বিষয়: হিন্দু
জগদীশ রায়
ভারত বর্ষের সব থেকে বড় ধর্ম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম ।এদেশের বেশীর ভাগ জনগণ হিন্দু ধর্ম বলম্বী । তারা তাদের ধর্মকে বিশ্বাস করে আবার অনেকে নিজেকে ‘হিন্দু’ বলে গর্ববোধ ও করেন । যেটা স্বাভাবিক ।
এখানে এই আলোচনায় কারো ব্যাক্তিগত বিশ্বাসে আঘাত করার উদ্দেশে নয় । আর আঘাত লাগলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । কারন কখনও কখনও বিস্বাসে আঘাত লাগাটাও স্বাভাবিক হয়; যখন সেটাকে যুক্তি-তর্ক দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করার চেষ্টা না করা
হয় । অথবা সুদির্ঘ দিনের বিশ্বাসকে এক ঝটকায় ছুড়ে ফেলা অতসহজ নয় । তবুও বিশ্বাসের পাথরকে মূ্র্তিতে রূপান্তরিত করতে হলে যুক্তি-তর্ক-তথ্য ও বিশ্লেষণের ছেনি ও হাতুড়ি দিয়ে সতর্ক ভাবে কাটার চেষ্টা করলে মূ্র্তি তৈরী হ’তে পারে । যেটা তখন বিশ্বাসের পাথর না হয়ে একটা মূ্র্তিতে রূপান্তরিত হবে ।
আমি কেবলমাত্র সেই বিশ্বাসের পাথরকে মূ্র্তিতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছি। মূ্র্তি হবে কি না সেটা জিনি না, কারণ সেটা পাঠকরা বলেতে পারবেন । তবে আমি আবার বলছি –কারো ব্যক্তিগত বিস্বাসে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য নয় । উদ্দেশ্য সঠিক তথ্যকে আপনাদের সামনে তুলে ধরা ।
হিন্দু শব্দের উৎপত্তি ও অর্থ:
প্রথমেই আমরা চেষ্টা করি হিন্দু শব্দের উৎপত্তি ও অর্থ সম্পর্কে জানতে। হিন্দু শব্দটি হচ্ছে পার্শি শব্দ । যার অর্থ হীন্ বা নীচতা । যদি হিন্দু শব্দের লম্বা উচ্চারণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে হিন্-ন্-ন্ –ন্ –দু । এখানে হিন্ শব্দটি প্রধান । আর হীন্ মানে নীচ্ বোঝায় । ‘হিন্দু’ শব্দটি কিন্তু ব্রাহ্মণদের কোন ধর্ম গ্রন্থে নেই । শ্রুতি,পুরাণ, বেদ,গীতা রামায়ণ, মহাভারতে অর্থাৎ সংস্কৃতের কোন মৌলিক গ্রন্থে । ‘হিন্দু’ শব্দটি নেই ।
ভারতীয়দের কেন হিন্দু নাম দেওয়া হ’ল?
ভারতবর্ষে ৭তম শতাব্দি থেকে ১২ম শতাব্দি পর্া যন্ত বিশেষ করে মুসলমানদের আক্রমন হয় । আক্রমনকারী মুঘলরা ভারতবর্ষ জয় করার পর এদেশে তাদের রাজত্ব স্থাপিত হয় । এদেশে শাসন কার্জ পরিচালনা করতে গিয়ে তারা দুটো প্রধান সমস্যার সম্মুখিন হয়।
প্রথমত:-তারা ভাবল যে আমরা বিজেতা, আমরা এখানের লোকদের পরাজিত করেছি, সুতরাংপরাজিতদের সংঙ্গে আমাদের যেন নসল্ (রক্ত ও সংস্কৃতি) মিশে না যায় । কারন যারা পরাজিত হয় তারা হীন তো হয়। তাদের সংঙ্গে আমাদের সংস্কৃতি ও রক্ত মিশে যাওয়া উচিত নয় । এটা হ’ল মিশ্রনের সমস্যা ।
দ্বিতীয়ত:- এই পরাজিতদের পৃথক রাখার জন্য তাদের নতুন পরিচয় দেওয়া । এটা স্বভাবিক যে পরাজিতদের কেউ ভাল নাম দেবে না । তাই আত্রমনকারী মুঘলরা এদেশের জনগনকে ‘হিন্দু’(পরাজিত,হীন্,নীচ্)নাম দিল । যেমন- ব্রাহ্মণরা ভারতের মূলনিবাসীদের নাম দিয়েছে-দাস, দস্যু, দানব, রাক্ষস ইত্যাদি ।পরবর্তিতে এরা SC, ST OBC দের ENCOUNTER করার জন্য নাম দিল –হরিজন,গিরিজন,বনবাসি ও দলিত ।
এবিষয়ে বাবা সাহেব Dr. B.R AMBEDKAR ,ANNIHILETION OF CASTE এ বলেছেন-
`সর্ব প্রথম এই চরম সত্যকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, হিন্দু সমাজ একটি পৌরানিক কাহিনী । হিন্দু নামটা একটা বিদেশী নাম । ‘হিন্দু’ শব্দটা (আক্রমনকারী) মুসলমানদের দেওয়া নাম। স্থানীয় অধিবাসী এবং মুসলমানদের মধ্যে স্বাতন্ত্র বোঝানোর জন্য তারা স্থানীয় অধিবাসীদের ‘হিন্দু’ নামে অভিহিত করেছিল । ভারতে মুসলমানদের আক্রমনের পূর্বেকার সময়ে সংস্কৃত ভাষার লেখকদের ‘নেশন’(জাতি) সম্বন্ধে কোন ধারনা ছিলনা । তারা ভারতীয় অধিবাসীদের একটি সাধারণ নামকরনের প্রযয়াজনীয়তা অনুভব করেনি। তাই হিন্দু সমাজের বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই । এটা শুধু জাতিগুলির একটি সমষ্টিগত নাম ।
The first and foremost thing that must be recognized is that Hindu Society is a myth. The name Hindu is itself a foreign name. It was given by the Mohammedans to the natives for the purpose of distinguishing themselves. It does not occur in any Sanskrit work prior to the Mohammedan invasion. They did not feel the necessity of a common name because they had no conception of their having constituted a community. Hindu society as such does not exist. It is only a collection of castes.’
ব্রাহ্মণরা নিজেদের হিন্দু বলে স্বীকার করেনি কেন?
ঐ সময়ের ব্রাহ্মণরা নিজেদের হিন্দু বলে মেনে নিতে অস্বীকার করে । তারা বলল, যদি তোমরা পরাজিতদের ‘হিন্দু’ অভিহিত করো তাহলে আমরা ‘হিন্দু’ নই । যেভাবে তোমরা আক্রমণকারী এবং বিজেতা ঠিক একইভাবে আমরাও আক্রমণকারী এবং আক্রমণ করে আমরাও এখাসকার লোকদের পরাজিত করেছিলাম । তাই তোমরা যদি পরাজিতদের ‘হিন্দু’ অভিহিত করো তাহলে আমরা ‘হিন্দু’ নই । এর প্রমান হচ্ছে – মুসলমান শাসকরা যখন জিজিয়া কর অর্থাৎ ধর্ম কর(RELIGIOUS RAX) চালু করেছিল সেটাতে ব্রাহ্মণদের ছাড় (EXEMPTION) ছিল । ব্রাহ্মণদের এই যে ছাড় ছিল যা প্রমান করে তারা নিজেদের হিন্দু বলে মেনে নিতে স্বীকার করত না ।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment