শরদিন্দু উদ্দীপন
কনভেনর, খাদ্য ও কাজের অধিকার অভিযান-পশ্চিমবঙ্গ
অপুষ্টির সর্বশেষ স্তর হল অনাহার যা চিরস্থায়ী শারীরিক বিকলাঙ্গতা এবং মৃত্যু কারণ হতে পারে।
দারিদ্রতা,দীর্ঘদিন না খেতে পাওয়ার কারনে অনাহারে মৃত্যুর খবর আমলা শোলের ঘটনা থেকে মানুষের সামনে আসতে শুরু করে। জলপাইগুড়ির চা বাগান থেকে উঠে আসে কঙ্কালসার মানুষগুলির খবর। ঘাস পাতা শিকড় বাকড় খেয়ে তাদের অনেকেই বিকলাঙ্গ। অনেকেই অকালে মারা গেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে বারবার একথা জানালেও কোন সরকার অনাহারে মৃত্যু স্বীকার করেনি।
বরং রোগ এবং বয়সের ভারে মৃত্যু বলে চালাতে সচেষ্ট হয়েছেন বেশি। কোন কোন ক্ষেত্রে অনাহারে মৃত্যুর স্বীকৃতি আদায় করতে আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। আদালতের রায় সরকার মেনে নিতে বাদ্ধ হলেও এই ঘটনা থেকে কোন শিক্ষা লাভ করেনি। বরং ধামাচাপা দেবার জন্য বেশী সচেষ্ট হয়েছেন। অবহেলা ও কুটিলতার এই ছিদ্র ধরেই অনাহার ছড়িয়ে পড়েছে। বিকলাঙ্গতা ও মৃত্যু হানা দিচ্ছে প্রত্যেক জেলায়। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে উঠে আসছে যে,এই মৃত্যু ও বিকলাঙ্গতার শিকার হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা।
অনাহার চাক্ষুষ না করাই যেন সরকারী পদাধিকারী ও শাসক দলের একটা অলিখিত বিধি। এই ধরণের মৃত্যু চোখের সামনে হলেও তারা "তদন্ত" নামক একটি বর্মের আড়ালে চলে যান। অথবা সুকৌশলে তদন্ত শব্দটি ব্যবহার করেন এবং যতক্ষণ সেটা সমাপ্ত না হচ্ছে ততক্ষণ মুখে আঙ্গুল চাপা দিয়ে বসে থাকেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে কেসটি আদালতে বিচারাধীন বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যান।
২০১২ সালের ১৩ই আগস্ট মালদা জেলার হাবিবপুর ব্লকের আকতাই গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে অনাহারের খবর আসতে শুরু করে। ছাত্তারা খুদিপুরের ৭৫ বছর বয়স্ক জাওয়া বেসরার অনাহার পীড়িত হওয়ার খবর প্রিন্ট মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়। মালদা সহযোগিতা সমিতির কর্মীরা সমীক্ষা করে জানতে পারেন যে অধিকাংশ আদিবাসী বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের অবস্থা জাওয়া বেসরার মতই। ভিক্ষা বৃত্তি তাদের একমাত্র উপায়।
বর্তমান রাজ্য সরকার ক্ষমতায় আসার পর খাদ্য ও কাজের অধিকার অভিযান-পশ্চিমবঙ্গের পক্ষ থেকে ১৩টি অনাহার জনিত মৃত্যুর কথা তুলে ধরা হয়। দুঃখের কথা হল,সরকারী তরফ থেকে একটি মৃত্যুকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। উত্তর বঙ্গের চা বাগান অঞ্চলে সফর কালে অনাহারে মৃত্যু হলেও খাদ্যমন্ত্রী তা স্বীকার করেন নি। কান থাকতেও শুনতে পান নি। চোখ থাকতেও দেখতে পান নি। আর মুখ থাকলেও বলতে পারেন নি। সরকারী প্রোটকল এমনই গ্যাঁড়াকল। কোন ক্ষেত্রে সহজেই খোলে আবার কোন ক্ষেত্রে শ্বাসরোধক হয়ে ওঠে।
এমন চলতে থাকলেতো আবার প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়না। অথচ আমরা আন্তর্জাতিক জাতি সংঘে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয়েছি যে ২০১৫ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও অনাহার থেকে দেশকে রক্ষা করব। সার্বিক ভাবে দেশের প্রতিটি নাগরিকের খাদ্য সুরক্ষিত করে ভারতবর্ষকে ক্ষুধা শূণ্য দেশে রূপান্তরিত করব। যদিও ভারত গর্ব করে বলতে পারে যে এই প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য সে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যা পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প হিসেবে পরিচিত। এই প্রকল্পগুলির আওতায় গর্ভজাত শিশু থেকে একেবারে মৃত্যু পথ যাত্রীকেও ভাগিদারী দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প গুলির তালিকাও বৃহৎ এবং ভারতবর্ষের প্রত্যেকটি মানুষকে এই প্রকল্পগুলির কোন না কোন একটির মধ্যে প্রাপকদের তালিকায় রাখা হয়েছে।
২০০১ সালের ২৪শে নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে খাদ্য সুরক্ষা ও পুষ্টি জনিত ৮টি প্রকল্পকে সংযুক্ত করা হয় । তালিকাটি নিম্নরূপ ঃ
১) অভীষ্ট গণবণ্টন ব্যবস্থা (টিপিডিএস)
২) অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা (এএওয়াই)
৩) মধ্যাহ্ন ভোজন (এমডিএম)
৪) সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প (আইসিডিএস)
৫) জাতীয় বার্ধক্য ভাতা (এনওএপিএস)
৬) অন্নপূর্ণা প্রকল্প (এপিএস)
৭) জাতীয় মাতৃত্ব কালীন সহায়তা প্রকল্প (এন এম বি এস)
৮) জাতীয় পরিবার সহায়তা প্রকল্প (এনএফ বিএস)
এখন কথা হল, ২০০০ সালে ১৮টি প্রয়োজনীয় লক্ষ্য মাত্রা ও ৪৮টি নির্দেশ নামা তৈরি করে আন্তর্জাতিক জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) একটি আন্তর্জাতিক ঘোষণা পত্র প্রকাশ করে।
বিশ্বের সব দেশ নেতারা সেখানে স্বাক্ষর করেন। তারা প্রতিশ্রুতি দেন যে, আন্তর্জাতিক জাতিগুলি দারিদ্রতা, ক্ষুধা, আসুখ, নিরক্ষরতা , প্রাকৃতিক অনুৎকর্ষতা এবং মহিলাদের প্রতি বৈষম্য দূর করবে। মূলতঃ এই ১৮টি বিষয়কে ৮টি ল ক্ষ্যের মধ্যে এনে উন্নয়ণ সাধিত হবে।
সহস্রাব্দের উন্নয়ণের ৮ টি লক্ষ্য হল ঃ
১) দারিদ্রতা ও ক্ষুধাকে নির্মূল করা।
২) সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা।
৩) লিঙ্গ সমতা ও মহিলাদের স্বশক্তিকরন।
৪) শিশু মৃত্যু কমানো।
৫) মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি বিধান।
৬) এইচআইভি/এডস, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধে লড়াই।
৭) প্রাকৃতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ। এবং
৮) উন্নয়নের জন্য বিশ্ব-ভাগিদারীত্ব তৈরি করা।
এই প্রতিবেদনে দারিদ্রতা ও ক্ষুধা নির্মূল করার বিষয়ের উপর ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে কিছু প্রয়োজনীয় প্রসঙ্গের উপর গুরুতব দেওয়া হ্যেছিল। আন্তর্জাতিক জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) ২০১০ সালে একটি পরিসংখ্যান দিয়ে দেখান যে, বিশ্বের ৯২৫ মলিয়ন মানুষ দীর্ঘ কালীন ক্ষুধায় পীড়িত। এই তালিকায় আছে ভারতের ৮ টি রাজ্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই ৮টি রাজ্যে অনাহার পীড়িত মানুষের সংখ্যা আফ্রিকার ২৬টি অতিগরীব দেশের লোক সংখ্যা থেকেও ১১ মিলিয়ন বেশী। পশ্চিমবঙ্গও ভারতের এই ৮টি রাজ্যের অন্যতম। এই জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আন্তর্জাতিক জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) কৃষির ব্যবস্থা, বনসম্পদ ও জলসম্পদ বিকাশের জন্য বিশ্বের সমস্ত দেশগুলিকে পরামর্শ দিয়েছে। গ্রামীন ক্ষেত্রে কৃষিতে বেশী বিনিয়োগ করে প্রতিটি নাগরিকের খাদ্য সুরক্ষিত করার কথাও বলা হয়েছে । একথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে ২০১৫ সালের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করতে প্রত্যেক দেশ যত্নবান হবে।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন এসে যেতে পারে যে, খাদ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রে ভারত এতটা পিছিয়ে কেন? ভারতে খাদ্য শস্যের উৎপাদন কি কম? উৎপাদিত খাদ্য শস্য কি অনিয়মিত সংগৃহীত হয় বা গুদামজাতকরণ হয় ?
সরকারী তথ্য কিন্তু ভিন্য কথা বলে। দেশের খাদ্য মজুত রাখার লক্ষ্য মাত্রা ২ কোটি ২০ লক্ষ মেট্রিক টন। সেখানে বর্তমান মজুতের পরিমাণ ৮ কোটি ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। অর্থাৎ বাড়তি মজুতের পরিমাণ ৬ কোটি ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন। যার মধ্যে খোলা আকাশের নিচে রেখে বা অসুরক্ষিত অবস্থায় রেখে ১কোটি ৭৭ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি খাদ্য শস্য পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যা দিয়ে প্রায় ২৩ কোটি পরিবারকে ৪৫ দিন ভরপেট খাওয়ান যায়। খাদ্য শস্যের এই বিপুল জোগান থাকা সত্ত্বেও প্রায় ২৪ কোটি মানুষ অনাহার কবলিত হয়ে পড়েছে। অন্য দিকে রেশনের থেকেও কম দামে পশু খাদ্য হিসেবে সেই খাদ্যশস্য বিক্রি করা হচ্ছে বিদেশের বাজায়।
২০০১ সালের একটি জনস্বার্থ মামলায় সুপ্রীম কোর্ট খাদ্য না পচিয়ে জনগণের মধ্যে সাবসিডিয়ারি মূল্যে অথবা বিনামূল্যে বিতরণ করার নির্দেশ দিলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে সরকার তা কার্যকরী করছে না।
এখানে সরকারের বড় অজুহাত হল, এ ভাবে খাদ্য বন্টন করলে জনগণের কাজের স্পৃহা নষ্ট হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ভারত এক জটিল কর্ম নিঃস্পৃহতার শিকার হয়ে যাবে। উদ্দেশ্যটা এমন যে ক্ষুধা অনাহার এবং অনাহার জনিত মৃত্যু থাকলে মানুষ কর্মোদ্যোগি হবে এবং রাষ্ট্রীয় বিকাশ সাধিত হবে।
জনগণের বিপুল চাপে বর্তমান সরকার খাদ্যসুরক্ষা বিল সংসদে পেশ করলেও তা সম্পূর্ণ জনবিরোধী একটি বিল। বর্তমান অবস্থায় এই বিল পাশ হলে তা মোটেও ভারতীয় নাগরিকদের খাদ্য সুরক্ষিত করবেনা। জাতীয় খাদ্যের অধিকার অভিযানের পক্ষ থেকে এই বিলের জনবিরোধী দিকগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে।
যে দিকগুলি বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তা নিম্নরূপ ঃ
-বর্তমান বিলে দেশের ৩৩% মানুকে খাদ্য সুরক্ষা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
-আগের এপিএল, বিপিএল কথাগুলি তুলে দিয়ে প্রাইওরিটি গ্রুপ ও জেনেরেল গ্রুপ করা হয়েছে, যাতে আগের অবস্থার কোন পরিবর্তন হবে না।
-এই বিলে ক্ষুধার্থ মানুষের সংখ্যা কম করে দেখানো হয়েছে।
-পরিবার পিছু (৫জন করে) ২৫ কেজি খাদ্য দেবার কথা বলা হয়েছে। যা দিনে একজনের ভাগে ১৬৬ গ্রাম করে দাঁড়ায়। যেখানে সুপ্রিম কোর্ট ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য দেবার কথা ঘোষণা করেছিলেন।
-প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার, কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন, সংগ্রহ , সরবরাহ ও সংরক্ষণ নিয়ে এই বিল একেবারেই নিরব(যা আন্তর্জাতিক জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা FAO এর নির্দেশিকার পরিপন্থী)।
-এই বিলে জাঙ্ক ফুড বা বহুজাতিক কোম্পানির তৈরি খাবারের প্রস্তাব রাখা হয়েছে যা মানুষের খাদ্য সার্বভৌমতা ধ্বংস করে দেবে ।
-এই বিলে সরকার খাদ্যের পরিবর্তে আধার কার্ডের মাধ্যমে নগদ টাকা (ক্যাশ ট্র্যান্সফার) প্রদানের উপর বেশী গুরুত্ব দিয়েছে।
-খাদ্যের বদলে নগদ টাকা প্রদানের এই প্রস্তাব শিশু ও মহিলাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
ইতি মধ্যে এই বিলের বর্তমান অবস্থার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির কাছে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের অভিযোগ জমা পড়েছে। সারা দেশ ব্যাপি খাদ্য নিয়মকের দপ্তরে ধর্না প্রদর্শন করা হয়েছে। দিল্লীর যন্তর মন্তরে চলেছে বিক্ষোভ ও আইন মান্য আন্দোলন। সরকারের এই অনড় অবস্থান সাধারণ মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে! তাদের দায় বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে! এই বিল বর্তমান অবস্থায় পাশ হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে বেলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। কারন বিলে অভিযোগ নিরসনের তেমন কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেই। ফলে, খাদ্য চুরি, দুর্নীতি অবাধে চলতে থাকবে, যা রোখার মতো কোন রক্ষা কবজ মানুষের হাতে নেই।
প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি ইচ্ছে করেই এই জটিলতা তৈরি করছেন? সুযোগ করে দিচ্ছে্ন কালোবাজারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলিকে! নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলির অসম্ভব মূল্য বৃদ্ধি ঘটিয়ে ইতিমধ্যেই যারা জনজীবনকে দিশাহারা করে তুলেছে? দিন মজুরে পরিণত করে ফেলেছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে? রাষ্ট্রীয় শ্রমের সবটুকুই চলে যাচ্ছে অনুৎপাদক মুনাফাবাজদের লাভের খাতায়।
এই ঘোলা জলে পড়ে মিলেনিয়াম গোলের রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতি ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ঝরা পাতার মত ধীরে ধীরে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে সাইনিং ইন্ডিয়ার গোয়েবলসিয় শ্লোগান। ভারতবর্ষের বর্তমান পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতি পালন তাই এক অলীক কল্পনা মাত্র।
গত ২১শে জানুয়ারী প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি, কমিশনার অফ ফুডের দপ্তরে রাজ্যের গণবণ্টন বিভাগের তদারকি কমিটির এনজিও প্রতিনিধিরা একটি ডেপুটেশন দেন। প্রতিনিধিরা এই রাজ্যের গণবণ্টন ব্যবস্থার নানা অনিয়মের দিকটি তুলে ধরে তার আসু সমাধান দাবী করেন। এই অনিয়মের বিষয়গুলি চক্ষুগোচর করার জন্য সপ্তাহব্যাপি একটি কর্ম সূচী ঘোষণা করা হয়। যে কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রতিনিধিরা তাদের নিজেদের অঞ্চল অফিসে ৬০ বছরের উর্ধে বিপিএল তালিকা ভুক্ত বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের চাক্ষুশ করাবেন
যাতে তারা অন্নপূর্ণা ও জাতীয় বার্দ্ধক্য ভাতা পেতে পারেন। যারা একেবারে সহায় সম্বলহীন তাদের পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সহায় প্রকল্পের মাধ্যমে জাতে একবেলা রান্না করা খাবার পেতে পারে তার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। যাদের রেশন কার্ড নেই তারাও এই কর্মসূচীতে যোগ দেবেন।
এই কর্মসূচী বাস্তবায়ীত করার জন্য খাদ্য ও কাজের অধিকার অভিযানের অন্যতম সংগঠন উদয়নী সোস্যাল অ্যঅ্যাকশন ফোরাম একটি ব্যপক কর্মসূচী গ্রহণ করে। সংগঠনটি বর্ধমান জেলার কালনা-১, কালনা-২ ও জামালপুর ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ২৫টি গ্রামে ও হুগলী জেলার পান্ডূয়া ব্লকের ৭টি পঞ্চায়তের অন্তর্গত ১৩টি গ্রামে ৪১৩টি পরিবারের মধ্যে একটি সমীক্ষা করে। এই সমীক্ষা থেকে উঠে আসে এমন তথ্য যা পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য ভান্ডার হিসেবে বর্ধমান জেলাকে লজ্জা দিতে পারে। সমীক্ষার থেকে প্রমাণিত হয় যে এই সব গ্রামগুলিতে অনাহার পীড়িত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৫%। ৫% থেকে ৭% মানুষের রেশন কার্ড নেই। বার বার আবেদন করেও রেশন কার্ড হচ্ছেনা। বৈধ কাগজ পত্র থাকা সত্ত্বেও বৃদ্ধ ভাতা পাচ্ছে না। বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকে বিশাল সংখ্যক মানুষের রেশন কার্ড নেই এই প্রসঙ্গটাই বেশি করে উঠে আসে।
গত ২২শে জানুয়ারী ২০১৩ থেকে ২৯শে জানুয়ারী পর্যন্ত বিক্ষোভ, ধর্না ও ডেপুটেশন কর্মসূচী পালিত হয়। বর্ধমান জেলার কালনা-২ ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েতের শতাধিক অনাহারী বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা প্রায় ১ কিলোমিটার মিছিল করে বিকেল ৩টার সময় ব্লক অফিসের সামনে জড়ো হন। তাদের হাতের প্লাকার্ডে লেখা দাবী সমূহ ও মুখে বঞ্চনার শ্লোগান। বিডিও অফিসের গেটের সামনেই পালিত হয় বিক্ষোভ কর্মসূচী। ১০ জনের একটি প্রতিনিধি দল বিডিও সাহেবার সঙ্গে দেখা করে তাদের অনাহারী অবস্থার কথা তুলে ধরেন। সমস্ত বৈধ কাগজপত্র তুলে ধরে দাবী করেন যে অবিলম্বে তারা যেন তাদের ন্যায্য অধিকার পেতে পারে। বিডিও সাহেবা অনাহারী মানুষদের সাথে মতবিনিময় করলে বাস্তব সত্যটা অনূভব করতে পারেন।
২৮শে জানুয়ারী বিক্ষোভ কর্মসূচী ও ডেপুটেশন পালিত হয় কালনা-২ ব্লকের বিডিও অফিসের সামনে। ৪টি পঞ্চায়েতের ৭০জন বৃদ্ধ বৃদ্ধা এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। ১৫ জনের একটি প্রতিনিধি দল বিডিওর সাথে দেখাকরে তাদের বর্তমান অনাহারী অবস্থার কথা তুলে ধরেন। দাবী তোলেন যে তাদের বৃদ্ধ ভাতা দেবার বন্দোবস্ত করা হোক এবং অন্নপূর্ণা বা সহায় প্রকল্পের আওতায় এনে অবিলম্বে খাদ্য দানের ব্যবস্থা করা হোক। গত ২৯শে জানুয়ারী হুগলী জেলার পান্ডূয়া ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েতের ১৫৪ জন অনাহারী বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রেল বাজার থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার পথ হেঁটে বিডিও অফিসের সামনে এসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এদের মধ্যে ১০ জনের একটি প্রতিনিধি দল ব্লকের যুগ্ম আধিকারিকের সাথে দেখা করেন। যুগ্ম আধিকারিকের ঘর ছোট থাকার জন্য অনেক বৃদ্ধ বৃদ্ধাকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে হয়। যুগ্ম আধিকারিকের সাথে উপস্থিত ছিলেন ব্লকের দুজন খাদ্য পরিদর্শক। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে অনাহারী বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা তাদের অসহায় অবস্থার কথা তুলে ধরেন। ১৫৭ জন অনাহারী বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও রেশন কার্ড থেকে বঞ্চিত মানুষ বিকাল ৩টায় মিছিল করে এসে জামালপুর বিডিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। বার বার আবেদন করেও রেশন কার্ড হচ্ছেনা কেন তার জবাব চান তারা। জবাব চান বৈধ কাগজ পত্র থাকা সত্ত্বেও বৃদ্ধ ভাতা তারা পাচ্ছে না কেন? ১ ঘণ্টা ধরে চলে এই বিক্ষোভ কর্মসূচী। ৫ জনের একটি প্রতিনিধি দল আলোচনা করতে যান ব্লক আধিকারিকের সাথে। এই ব্লকের বিশাল সংখ্যক মানুষের রেশন কার্ড নেই এই প্রসঙ্গটাই বেশি করে উঠে আসে। কেন তারা বৈধ প্রমান পত্র থাকা সত্ত্বেও বৃদ্ধ ভাতা পাচ্ছেনা কেন তার ও জানতে চায় অনেকে।
এই অবস্থা পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র। জেলাস্তর থেকে রেশন দোকান পর্যন্ত ভিজিল্যান্স কমিটি বা তদারকী কমিটি গঠন করে জনগণের খাদ্য সুনিশ্চিত করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তা বিশবাঁও জলে। অনেক এসডিও বা বিডিওদের কাছে সরকারী এই নির্দেশিকাই নেই। এই কমিটির মধ্যে জেলাস্তর থেকে ব্লকস্তর পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এখনো অনেক জেলায় তদারকি কমিটি গঠন করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। অনেক জেলায় যাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা নিজেরাই জানেনা যে তারা কমিটির সদস্য। যে সব কমিটিগুলি গঠন করা হয়েছে তাকেও অকেজো করে রাখা হয়েছে। খাদ্য ও কাজের অধিকার অভিযানের পক্ষ থেকে খাদ্য নিয়মকের দপ্তরে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করলেও তেমন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
এবছরই মোবাইলে এস এম এস এর মাধ্যমে রেশন দোকানে খাদ্য বারাদ্দের পরিমাণ জানানো হবে বলে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। সরকারী বিজ্ঞপ্তি জারি করে রেশন দোকান মালিককেই এস এম এস গ্রাহকদের তালিকা দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়। রেশন দোকান মালিকরা সোৎসাহে এস এম এস গ্রাহকদের তালিকা তুলে দিয়েছেন খাদ্য নিয়মকের দপ্তরে। ফল যা হবার তাই হয়েছে। রেশন দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্য চুরি বন্ধ হয়নি। প্রাপকরাই বঞ্চিত হচ্ছে তাদের ন্যয্য পাওনা থেকে।
জাতীয় বার্ধক্য ভাতা প্রকল্পটি আরো জটিল। উপভোক্তার পরিচয় পত্র হিসেবে বি পি এল রেশন কার্ড বা ভোটার আইডি কার্ড এখানে পর্যাপ্ত পরিচয় পত্র নয়। ২০০৬ সালের পারিবারিক সমীক্ষাই এ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। এই সমীক্ষার ভিত্তিতেই সরকারী বি পি এল তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। যার সাথে বি পি এল রেশন কার্ডের কোন সম্পর্ক নেই। ফলে এই বি পি এল তালিকা ব্যপক কারচুপিতে ভরা।
এই তালিকায় সেই সব মানুষেরা বেশি জায়গা পেয়েছেন যাদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের সুসম্পর্ক আছে। ফলে ২০বিঘা জমির মালিক,ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীরাও স্থান পেয়েছে এই তালিকায়। তলিকায় নাম আছে ৬০ বছরের অনুর্ধদের। কিন্তু প্রকৃত ৬০ বছরের উর্দ্ধে সহায় সম্বলহীন অসংখ্য মানুষ এই তালিকায় জায়গা পায় নি।
না এর জন্য সরকারের কোন হেলদোল নেই। বি পি এল তালিকা সংশোধন করে প্রকৃত উপভোক্তাদের ন্যয্য পাওনা প্রদানের প্রতিশ্রুতি তারা ভুলে গেছে। ভুলে গেছে সাংবিধানিক শপথ নিয়ে তারা জনগণের সেবায় নিযুক্ত হয়েছে। ভুলে গেছে পাবলিক সার্ভেন্টদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মিলেনিয়াম গোলের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হলে তাদের কিছু এসে যায়না। বি পি এলের থেকে তারা আই পি এল নিয়েই বেশি ব্যস্ত। বেশী খুশি।
কনভেনর, খাদ্য ও কাজের অধিকার অভিযান-পশ্চিমবঙ্গ
অপুষ্টির সর্বশেষ স্তর হল অনাহার যা চিরস্থায়ী শারীরিক বিকলাঙ্গতা এবং মৃত্যু কারণ হতে পারে।
দারিদ্রতা,দীর্ঘদিন না খেতে পাওয়ার কারনে অনাহারে মৃত্যুর খবর আমলা শোলের ঘটনা থেকে মানুষের সামনে আসতে শুরু করে। জলপাইগুড়ির চা বাগান থেকে উঠে আসে কঙ্কালসার মানুষগুলির খবর। ঘাস পাতা শিকড় বাকড় খেয়ে তাদের অনেকেই বিকলাঙ্গ। অনেকেই অকালে মারা গেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে বারবার একথা জানালেও কোন সরকার অনাহারে মৃত্যু স্বীকার করেনি।
বরং রোগ এবং বয়সের ভারে মৃত্যু বলে চালাতে সচেষ্ট হয়েছেন বেশি। কোন কোন ক্ষেত্রে অনাহারে মৃত্যুর স্বীকৃতি আদায় করতে আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। আদালতের রায় সরকার মেনে নিতে বাদ্ধ হলেও এই ঘটনা থেকে কোন শিক্ষা লাভ করেনি। বরং ধামাচাপা দেবার জন্য বেশী সচেষ্ট হয়েছেন। অবহেলা ও কুটিলতার এই ছিদ্র ধরেই অনাহার ছড়িয়ে পড়েছে। বিকলাঙ্গতা ও মৃত্যু হানা দিচ্ছে প্রত্যেক জেলায়। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে উঠে আসছে যে,এই মৃত্যু ও বিকলাঙ্গতার শিকার হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা।
অনাহার চাক্ষুষ না করাই যেন সরকারী পদাধিকারী ও শাসক দলের একটা অলিখিত বিধি। এই ধরণের মৃত্যু চোখের সামনে হলেও তারা "তদন্ত" নামক একটি বর্মের আড়ালে চলে যান। অথবা সুকৌশলে তদন্ত শব্দটি ব্যবহার করেন এবং যতক্ষণ সেটা সমাপ্ত না হচ্ছে ততক্ষণ মুখে আঙ্গুল চাপা দিয়ে বসে থাকেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে কেসটি আদালতে বিচারাধীন বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যান।
২০১২ সালের ১৩ই আগস্ট মালদা জেলার হাবিবপুর ব্লকের আকতাই গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে অনাহারের খবর আসতে শুরু করে। ছাত্তারা খুদিপুরের ৭৫ বছর বয়স্ক জাওয়া বেসরার অনাহার পীড়িত হওয়ার খবর প্রিন্ট মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়। মালদা সহযোগিতা সমিতির কর্মীরা সমীক্ষা করে জানতে পারেন যে অধিকাংশ আদিবাসী বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের অবস্থা জাওয়া বেসরার মতই। ভিক্ষা বৃত্তি তাদের একমাত্র উপায়।
বর্তমান রাজ্য সরকার ক্ষমতায় আসার পর খাদ্য ও কাজের অধিকার অভিযান-পশ্চিমবঙ্গের পক্ষ থেকে ১৩টি অনাহার জনিত মৃত্যুর কথা তুলে ধরা হয়। দুঃখের কথা হল,সরকারী তরফ থেকে একটি মৃত্যুকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। উত্তর বঙ্গের চা বাগান অঞ্চলে সফর কালে অনাহারে মৃত্যু হলেও খাদ্যমন্ত্রী তা স্বীকার করেন নি। কান থাকতেও শুনতে পান নি। চোখ থাকতেও দেখতে পান নি। আর মুখ থাকলেও বলতে পারেন নি। সরকারী প্রোটকল এমনই গ্যাঁড়াকল। কোন ক্ষেত্রে সহজেই খোলে আবার কোন ক্ষেত্রে শ্বাসরোধক হয়ে ওঠে।
এমন চলতে থাকলেতো আবার প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়না। অথচ আমরা আন্তর্জাতিক জাতি সংঘে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয়েছি যে ২০১৫ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও অনাহার থেকে দেশকে রক্ষা করব। সার্বিক ভাবে দেশের প্রতিটি নাগরিকের খাদ্য সুরক্ষিত করে ভারতবর্ষকে ক্ষুধা শূণ্য দেশে রূপান্তরিত করব। যদিও ভারত গর্ব করে বলতে পারে যে এই প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য সে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যা পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প হিসেবে পরিচিত। এই প্রকল্পগুলির আওতায় গর্ভজাত শিশু থেকে একেবারে মৃত্যু পথ যাত্রীকেও ভাগিদারী দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প গুলির তালিকাও বৃহৎ এবং ভারতবর্ষের প্রত্যেকটি মানুষকে এই প্রকল্পগুলির কোন না কোন একটির মধ্যে প্রাপকদের তালিকায় রাখা হয়েছে।
২০০১ সালের ২৪শে নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে খাদ্য সুরক্ষা ও পুষ্টি জনিত ৮টি প্রকল্পকে সংযুক্ত করা হয় । তালিকাটি নিম্নরূপ ঃ
১) অভীষ্ট গণবণ্টন ব্যবস্থা (টিপিডিএস)
২) অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা (এএওয়াই)
৩) মধ্যাহ্ন ভোজন (এমডিএম)
৪) সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প (আইসিডিএস)
৫) জাতীয় বার্ধক্য ভাতা (এনওএপিএস)
৬) অন্নপূর্ণা প্রকল্প (এপিএস)
৭) জাতীয় মাতৃত্ব কালীন সহায়তা প্রকল্প (এন এম বি এস)
৮) জাতীয় পরিবার সহায়তা প্রকল্প (এনএফ বিএস)
এখন কথা হল, ২০০০ সালে ১৮টি প্রয়োজনীয় লক্ষ্য মাত্রা ও ৪৮টি নির্দেশ নামা তৈরি করে আন্তর্জাতিক জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) একটি আন্তর্জাতিক ঘোষণা পত্র প্রকাশ করে।
বিশ্বের সব দেশ নেতারা সেখানে স্বাক্ষর করেন। তারা প্রতিশ্রুতি দেন যে, আন্তর্জাতিক জাতিগুলি দারিদ্রতা, ক্ষুধা, আসুখ, নিরক্ষরতা , প্রাকৃতিক অনুৎকর্ষতা এবং মহিলাদের প্রতি বৈষম্য দূর করবে। মূলতঃ এই ১৮টি বিষয়কে ৮টি ল ক্ষ্যের মধ্যে এনে উন্নয়ণ সাধিত হবে।
সহস্রাব্দের উন্নয়ণের ৮ টি লক্ষ্য হল ঃ
১) দারিদ্রতা ও ক্ষুধাকে নির্মূল করা।
২) সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা।
৩) লিঙ্গ সমতা ও মহিলাদের স্বশক্তিকরন।
৪) শিশু মৃত্যু কমানো।
৫) মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি বিধান।
৬) এইচআইভি/এডস, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধে লড়াই।
৭) প্রাকৃতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ। এবং
৮) উন্নয়নের জন্য বিশ্ব-ভাগিদারীত্ব তৈরি করা।
এই প্রতিবেদনে দারিদ্রতা ও ক্ষুধা নির্মূল করার বিষয়ের উপর ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে কিছু প্রয়োজনীয় প্রসঙ্গের উপর গুরুতব দেওয়া হ্যেছিল। আন্তর্জাতিক জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) ২০১০ সালে একটি পরিসংখ্যান দিয়ে দেখান যে, বিশ্বের ৯২৫ মলিয়ন মানুষ দীর্ঘ কালীন ক্ষুধায় পীড়িত। এই তালিকায় আছে ভারতের ৮ টি রাজ্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই ৮টি রাজ্যে অনাহার পীড়িত মানুষের সংখ্যা আফ্রিকার ২৬টি অতিগরীব দেশের লোক সংখ্যা থেকেও ১১ মিলিয়ন বেশী। পশ্চিমবঙ্গও ভারতের এই ৮টি রাজ্যের অন্যতম। এই জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আন্তর্জাতিক জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) কৃষির ব্যবস্থা, বনসম্পদ ও জলসম্পদ বিকাশের জন্য বিশ্বের সমস্ত দেশগুলিকে পরামর্শ দিয়েছে। গ্রামীন ক্ষেত্রে কৃষিতে বেশী বিনিয়োগ করে প্রতিটি নাগরিকের খাদ্য সুরক্ষিত করার কথাও বলা হয়েছে । একথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে ২০১৫ সালের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করতে প্রত্যেক দেশ যত্নবান হবে।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন এসে যেতে পারে যে, খাদ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রে ভারত এতটা পিছিয়ে কেন? ভারতে খাদ্য শস্যের উৎপাদন কি কম? উৎপাদিত খাদ্য শস্য কি অনিয়মিত সংগৃহীত হয় বা গুদামজাতকরণ হয় ?
সরকারী তথ্য কিন্তু ভিন্য কথা বলে। দেশের খাদ্য মজুত রাখার লক্ষ্য মাত্রা ২ কোটি ২০ লক্ষ মেট্রিক টন। সেখানে বর্তমান মজুতের পরিমাণ ৮ কোটি ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। অর্থাৎ বাড়তি মজুতের পরিমাণ ৬ কোটি ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন। যার মধ্যে খোলা আকাশের নিচে রেখে বা অসুরক্ষিত অবস্থায় রেখে ১কোটি ৭৭ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি খাদ্য শস্য পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যা দিয়ে প্রায় ২৩ কোটি পরিবারকে ৪৫ দিন ভরপেট খাওয়ান যায়। খাদ্য শস্যের এই বিপুল জোগান থাকা সত্ত্বেও প্রায় ২৪ কোটি মানুষ অনাহার কবলিত হয়ে পড়েছে। অন্য দিকে রেশনের থেকেও কম দামে পশু খাদ্য হিসেবে সেই খাদ্যশস্য বিক্রি করা হচ্ছে বিদেশের বাজায়।
২০০১ সালের একটি জনস্বার্থ মামলায় সুপ্রীম কোর্ট খাদ্য না পচিয়ে জনগণের মধ্যে সাবসিডিয়ারি মূল্যে অথবা বিনামূল্যে বিতরণ করার নির্দেশ দিলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে সরকার তা কার্যকরী করছে না।
এখানে সরকারের বড় অজুহাত হল, এ ভাবে খাদ্য বন্টন করলে জনগণের কাজের স্পৃহা নষ্ট হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ভারত এক জটিল কর্ম নিঃস্পৃহতার শিকার হয়ে যাবে। উদ্দেশ্যটা এমন যে ক্ষুধা অনাহার এবং অনাহার জনিত মৃত্যু থাকলে মানুষ কর্মোদ্যোগি হবে এবং রাষ্ট্রীয় বিকাশ সাধিত হবে।
জনগণের বিপুল চাপে বর্তমান সরকার খাদ্যসুরক্ষা বিল সংসদে পেশ করলেও তা সম্পূর্ণ জনবিরোধী একটি বিল। বর্তমান অবস্থায় এই বিল পাশ হলে তা মোটেও ভারতীয় নাগরিকদের খাদ্য সুরক্ষিত করবেনা। জাতীয় খাদ্যের অধিকার অভিযানের পক্ষ থেকে এই বিলের জনবিরোধী দিকগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে।
যে দিকগুলি বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তা নিম্নরূপ ঃ
-বর্তমান বিলে দেশের ৩৩% মানুকে খাদ্য সুরক্ষা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
-আগের এপিএল, বিপিএল কথাগুলি তুলে দিয়ে প্রাইওরিটি গ্রুপ ও জেনেরেল গ্রুপ করা হয়েছে, যাতে আগের অবস্থার কোন পরিবর্তন হবে না।
-এই বিলে ক্ষুধার্থ মানুষের সংখ্যা কম করে দেখানো হয়েছে।
-পরিবার পিছু (৫জন করে) ২৫ কেজি খাদ্য দেবার কথা বলা হয়েছে। যা দিনে একজনের ভাগে ১৬৬ গ্রাম করে দাঁড়ায়। যেখানে সুপ্রিম কোর্ট ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য দেবার কথা ঘোষণা করেছিলেন।
-প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার, কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন, সংগ্রহ , সরবরাহ ও সংরক্ষণ নিয়ে এই বিল একেবারেই নিরব(যা আন্তর্জাতিক জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা FAO এর নির্দেশিকার পরিপন্থী)।
-এই বিলে জাঙ্ক ফুড বা বহুজাতিক কোম্পানির তৈরি খাবারের প্রস্তাব রাখা হয়েছে যা মানুষের খাদ্য সার্বভৌমতা ধ্বংস করে দেবে ।
-এই বিলে সরকার খাদ্যের পরিবর্তে আধার কার্ডের মাধ্যমে নগদ টাকা (ক্যাশ ট্র্যান্সফার) প্রদানের উপর বেশী গুরুত্ব দিয়েছে।
-খাদ্যের বদলে নগদ টাকা প্রদানের এই প্রস্তাব শিশু ও মহিলাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
ইতি মধ্যে এই বিলের বর্তমান অবস্থার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির কাছে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের অভিযোগ জমা পড়েছে। সারা দেশ ব্যাপি খাদ্য নিয়মকের দপ্তরে ধর্না প্রদর্শন করা হয়েছে। দিল্লীর যন্তর মন্তরে চলেছে বিক্ষোভ ও আইন মান্য আন্দোলন। সরকারের এই অনড় অবস্থান সাধারণ মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে! তাদের দায় বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে! এই বিল বর্তমান অবস্থায় পাশ হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে বেলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। কারন বিলে অভিযোগ নিরসনের তেমন কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেই। ফলে, খাদ্য চুরি, দুর্নীতি অবাধে চলতে থাকবে, যা রোখার মতো কোন রক্ষা কবজ মানুষের হাতে নেই।
প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি ইচ্ছে করেই এই জটিলতা তৈরি করছেন? সুযোগ করে দিচ্ছে্ন কালোবাজারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলিকে! নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলির অসম্ভব মূল্য বৃদ্ধি ঘটিয়ে ইতিমধ্যেই যারা জনজীবনকে দিশাহারা করে তুলেছে? দিন মজুরে পরিণত করে ফেলেছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে? রাষ্ট্রীয় শ্রমের সবটুকুই চলে যাচ্ছে অনুৎপাদক মুনাফাবাজদের লাভের খাতায়।
এই ঘোলা জলে পড়ে মিলেনিয়াম গোলের রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতি ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ঝরা পাতার মত ধীরে ধীরে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে সাইনিং ইন্ডিয়ার গোয়েবলসিয় শ্লোগান। ভারতবর্ষের বর্তমান পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতি পালন তাই এক অলীক কল্পনা মাত্র।
গত ২১শে জানুয়ারী প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি, কমিশনার অফ ফুডের দপ্তরে রাজ্যের গণবণ্টন বিভাগের তদারকি কমিটির এনজিও প্রতিনিধিরা একটি ডেপুটেশন দেন। প্রতিনিধিরা এই রাজ্যের গণবণ্টন ব্যবস্থার নানা অনিয়মের দিকটি তুলে ধরে তার আসু সমাধান দাবী করেন। এই অনিয়মের বিষয়গুলি চক্ষুগোচর করার জন্য সপ্তাহব্যাপি একটি কর্ম সূচী ঘোষণা করা হয়। যে কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রতিনিধিরা তাদের নিজেদের অঞ্চল অফিসে ৬০ বছরের উর্ধে বিপিএল তালিকা ভুক্ত বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের চাক্ষুশ করাবেন
যাতে তারা অন্নপূর্ণা ও জাতীয় বার্দ্ধক্য ভাতা পেতে পারেন। যারা একেবারে সহায় সম্বলহীন তাদের পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সহায় প্রকল্পের মাধ্যমে জাতে একবেলা রান্না করা খাবার পেতে পারে তার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। যাদের রেশন কার্ড নেই তারাও এই কর্মসূচীতে যোগ দেবেন।
এই কর্মসূচী বাস্তবায়ীত করার জন্য খাদ্য ও কাজের অধিকার অভিযানের অন্যতম সংগঠন উদয়নী সোস্যাল অ্যঅ্যাকশন ফোরাম একটি ব্যপক কর্মসূচী গ্রহণ করে। সংগঠনটি বর্ধমান জেলার কালনা-১, কালনা-২ ও জামালপুর ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ২৫টি গ্রামে ও হুগলী জেলার পান্ডূয়া ব্লকের ৭টি পঞ্চায়তের অন্তর্গত ১৩টি গ্রামে ৪১৩টি পরিবারের মধ্যে একটি সমীক্ষা করে। এই সমীক্ষা থেকে উঠে আসে এমন তথ্য যা পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য ভান্ডার হিসেবে বর্ধমান জেলাকে লজ্জা দিতে পারে। সমীক্ষার থেকে প্রমাণিত হয় যে এই সব গ্রামগুলিতে অনাহার পীড়িত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৫%। ৫% থেকে ৭% মানুষের রেশন কার্ড নেই। বার বার আবেদন করেও রেশন কার্ড হচ্ছেনা। বৈধ কাগজ পত্র থাকা সত্ত্বেও বৃদ্ধ ভাতা পাচ্ছে না। বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকে বিশাল সংখ্যক মানুষের রেশন কার্ড নেই এই প্রসঙ্গটাই বেশি করে উঠে আসে।
গত ২২শে জানুয়ারী ২০১৩ থেকে ২৯শে জানুয়ারী পর্যন্ত বিক্ষোভ, ধর্না ও ডেপুটেশন কর্মসূচী পালিত হয়। বর্ধমান জেলার কালনা-২ ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েতের শতাধিক অনাহারী বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা প্রায় ১ কিলোমিটার মিছিল করে বিকেল ৩টার সময় ব্লক অফিসের সামনে জড়ো হন। তাদের হাতের প্লাকার্ডে লেখা দাবী সমূহ ও মুখে বঞ্চনার শ্লোগান। বিডিও অফিসের গেটের সামনেই পালিত হয় বিক্ষোভ কর্মসূচী। ১০ জনের একটি প্রতিনিধি দল বিডিও সাহেবার সঙ্গে দেখা করে তাদের অনাহারী অবস্থার কথা তুলে ধরেন। সমস্ত বৈধ কাগজপত্র তুলে ধরে দাবী করেন যে অবিলম্বে তারা যেন তাদের ন্যায্য অধিকার পেতে পারে। বিডিও সাহেবা অনাহারী মানুষদের সাথে মতবিনিময় করলে বাস্তব সত্যটা অনূভব করতে পারেন।
২৮শে জানুয়ারী বিক্ষোভ কর্মসূচী ও ডেপুটেশন পালিত হয় কালনা-২ ব্লকের বিডিও অফিসের সামনে। ৪টি পঞ্চায়েতের ৭০জন বৃদ্ধ বৃদ্ধা এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। ১৫ জনের একটি প্রতিনিধি দল বিডিওর সাথে দেখাকরে তাদের বর্তমান অনাহারী অবস্থার কথা তুলে ধরেন। দাবী তোলেন যে তাদের বৃদ্ধ ভাতা দেবার বন্দোবস্ত করা হোক এবং অন্নপূর্ণা বা সহায় প্রকল্পের আওতায় এনে অবিলম্বে খাদ্য দানের ব্যবস্থা করা হোক। গত ২৯শে জানুয়ারী হুগলী জেলার পান্ডূয়া ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েতের ১৫৪ জন অনাহারী বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রেল বাজার থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার পথ হেঁটে বিডিও অফিসের সামনে এসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এদের মধ্যে ১০ জনের একটি প্রতিনিধি দল ব্লকের যুগ্ম আধিকারিকের সাথে দেখা করেন। যুগ্ম আধিকারিকের ঘর ছোট থাকার জন্য অনেক বৃদ্ধ বৃদ্ধাকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে হয়। যুগ্ম আধিকারিকের সাথে উপস্থিত ছিলেন ব্লকের দুজন খাদ্য পরিদর্শক। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে অনাহারী বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা তাদের অসহায় অবস্থার কথা তুলে ধরেন। ১৫৭ জন অনাহারী বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও রেশন কার্ড থেকে বঞ্চিত মানুষ বিকাল ৩টায় মিছিল করে এসে জামালপুর বিডিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। বার বার আবেদন করেও রেশন কার্ড হচ্ছেনা কেন তার জবাব চান তারা। জবাব চান বৈধ কাগজ পত্র থাকা সত্ত্বেও বৃদ্ধ ভাতা তারা পাচ্ছে না কেন? ১ ঘণ্টা ধরে চলে এই বিক্ষোভ কর্মসূচী। ৫ জনের একটি প্রতিনিধি দল আলোচনা করতে যান ব্লক আধিকারিকের সাথে। এই ব্লকের বিশাল সংখ্যক মানুষের রেশন কার্ড নেই এই প্রসঙ্গটাই বেশি করে উঠে আসে। কেন তারা বৈধ প্রমান পত্র থাকা সত্ত্বেও বৃদ্ধ ভাতা পাচ্ছেনা কেন তার ও জানতে চায় অনেকে।
এই অবস্থা পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র। জেলাস্তর থেকে রেশন দোকান পর্যন্ত ভিজিল্যান্স কমিটি বা তদারকী কমিটি গঠন করে জনগণের খাদ্য সুনিশ্চিত করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তা বিশবাঁও জলে। অনেক এসডিও বা বিডিওদের কাছে সরকারী এই নির্দেশিকাই নেই। এই কমিটির মধ্যে জেলাস্তর থেকে ব্লকস্তর পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এখনো অনেক জেলায় তদারকি কমিটি গঠন করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। অনেক জেলায় যাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা নিজেরাই জানেনা যে তারা কমিটির সদস্য। যে সব কমিটিগুলি গঠন করা হয়েছে তাকেও অকেজো করে রাখা হয়েছে। খাদ্য ও কাজের অধিকার অভিযানের পক্ষ থেকে খাদ্য নিয়মকের দপ্তরে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করলেও তেমন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
এবছরই মোবাইলে এস এম এস এর মাধ্যমে রেশন দোকানে খাদ্য বারাদ্দের পরিমাণ জানানো হবে বলে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। সরকারী বিজ্ঞপ্তি জারি করে রেশন দোকান মালিককেই এস এম এস গ্রাহকদের তালিকা দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়। রেশন দোকান মালিকরা সোৎসাহে এস এম এস গ্রাহকদের তালিকা তুলে দিয়েছেন খাদ্য নিয়মকের দপ্তরে। ফল যা হবার তাই হয়েছে। রেশন দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্য চুরি বন্ধ হয়নি। প্রাপকরাই বঞ্চিত হচ্ছে তাদের ন্যয্য পাওনা থেকে।
জাতীয় বার্ধক্য ভাতা প্রকল্পটি আরো জটিল। উপভোক্তার পরিচয় পত্র হিসেবে বি পি এল রেশন কার্ড বা ভোটার আইডি কার্ড এখানে পর্যাপ্ত পরিচয় পত্র নয়। ২০০৬ সালের পারিবারিক সমীক্ষাই এ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। এই সমীক্ষার ভিত্তিতেই সরকারী বি পি এল তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। যার সাথে বি পি এল রেশন কার্ডের কোন সম্পর্ক নেই। ফলে এই বি পি এল তালিকা ব্যপক কারচুপিতে ভরা।
এই তালিকায় সেই সব মানুষেরা বেশি জায়গা পেয়েছেন যাদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের সুসম্পর্ক আছে। ফলে ২০বিঘা জমির মালিক,ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীরাও স্থান পেয়েছে এই তালিকায়। তলিকায় নাম আছে ৬০ বছরের অনুর্ধদের। কিন্তু প্রকৃত ৬০ বছরের উর্দ্ধে সহায় সম্বলহীন অসংখ্য মানুষ এই তালিকায় জায়গা পায় নি।
না এর জন্য সরকারের কোন হেলদোল নেই। বি পি এল তালিকা সংশোধন করে প্রকৃত উপভোক্তাদের ন্যয্য পাওনা প্রদানের প্রতিশ্রুতি তারা ভুলে গেছে। ভুলে গেছে সাংবিধানিক শপথ নিয়ে তারা জনগণের সেবায় নিযুক্ত হয়েছে। ভুলে গেছে পাবলিক সার্ভেন্টদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মিলেনিয়াম গোলের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হলে তাদের কিছু এসে যায়না। বি পি এলের থেকে তারা আই পি এল নিয়েই বেশি ব্যস্ত। বেশী খুশি।
No comments:
Post a Comment