ধের পরে সম্রাট অশোকের জীবনে এক আমূল পরিবর্তন সূচীত হয়। সম্রাট অশোকের
নেতৃত্বে এবং তার গুরু ভন্তে মোগলীপুত্ত তিসস’র সভাপতিত্বে এই
প্রচলিত শারদ উৎসবের সময় পাটলিপুত্রে সংঘটিত হয় তৃতীয় বুদ্ধধম্ম
সম্মেলন “ধম্মবিজয়”। শোকাতুর
রাজা ঘোষণা করেন, “'অসুপুত্ত পপৌত্ত মে
নবম্ বিজয়ম বিজিতব্যম”। আমার পুত্র
এবং প্রপৌত্ররাও কোন নতুন রাজ্য
যুদ্ধবিজয় করবেনা । যদি বিজয় করতে হয় তা
হবে ধম্মবিজয়(১৩ নং রক এডিক্ট)। কলিঙ্গ
অনুশাসনে তিনি লিখেছিলে, “সকল মানুষই আমার পুত্রতুল্য। আমার পুত্রেরা সকল মঙ্গল ও সুখের
অধিকারী হোক। মানুষ ও পশুর জন্য দাতব্য চিকিৎসালয়, বিশ্রাম গৃহ, ঔষধি ফলমূল, লতাগুল্ম রোপণ, পানীয় জল ও কৃষিকার্যের জন্য সরোবর খনন শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও
বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ এবং এগুলিকে সুচারু রূপে পরিচালনার জন্য তৈরি করলেন
বুদ্ধবিহার। তিনি ৮৪ হাজার জনকল্যাণকারী প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সমস্ত জীব জগতের জন্য
উৎসর্গ করলেন। কালজয়ী ধম্ম প্রচারকদের প্রেরিত করলেন সমগ্র বিশ্বে। মানব মনে
প্রেম, ভক্তি, দয়া, করুণা স্থাপন করে সিঞ্চিত করলেন ভগবান বুদ্ধের চিরন্তন বাণী
বসুধৈবকুটুম্বকম। দ্বিতীয় গিরিলিপিতে সমস্ত সত্তার সার্বিক কল্যাণের
জন্য উৎকীর্ণ করলেন তার ধম্মানুভূতি।
১৯৩৫ সালের ১৩ই অক্টোবর মহারাষ্ট্রের ইওলাতে এক জনসভায় বাবাসাহেব
বলেছিলেন, "I was born a Hindu but
will not die one".
তার এই ধম্ম অনুভূতি নিয়ে বিবিসি রেডিও একটি ইন্টারভিউ প্রচার
করে।এই সময় থেকে বাবাসাহেব নানা ধর্মগ্রন্থ পাঠ এবং ধর্মগুরুদের সাথে দেখা করেন এবং
নানা ধর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করেন। ১৯৫০ সাল থেকে তিনি সম্পূর্ণ
ভাবে বুদ্ধ ধর্মে আত্তো নিয়োগ করেন এবং বুদ্ধ ধম্ম অনুসরণকারী দেশগুলি ভ্রমণ করতে শুরু
করেন। ১৯৫০ সালেই তিনি সিংহলে আয়োজিত “World Fellowship of Buddhists” ধম্ম
সভায় অংশগ্রহণ করেন।পুনের কাছে একটি বুদ্ধ বিহারে অবস্থান কালে তিনি ঘোষণা করেন যে
তিনি বুদ্ধ ধম্মের উপর একটি গ্রন্থ রচনা করছেন। এটি শেষ হলেই তিনি বুদ্ধ ধম্ম গ্রহণ
করবেন।১৯৫৬ সালে তিনি এই গ্রন্থ রচনা শেষ করেন। এই গ্রন্থটির নাম “The Buddha and
His Dhamma”
১৯৫৬ সালের ১৫ই অক্টোবর, ধম্ম পাবত্তন
সম্পর্কে বাবা সাহবে ডঃ বি আর আম্বেদকর বলেছিলেন,
“হিন্দু
ধর্মের মূল নীতিগুলি এবং চতুর্বর্ণ ব্যবস্থা এমন স্থায়ী ভাবে পরিকল্পিত হয়েছে যে
কোন মানুষকেই এই ধর্ম খুশি করতে পারেনা। মানুষের মধ্যে ভেদ ভাব স্থায়ী করে
রাখার জন্য এই চতুর্বর্ণ ব্যবস্থা ভয়ঙ্কর ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার অধিকার
ব্রাহ্মনের, দেশ রক্ষার অধিকার ক্ষত্রিয়ের,
ব্যবসার অধিকার বৈশ্যের এবং
শূদ্রের অধিকার শুধু পদসেবার? এই ধর্মে ব্রাহ্মণ লাভবান হতে পারে, ক্ষত্রিয় লাভবান হতে
পারে, বৈশ্য লাভবান হতে পারে কিন্তু শূদ্র”?
“যদি একজন ব্রাহ্মণ রমণী সন্তানের জন্ম দেয়, জন্মের পর থেকেই তার লক্ষ্য থাকে হাইকোর্টের বিচারকের চেয়ারটির দিকে যা খালি হতে পারে। কিন্তু আমাদের কোন ঝাড়ুদার রমণীর কোলে সন্তান এলে তার লক্ষ্য থাকে ঝাড়ুদার পদের দিকে। হিন্দু ধর্ম এমনি সর্বনাশা বিধান তৈরি করে রেখেছে”।
ভগবান বুদ্ধের বিচারধারায় ৭৫% ভীক্ষুরা ছিলেন ব্রাহ্মণ; ২৫% ছিলেন শূদ্র এবং অন্যান্য। কিন্তু ভগবান বুদ্ধ বলেছিলেন, “ হে ভিক্ষুগণ, আপনারা বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন ধর্ম এবং বিভিন্ন জাতি থেকে এসেছেন। নদীসমূহ তাদের নিজের দেশ দিয়ে প্রবাহিত হয়, কিন্তু সমুদ্রে যখন মিলিত হয় তখন তারা আর নিজের পরিচয় রাখে না। তারা সমান এবং এক হয়ে যায়। বৌদ্ধ সাধুদের ভাইচারা এই সমুদ্রের মত। এই সঙ্গমে সবাই সমান। সমুদ্রে মিলিত হলে কোনটি গঙ্গার জল আর কোনটি মহানদীর জল চেনা যায় না। এই ভাবে আপনারা যখন বুদ্ধ সংঘে এসেছেন আপনাদের জাতি পরিচয় বিলীন হয়ে গেছে, আপনারা এখন সমান।
পৃথিবীতে একটি মানুষই এই সাম্যের কথা বলেছেন তিনি ভগবান বুদ্ধ।
এই পথ কোন নতুন পথ নয়। এই সাম্যের পথ ভারতেই তৈরি হয়েছে। ভগবান বুদ্ধ এই পথকেই নতুন ভাবে চিনিয়েছিলেন। এখন আমাদের সুযোগ এসেছে ধর্মকে যুগের উপযোগী মানুষের উপযোগী হিসেবে তৈরি করে নেবার। এই খোলা মানসিকতা অন্য ধর্ম মতে নাই”।
বিজয়া দশমী বা ধম্ম বিজয়ঃ
“যদি একজন ব্রাহ্মণ রমণী সন্তানের জন্ম দেয়, জন্মের পর থেকেই তার লক্ষ্য থাকে হাইকোর্টের বিচারকের চেয়ারটির দিকে যা খালি হতে পারে। কিন্তু আমাদের কোন ঝাড়ুদার রমণীর কোলে সন্তান এলে তার লক্ষ্য থাকে ঝাড়ুদার পদের দিকে। হিন্দু ধর্ম এমনি সর্বনাশা বিধান তৈরি করে রেখেছে”।
ভগবান বুদ্ধের বিচারধারায় ৭৫% ভীক্ষুরা ছিলেন ব্রাহ্মণ; ২৫% ছিলেন শূদ্র এবং অন্যান্য। কিন্তু ভগবান বুদ্ধ বলেছিলেন, “ হে ভিক্ষুগণ, আপনারা বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন ধর্ম এবং বিভিন্ন জাতি থেকে এসেছেন। নদীসমূহ তাদের নিজের দেশ দিয়ে প্রবাহিত হয়, কিন্তু সমুদ্রে যখন মিলিত হয় তখন তারা আর নিজের পরিচয় রাখে না। তারা সমান এবং এক হয়ে যায়। বৌদ্ধ সাধুদের ভাইচারা এই সমুদ্রের মত। এই সঙ্গমে সবাই সমান। সমুদ্রে মিলিত হলে কোনটি গঙ্গার জল আর কোনটি মহানদীর জল চেনা যায় না। এই ভাবে আপনারা যখন বুদ্ধ সংঘে এসেছেন আপনাদের জাতি পরিচয় বিলীন হয়ে গেছে, আপনারা এখন সমান।
পৃথিবীতে একটি মানুষই এই সাম্যের কথা বলেছেন তিনি ভগবান বুদ্ধ।
এই পথ কোন নতুন পথ নয়। এই সাম্যের পথ ভারতেই তৈরি হয়েছে। ভগবান বুদ্ধ এই পথকেই নতুন ভাবে চিনিয়েছিলেন। এখন আমাদের সুযোগ এসেছে ধর্মকে যুগের উপযোগী মানুষের উপযোগী হিসেবে তৈরি করে নেবার। এই খোলা মানসিকতা অন্য ধর্ম মতে নাই”।
বিজয়া দশমী বা ধম্ম বিজয়ঃ
বিজয়া দশমী প্রজ্ঞাবান অসুরদের
ধম্ম বিজয়ের দিন। বেদাতীত কাল থেকেই চলে আসছে এই শারদ উৎসব। ওনাম, আড়ং, করম, ছাতা পরব
এই অসুর উৎসবেরই প্রচলিত ধারা।সম্রাট অশোক এই ধারাকে বজায় রেখেই আশ্বিন মাসের শুক্লা
দশমীর দিনে বুদ্ধ ধম্ম গ্রহণ করেছিলেন।ঘোষিত করেছিলেন জীবপ্রেমের অমর বাণী। বাবা সাহেবও
তার পূর্বসূরিকে অনুসরণ করে শারদ শুক্লা দশমীর দিনকেই বেছে নিলেন স্বধম্ম পাবত্তনের
জন্য। দলিত, নিপিড়িত, লাঞ্ছিত, শোষিত বহুজন মানুষকে সাংবিধানিক রক্ষা কবচের মাধ্যমে
সুরক্ষিত করে ন্যায়, সাম্য, স্বাধীনতা ও ভ্রাতৃত্ব প্রেমের উচ্চ মার্গে উন্নীত করলেন।
গ্রহণ করলেন বুদ্ধের সারনা, পঞ্চশীল এবং অষ্টাঙ্গিক মার্গ।
আজ শারদ শুক্লা দশমী। এক মানবিক ধম্ম
দিশার অমলিন দিন। ১৯৫৬ সালের এই দিনে বাবা
সাহেব ডঃ বিআর আম্বেদকর নিপীড়িত,
নিষ্পেষিত লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে স্বধম্মে পাবত্তন করেছিলেন। এই দিনে তার প্রতি রইল আমাদের
বিনম্র শ্রদ্ধা।
ভারতের প্রাচীন ধম্ম দেশনার এই মঙ্গলময়
ও কল্যাণকারী শারদ উৎসবের শেষ দিনে আপানদের সকলকে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ
করছিঃ
METTĀ — GOOD WILL)
সব্বে সত্তা সুখিতা হোন্তু
Sabbe sattā sukhitā hontu.
May all living beings be happy.
সব্বে সত্তা আভেরা হোন্তু
Sabbe sattā averā hontu.
May all living beings be free from animosity.
সব্বে সত্তা অব্যপজ্জা হোন্তু
Sabbe sattā abyāpajjhā hontu.
May all living beings be free from oppression.
সব্বে সত্তা আনিঘা হোন্তু
Sabbe sattā anīghā hontu.
May all living beings be free from trouble.
সব্বে সত্তা সুখিআত্তাম পরিহরন্তু
Sabbe sattā sukhī attānaṃ pariharantu.
May all living beings look after themselves with।
সব্বে সত্তা সুখিতা হোন্তু
Sabbe sattā sukhitā hontu.
May all living beings be happy.
সব্বে সত্তা আভেরা হোন্তু
Sabbe sattā averā hontu.
May all living beings be free from animosity.
সব্বে সত্তা অব্যপজ্জা হোন্তু
Sabbe sattā abyāpajjhā hontu.
May all living beings be free from oppression.
সব্বে সত্তা আনিঘা হোন্তু
Sabbe sattā anīghā hontu.
May all living beings be free from trouble.
সব্বে সত্তা সুখিআত্তাম পরিহরন্তু
Sabbe sattā sukhī attānaṃ pariharantu.
May all living beings look after themselves with।
বুদ্ধম নমামি, ধম্মম নমামি, সঙ্গম নমামি।
No comments:
Post a Comment