Pages

Saturday 22 June 2013

বিষয়: হিন্দু (HINDU)

 === ১ ===

বিষয়: হিন্দু (HINDU)


         ভারত বর্ষের সব থেকে বড় ধর্ম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম ।এদেশের বেশীর ভাগ জনগণ হিন্দু ধর্ম বলম্বী । তারা তাদের ধর্মকে বিশ্বাস করে আবার অনেকে নিজেকে ‘হিন্দু’ বলে গর্ববোধ ও করেন । যেটা স্বাভাবিক ।

এখানে এই আলোচনায় কারো ব্যাক্তিগত বিশ্বাসে আঘাত করার উদ্দেশে নয় । আর আঘাত লাগলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । কারন কখনও কখনও বিস্বাসে আঘাত লাগাটাও স্বাভাবিক হয়; যখন সেটাকে যুক্তি-তর্ক দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করার চেষ্টা না করা হয় । অথবা সুদির্ঘ  দিনের বিশ্বাসকে এক ঝটকায় ছুড়ে ফেলা অতসহজ নয় । তবুও বিশ্বাসের পাথরকে মূ্র্তিতে রূপান্তরিত করতে হলে যুক্তি-তর্ক-তথ্য ও বিশ্লেষণের ছেনি ও হাতুড়ি দিয়ে সতর্ক ভাবে কাটার চেষ্টা করলে মূ্র্তি তৈরী হ’তে পারে । যেটা তখন বিশ্বাসের পাথর না হয়ে একটা মূ্র্তিতে রূপান্তরিত হবে ।

আমি কেবলমাত্র  সেই বিশ্বাসের পাথরকে মূ্র্তিতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছি। মূ্র্তি হবে কি না সেটা জানি না, কারণ সেটা পাঠকরা বলতে  পারবেন । তবে আমি আবার বলছি –কারো ব্যক্তিগত বিস্বাসে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য নয় । উদ্দেশ্য সঠিক তথ্যকে আপনাদের সামনে
তুলে ধরা । 

হিন্দু শব্দের উৎপত্তি ও অর্থ: 
         প্রথমেই আমরা চেষ্টা করি হিন্দু শব্দের উৎপত্তি ও অর্থ সম্পর্কে জানতে। হিন্দু শব্দটি হচ্ছে পার্শি শব্দ । যার অর্থ হীন্ বা নীচতা । যদি হিন্দু শব্দের লম্বা উচ্চারণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে হিন্-ন্-ন্ –ন্ –দু । এখানে হিন্ শব্দটি প্রধান । আর হীন্ মানে নীচ্ বোঝায় । ‘হিন্দু’ শব্দটি কিন্তু ব্রাহ্মণদের কোন ধর্ম গ্রন্থে নেই । শ্রুতি,পুরাণ,  বেদ,গীতা রামায়ণ, মহাভারতে অর্থাৎ সংস্কৃতের কোন মৌলিক গ্রন্থে । ‘হিন্দু’ শব্দটি নেই । 
******************************************************

 === ২ ===

বিষয়: হিন্দু (HINDU)


ভারতীয়দের কেন হিন্দু নাম দেওয়া হ’ল?

         ভারতবর্ষে ৭তম শতাব্দি থেকে ১২ম শতাব্দি পর্যন্ত বিশেষ করে মুসলমানদের আক্রমন হয় । আক্রমনকারী মুঘলরা ভারতবর্ষ জয় করার পর এদেশে তাদের রাজত্ব স্থাপিত হয় । এদেশে শাসন কার্জ পরিচালনা করতে গিয়ে তারা দুটো প্রধান সমস্যার সম্মুখিন হয়। 

       প্রথমত:- তারা ভাবল যে আমরা বিজেতা, আমরা এখানের লোকদের পরাজিত করেছি, সুতরাংপরাজিতদের সংঙ্গে আমাদের যেন নসল্ (রক্ত ও সংস্কৃতি) মিশে না যায় । কারন যারা পরাজিত হয় তারা হীন তো হয়। তাদের সংঙ্গে আমাদের সংস্কৃতি ও রক্ত মিশে যাওয়া উচিত নয় । এটা হ’ল মিশ্রনের সমস্যা ।
         দ্বিতীয়ত:- এই পরাজিতদের পৃথক রাখার জন্য তাদের নতুন পরিচয় দেওয়া । এটা স্বভাবিক যে পরাজিতদের কেউ ভাল নাম দেবে না । তাই আত্রমনকারী মুঘলরা এদেশের জনগনকে ‘হিন্দু’(পরাজিত,হীন্,নীচ্)নাম দিল । যেমন- ব্রাহ্মণরা ভারতের মূলনিবাসীদের নাম দিয়েছে-দাস, দস্যু, দানব, রাক্ষস ইত্যাদি ।পরবর্তিতে এরা SC, ST OBC দের ENCOUNTER করার জন্য নাম দিল –হরিজন,গিরিজন,বনবাসি ও দলিত ।

এবিষয়ে বাবা সাহেব Dr. B.R AMBEDKAR ,ANNIHILETION OF CASTE এ বলেছেন- 

         `সর্ব প্রথম এই চরম সত্যকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, হিন্দু সমাজ একটি পৌরানিক কাহিনী । হিন্দু নামটা একটা বিদেশী নাম । ‘হিন্দু’ শব্দটা (আক্রমনকারী) মুসলমানদের দেওয়া নাম। স্থানীয় অধিবাসী  এবং মুসলমানদের মধ্যে স্বাতন্ত্র বোঝানোর জন্য তারা স্থানীয় অধিবাসীদের ‘হিন্দু’ নামে অভিহিত করেছিল । ভারতে মুসলমানদের আক্রমনের পূর্বেকার সময়ে সংস্কৃত ভাষার লেখকদের ‘নেশন’(জাতি) সম্বন্ধে কোন ধারনা ছিলনা । তারা ভারতীয় অধিবাসীদের একটি সাধারণ নামকরনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। তাই হিন্দু সমাজের  বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই । এটা শুধু জাতিগুলির একটি সমষ্টিগত নাম । 

         The first and foremost thing that must be recognized is that Hindu Society is a myth. The name Hindu is itself a foreign name. It was given by the Mohammedans to the natives for the purpose of distinguishing themselves. It does not occur in any Sanskrit work prior to the Mohammedan invasion. They did not feel the necessity of a common name because they had no conception of their having constituted a community. Hindu society as such does not exist. It is only a collection of castes.’


ব্রাহ্মণরা নিজেদের হিন্দু বলে স্বীকার করেনি কেন?

         ঐ সময়ের ব্রাহ্মণরা নিজেদের হিন্দু বলে মেনে নিতে অস্বীকার করে । তারা বলল, যদি তোমরা পরাজিতদের ‘হিন্দু’ অভিহিত করো তাহলে আমরা ‘হিন্দু’ নই । যেভাবে তোমরা আক্রমণকারী এবং বিজেতা  ঠিক একইভাবে আমরাও  আক্রমণকারী এবং আক্রমণ করে আমরাও  এখানকার লোকদের পরাজিত করেছিলাম । তাই তোমরা যদি পরাজিতদের ‘হিন্দু’ অভিহিত করো তাহলে আমরা ‘হিন্দু’ নই । এর প্রমান হচ্ছে – মুসলমান শাসকরা যখন জিজিয়া কর অর্থাৎ ধর্ম কর(RELIGIOUS TAX) চালু করেছিল সেটাতে ব্রাহ্মণদের ছাড় (EXEMPTION) ছিল । ব্রাহ্মণদের এই যে ছাড় ছিল যা প্রমান করে তারা নিজেদের হিন্দু বলে মেনে নিতে স্বীকার  করত না । 

         বর্ণাশ্রমে বেষ্টিত ভারতীয়দের হিন্দু বলে প্রমানিত করার রাস্তাটা প্রসারিত হতে শুরু করে 1921সাল নাগাদ প্রকৃত পক্ষে ব্রাহ্মণরা এখনও নিজেদের হিন্দু মনে করেনা ।এর কারন পরে বলছি । 1922 সালে তারা নাসিকে ‘হিন্দু মহাসভা’ এর স্থাপন করে । কিন্তু কেন? সে ইতিহাস ধাপে ধাপে প্রকাশ করছি । তার অগে অমরা দেখছি রাজা রামমোহন রায় 20 আগষ্ট 1828 সালে ‘ব্রাহ্ম সমাজ’ স্থাপন করেন । দয়ানন্দ সরস্বতী 1875 সালে ‘আর্য সমাজ’স্থাপন করেন । এই ‘আর্য সমাজ’ স্থাপনের পিছনেও একটা ষড়যন্ত্র আছে । কে এই দয়ানন্দ সরস্বতী ? যিনি গুজরাটি ব্রাহ্মণ। তিনি রাজকোট জেলার টংকারা নামক বোম্বে (মুম্বাই) আসেন । বোম্বেতে কেন ? কারণ  1873 সালে মহারাষ্ট্রে মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলে ‘সত্যশোধক’ সমাজ’-এর স্থাপণ করেন ।‘সত্যশোধক’ অর্থাৎ সত্য কলুষিত হয়েগিয়েছিল ব্রাহ্মণদের ষড়যন্ত্রে, তাই তাকে শোধন করা দরকার পড়ে । কিন্তু শয়তানের ষড়যন্ত্রের অভাব হয় না । তাই ।‘সত্যশোধক’ কে ENCOUNTER কারার জন্য এই ‘আর্য সমাজ’-এর স্থাপন ।

         এখানে একটা জিনিস আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কেউই হিন্দু সমাজ স্থাপন করেননি  । অর্থাৎ 1921 সালের পূর্ব পর্যন্ত ব্রাহ্মণ নামেরই সংগঠণ নির্মান হয়েছে । তারা হিন্দু নামের কোন সংগঠণের নির্মান করেনি । অর্থাৎ হিন্দু নামকে স্বীকার করেনি।
******************************************************

=== ৩ ===

বিষয়: হিন্দু (HINDU)


ব্রাহ্মণরা নিজেদেরকে কখন ও কেন হিন্দু বলে মেনে নিল বা হিন্দু বলে প্রচার শুরু করল ? 

         ইংলন্ডে 1917-18সাল নাগাদ প্রাপ্ত বয়ষ্কের ভোটাধীকারের আন্দোলন শুরু হয় । কারন ইংলন্ডেও সকল প্রাপ্ত বয়ষ্কদের  ভোটাধীকার ছিল না । ওখানে যারা টেক্স দিত এবং যারা লেখাপড়া শেখা লোক ছিল  তাদেরই ভোটাধীকার  ছিল ।আন্দোলন ইংলন্ডে শুরু হয় আর বিপদের ঘন্টা ভারতের ব্রাহ্মণরা শুনতে পায় । কেন? কারন ঐসময় ভারত ছিল ব্রিটিশদের অধীন। ভারেতর ব্রাহ্মণরা মনে করল যে, ইংলন্ডে যদি বয়ষ্কের ভোটাধীকার চালু হয়ে যায়, তাহলে তো সেটা ভারতেও লাগু হবে । কারন ব্রিটেনে যে আইন পাশ হবে  ভারতেও  সেটা যেকোন সময় লাগু হতে পারে ।আর ভারতে যদি  বয়ষ্কদের  ভোটাধীকার আইন লাগু হয় , তাহলে ভারতে যে শুদ্র (OBC) ও অতিশুদ্ররা (SC & ST) আছে এদের সংখ্যা অনেক গুন বেশী;আর ভোটাধীকার হিসাবে নির্বাচণ হলে যাদের সংখ্যা বেশী রাজ ক্ষমতা তাদেরই হবে । ব্রাহ্মণরা ব্রাহ্মণ হিসাবে ভোট চাইলে সব ব্রাহ্মণও যদি এক জনকে ভোট দেয়  সেটা 3.5% ই হবে । ফলে তারা কোন নির্বাচণ ক্ষেত্রেই জিততে পারবেনা ।এর ফলে তাদের যে হাজারো বছর ধরে শাসন প্রনালী চলে আসছিল সেটার সমুহ বিপদ ঘনিয়ে আসবে । কিন্তু হিন্দু নামের সংগঠন হলে নেতা ব্রাহ্মণই হবে, আর সমস্ত ‍SC,ST, OBC দেরকে নিজেদের CONTROL এ রাখতে পারবে। এই ভাবনা থেকে তারা 1922 সালে নাসিকে ‘হিন্দু মহাসভা’ এর স্থাপন করে । আর 1925 সালে R.S.S. অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ-এর স্থাপন করে । এই হিন্দু শব্দ হচ্ছে ব্রাহ্মণদের একটা রণ কৌশলের মাধ্যম । তাই তারা প্রচার করছে ‘গর্ব করে বল আমি হিন্দু ।    
******************************************************

=== ৪ ===

বিষয়: হিন্দু (HINDU)


 ব্রাহ্মণরা সত্যি সত্যি কি নিজেদের হিন্দু বলে মনে করে ?

         এবার ভাবুন ব্রাহ্মণরা সত্যি সত্যি কি নিজেদের হিন্দু বলে মনে করে ? যদি করে তবে তারা ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য জতির মেয়েকে কেন? বিয়ে করেনা ? ব্যতিক্রম ২/১ টা ধরার মধ্যে নয় । কিন্তু কখনও  তাদের মেয়েকে অন্য জাতের ছেলরে সংগে যখন বিবাহ দেয় , সেটাও রণকৌশল হিসাবে । কারন অন্য জাতের ছেলেটি যদি মেধাবী হয় তাহলে সে যাতে তার সমাজ নিয়ে না ভাবে ,তাকে তাদের গোলাম বানিয়ে রাখার জন্য তুলে নেয় । ব্রাহ্মণরা শুধু ‍SC,ST, OBC দের সামনে এসে বলে যে তারাও হিন্দু । কিন্তু লোক গননায়ও তারা নিজেদের ধর্ম ও যাত দু’টোই ব্রাহ্মনবলে লেখায় বেশীর ভাগ ।

ব্রাহ্মণদের অনুসারে ‘হিন্দু ’শব্দের ব্যাখ্যা কি?

         ব্রাহ্মণরা প্রচার করছে ‘গর্ব করে বল আমি হিন্দু ’। এই ভাবে বহুজনদের কাছে এসে শ্লোগান দেয় । কারণ এটা ওদের কথা । ওদের মনে আশঙ্কা শুরু হয়েছে যদি কেউ জানতে চায় যে, কিসের ভিত্তে গর্ব করা হবে ? ‘হিন্দু’ নাম তো আক্রমনকারী মুসলমানদের দেওয়া ?  তাই তারা প্রচার করছে ইতিহাসের পাতায় পাতায় যে, সিন্ধু থেকে হিন্দু হয়েছে । কিভাবে ? মুসলমানরা ফার্সি ভাষায় কথা বলত । ফারসিতে ‘স’ ‘হ’ –এর মত উচ্চারিত হয়  বা তারা ‘স’ কে ‘হ’ বলত, তাই সিন্ধু থেকে হিন্দু হয়েছে ।  কিন্তু এদের কথা তর্কের খাতিরে মেনে নিলেও ,সেটাতো মুসলমানদের দেওয়া নাম । তা নিয়ে হিন্দুদের  গর্ব করা কিকরে সম্ভব । কারন হিন্দুত্ববাদীরাতো সব সময় মুসলমানদের বিরোধীতা করছে । 

         যদি সিন্ধু থেকে হিন্দু হয়ে থাকে তবে সেটা শুধু সিন্ধু অববাহিকা অঞ্চলে বসবাসকারী লোকদের   ক্ষেত্রে হিন্দু শব্দ প্রযোজ্য হওয়া উচিত ছিল ।সম্পুর্ন ভারতবর্ষের লোকদের ক্ষেত্রে হিন্দু নামাঙ্কণ হওয়ার দরকার পড়ে না । ।সম্পুর্ন ভারতবর্ষের লোকদের ক্ষেত্রে হিন্দু নামে চিহ্নিত হওয়ার কারণ,সারা ভারতে মুসলমান শাসন কায়েম ছিল । তাই হিন্দু শব্দের প্রসার সারা ভারতব্যাপী হয়েছিল । আর একটা কথা সিন্ধু থেকে হিন্দু হয়ে থাকলে শুধুমাত্র সিন্ধু অঞ্চলে এই নাম সীমাবদ্ধ থাকা উচিত ছিল ।এতে প্রমান হয় সিন্ধু থেকে হিন্দু হয়নি । আরও একটা কথা ‘স’ কে যদি ‘হ’ বলত তাহলে‘স’ দিয়ে আরও যে সব শব্দ আছে সেগুলোরও পরিবর্তন হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটা তো হয়নি । যেমন মুসলমান উচ্চারণ "মুহলমান" হয়নি পার্সি "পার্হি" শিয়া "হিয়া" সুন্নি "হুন্নি" বা সুলেমান "হুলেমান" হয়নিযদি সিন্ধু থেকে হিন্দু হয়ে থাকে তাহলে হিন্দুধর্ম অনুসারে‘গঙ্গা’নদীর পরিবর্তে সিন্ধু নদীকে পবিত্র হিসাবে মানা উচিত ছিল। কিন্তু সেটা মানা হয় না। অতএব সিন্ধু থেকে হিন্দু হয়েছে একথাটি মিথ্যা প্রমানিত হল। 
******************************************************

=== ৫ ===

বিষয়: হিন্দু (HINDU)


মুসলমানরা কি তলোয়ারের জোরে হিন্দুদের মুসলমান ধর্ম গ্রহন করতে বাধ্য করে ছিল ? যদি করে থাকে তখন ব্রাহ্মণরা কি করছিল ?

         ইতিহাস অনুসারে আমরা জানতে পারি যে, ৩য় শতাব্দীর পর বর্ণ-ব্যবস্থা জাতি-ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে । জাতি-ব্যবস্থার সঙ্গে ব্রাহ্মণরা অস্পৃশ্যতার সৃষ্টি ও প্রয়োগ করে । তাদের কট্টর বিরেধীদের তারা অস্পৃশ্য ঘোষণ করল । ৭ম শতাব্দীতে আমরা ইসলামের অনুগামী সুফি-সন্তদের কেরালা অঞ্চলের  আশে পাশে দেখতে পাই । এই সময় কেরালায় প্রথম মসজিদ স্থাপিত হয় । ইসলাম কেরালার মাধ্যমে সর্বপ্রথম ভারতে আসে । সুফি-সন্তদের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার ভারতে শুরু হয়েছিল । পরবর্তীকালে ইসলামের অনুগামীরা রাজত্ব করার মানসে ভারতে আসতে থাকে । তারা এদেশের মানুষদের যুদ্ধে পরাজিত করে ।

         ভারতের ব্রাহ্মণরা বলেছে যে, মুসলমানরা তরবারির শক্তিতে ভারতীয়দের ইসলাম ধর্মে পরিবর্তিত করেছে ।এটা কতটা সঠিক ? না কি তারা নিজেদের অপদার্থতাকে লুকিয়ে রাখার জন্য এই চালাকি করছে ? আমরা এটা জেনেছি যে, ব্রাহ্মণ্য ধর্ম দেশের সাধারণ জনগনকে নীচ্ মনে করত, শিক্ষা,সম্পত্বি ও অস্ত্রের অধিকার হরন করেছিল । উল্টা এদেশের মূলনিবাসীদের কে অস্পৃশ্য বলে ঘোষণা করেছিল । এবং পাশবিক অত্যাচার করত তাদের সঙ্গে ।এই সব পাশবিক অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য লোকেরা ধর্মান্তর করে ইসলাম ধর্মকে গ্রহন করেছিল । তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া হয় যে মুসলমানরা তরবারির জোরে এদেশের জনগনকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করেছিল । প্রশ্ন হচ্ছে যে, তখন ব্রাহ্মণরা কি করছিল ? ব্রাহ্মণরা তাদের ধর্ম রক্ষা করার জন্য কোন সংগ্রাম বা আত্মত্যাগ বা আত্মবলিদান করেছিল কি? যদি করে থাকে তাহলে অন্তত: দু’চার জনতো সহিদ হয়ে থাকবে ? কিন্তু তার কোন নাম গন্ধ আজ পর্যন্ত কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। খুঁজে পওয়া যাবে কি করে থাকলে তবে তো । যদিও গীতায় ব্রাহ্মণ লিখে রেখেছে-‘ধর্ম রক্ষোতি রক্ষম’ । অর্থাৎ তুমি ধর্মকে রক্ষা কর, ধর্ম ‍তোমাকে রক্ষা করবে ।সুতরাং জীবন দিয়ে ব্রাহ্মনদের ধর্ম পরিবর্তন রোখা উচিৎ ছিল এবং তার জন্য আত্মবলি দেওয়া উচিৎ ছিল । কিন্তু ভারতের ইতিহাসে ধর্ম পরিবর্তন রোখার জন্য ব্রাহ্মণ কোনপ্রকার আত্মত্যাগ করেছে এরকম কোন নিদর্শন পাওয়া যায় না ।

         আশ্চর্য জনক কথা হচ্ছে যে, যাদের উপর তরবারির জোরে ধর্ম পরিবর্তন করার আরোপ লাগানো হয়েছে ,তাদের প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব ছিল ব্রাহ্মণদের হাতে ।ঔরঙ্গজেবের উপদেষ্টা ছিল শ্রীধর কুলকার্ণী নামক ব্রাহ্মণ । উল্টা ব্রাহ্মণরা ছত্রপতি শিবাজী মহারাজার বদনাম করে বলেছে ,তিনি ‘হিন্দবী’ অর্থাৎ হিন্দু স্বরাজ স্থাপন করেছিলেন । তিনি না থাকলে সকলের ছুন্নত করেদিত মুসলমানরা । কিন্তু ইতিহাস বলছে তিনি বিষেশ কোন ধর্মের জন্য পক্ষ্য পাতিত্ব কখও করেননি । কারন তাঁর প্রশাসনে তার পেরামর্শদাতা ছিল কাজী হায়দর নামের একজন মুসলমান । তার সেনা বাহিনীতে 30% মুসলমান সেনা ছিল । বাংলায় নবাব হুসেন শাহ্-এর সময়ে  ধর্মান্তর ঘটেছে । কিন্তু তখন তার মন্ত্রী ছিলেন সুবুদ্ধি রায় নামের ব্রাহ্মণ । জনিনা তিনি কি সুবুদ্ধি দিতেন !

         তবে একটা জিনিস খুব গুরুত্ব পূর্ণ হচ্ছে যে, অবিভক্ত ভারতের 99% মুসলমান CONVERTED FROM SC, ST AND OBC.   ।   
******************************************************

=== ৬ ===

বিষয়: হিন্দু (HINDU)

 
ভারত বা INDIA কে হিন্দুস্থান বলে প্রচার করা হয় কেন ?

         ভারতবর্ষ বহু ধর্মীয় ও বহু ভাষাভাষীর দেশ । ভারত, সংবিধান অনুসারে ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ কিন্তু সেই ভারতের দু’টো নাম(ভারত ও INDIA) থাকা সত্বেও এদেশের নামটা প্রচার করা হয় ‘হিন্দুস্থান’ বলে । হিন্দুদের  স্থান হিন্দুস্থান । তাহলে সংবিধান অনুসারে দেশটা ধর্ম নিরপেক্ষ থাকল কি করে ? শুধু মাত্র সরকারীভাবে ভারত বা INDIA  বলা বা লেখা হয় । কিন্তু প্রচার মাধ্যম  এবং তথাকথিত দেশপ্রেমী নেতারা হিন্দুস্থান বলেই প্রচার করেন । যে রাজনৈতিক পার্টির নাম ‘ভারতীয়’ দিয়ে শুরু তারা কিন্তু সব সময় হিন্দুস্থানই বলেন। আর আমজনতার কথা কি বলব ।কারন তাদের নিজেদের মাথাটাকে তো প্রচার মাধ্যম CAPTURE  করে নিয়েছে । তাই প্রচার মাধ্যম যেটা 24 ঘন্টা প্রচার করছে, জনতার মুখেও সেই কথা বেরিয়ে আসছে । তাইতো দেখি মুসলমানরাও এদেশটাকে হিন্দুস্থান বলে চলেছেন । তাই তো একজন বলেছিলেন যে, এদেশটাকে তো মুসলমানরাও হিন্দুস্থান বানিয়ে দিচ্ছে । INDIRECTLY RSS-এর উদ্দেশ্যকে সফল করছে । 

         আসলে এসব কিছুর পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে । যেটা বাবাসাহেব ড: আম্বেদকর বুঝতে পেরেছিলেন । তিনি এটাও বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁর অবর্তমানে এরা একদিন INDIA বা ভারতের অর্থকে হিন্দুস্থানে পরিবর্তন করবে । তাই তিনি PRIAMBALE OF THE CONSTITUTION –এ সেই অর্থটা পরিস্কার করে দিয়ে লিখেছেন – INDIA THAT IS BHARAT. 

         তবে হিন্দুত্ববাদীরা তাদের হিন্দুস্থান করার প্রক্রিয়া নিরন্তর চালিয়ে যাচ্ছে । আর সেই প্রক্রিয়াকে জেনে-নাজেনে সাধারণ জনগন ও অন্য ধর্মাবলম্বীরা সাথ দিচ্ছে । এটা খুবই গভীর ভাবনার বিষয় । তাই আপনাদের জানতে ও বুঝতে হবে যে আপনারা যেটা বলছেন বা করছেন সে বিষয়ে আপনার বিচার-ধারা কতটা আছে । স্রোতের অনুকুলে চললে আপনি নিজেও একদিন না বুঝে ভেসে যেতে পারেন । আর যেদিন বুঝতে পেরে পিছন দিকে তাকাবেন তখন দেখবেন প্রতিকুলে ফিরে যাওয়ার আর কোন অবকাশ নেই । 

         কেউ কেউ বলেন , না,আমরা তো ভালবেসেই দেশটার নাম হিন্দুস্থান বলছি । ভালবাসার এই অযৌক্তিক কথা শুনে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায়-মানুষ কোন গড্ডালিকার প্রবাহে ভেসে চলেছে ? কারন দেশ শুধু মাটিতে নয়। দেশ, গঠিত প্রধানত তার জনগনকে নিয়ে। তারপর তাদের ভাষা-সংস্কৃতি, শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও মতপ্রকোশের সতন্ত্রতা নিয়ে । কিন্তু এর প্রতিটি  ক্ষেত্রে শুধু বাধা আর লাঞ্ছনা, অন্যায় আর অবিচার, বিচারের বানী নিরবে নিভৃতে কেঁদে চলেছে ।  হিন্দুস্থান বলে দেশকে ভালবাসা নয় দেশের মধ্যে বিভেদের বিষ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে ।

(===চলবে===)

1 comment:

  1. ক্ষমতা থাকলে মুসলিম অগ্রাসন ও উগ্রবাদী বানাতে ধর্মীয় শাস্ত্রের ভূমিকা নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখান। টের পাবেন কত ধানে কত চাল। (এক চোখ কানা)

    ReplyDelete