শরদিন্দু উদ্দীপন
এই
আলোচনার শুরুতেই পাকিস্তানের ভূতপূর্ব প্রধান মন্ত্রী জুলফিকার আলি ভূট্টোর ফাঁসির
আগের দিনের (৩রা এপ্রিল, ১৯৭৯) একটি বিরলতম বক্তব্যের উল্লেখ করা সমীচীন মনে করছি।
, The New
York Times ৪ঠা এপ্রিল যে বক্তব্যটি প্রকাশিত করে। ভুট্টো সাহেব কৌতুকের সাথে বলেছিলেন, “ জিয়া-উল-হক আমাকে ফাঁসি দেবে কারণ এখানে
মিলিটারী রাজ কায়েম হয়েছে। ১৯৪৭ সালে মুসলমানরা পেয়েছে পাকিস্তান আর হিন্দুরা
পেয়েছে ইন্ডিয়া। অবশ্যই আমরা স্বাধীনতা স্বরূপ পাকিস্তান নামক ভূখণ্ড পেয়েছি;
কিন্তু হায়! আম্বেদকর নামক মহামানবের পথ অনুসরণ করে জ্ঞান ইন্ডিয়ার সাথে মিলিত
হয়েছে। আম্বেদকর মহম্মদ আলি জিন্নাকে ভারত
ভাগ না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর সতর্ক বানী জিন্না উপেক্ষা
করেছিলেন। আম্বেদকর ছিলেন কাল দ্রষ্টা। তিনি জানতেন যে, স্বাধীনতা সহজে পাওয়া যায়,
কিন্তু শাসন পরিচালনা করা, গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রবর্তন করার জন্য প্রয়োজন হয়
জ্ঞানের এবং এই জ্ঞান সহজ লভ্য নয়। পাকিস্তানের নেতারা জ্ঞান লব্ধ করতে পারেনি যা
আম্বেদকর অর্জন করেছিলেন”। আনন্দের কথা যে, মুসলমানেরা পাকিস্তান পেয়েছে। কিন্তু
জ্ঞানের অভাবে পাকিস্তানের সংবিধানে থেকে গেছে দুর্বলতা ও অসংখ্য ছিদ্র এবং
স্বৈরতান্ত্রিক পরিকাঠামো। এই স্বৈরতান্ত্রিক
পরিকাঠামোয় রাজা হলেন সিংহ আর জনগণ হলেন মেষ। সিংহ যে কোন মেষকে ভক্ষণ করতে
পারে।...কিন্তু মহাজ্ঞানী আম্বেদকর অসাধারণ প্রজ্ঞায় সংবিধান রচনা করে ভারতকে
রক্ষা করেছেন এবং জ্ঞানকে জনগণের মধ্যে
সঞ্চালিত করেছেন”। (Ref : Dalit Voice, 1-15 June, 2005,
)
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গোড়ার কথাঃ
কিছুদিন আগে (২৮শে মে ২০১১) গোয়া থেকে প্রকাশিত “দি নভহিন্দ টাইমস” নামে একটি পত্রিকায় আর সি রাজামনির The Less Known Side of B. R Ambedkar নামক একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধে
তিনি উল্লেখ করেন যে, বিংশ শতকের গোড়া
থেকেই ভারতের অর্থনীতি ও মুদ্রা ব্যবস্থা একটি ভয়ঙ্কর সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। এই সমস্যা সমাধান করার জন্য ব্রিটিশ সরকার Hilton
Young Commission গঠন করেন। এই কমিশন যখন ভারতবর্ষে আসেন তখন কমিশনের সদস্যদের হাতে হাতে ডঃবিআর আম্বেদকরের লেখা “The
Problem of the Rupee – Its origin and its solution.” ঘুরতে দেখা যায়। বাবা সাহেব হিল্টন কমিশনের সামনে তাঁর লেখা “Evidence before the Royal
Commission on Indian Currency and Finance” এবং “The Problem of the Rupee – Its origin and its
solution.” থেকে বক্তব্য রাখেন। তিনি অকপটে বলেন যে, “অর্থনৈতিক ও সামাজিক শোষণের অন্তরায় সমস্ত উপাদানগুলিকে দূর করতে হবে। আমরা জমিদারতন্ত্রের দখলদারী ও ভূমিহীন সর্বহারা শ্রমিক দেখতে চাইনা। আদর্শ অর্থনীতির ভিত্তি হল স্বাধীনতা ও কল্যাণ। পুঁজিপতিদের দ্বারা পরিচালিত সামজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীন উৎপাদনের পরিসমাপ্তি ঘটাতেই হবে”।
সংসদে এই বক্তব্য গৃহীত হয় এবং ১৯৩৪ সালে আরবিআই
অ্যাক্ট পাশ হয়। অর্থাৎ বাবা সাহেবের প্রদর্শিত পথেই অর্থনৈতিক
ও মূদ্রা ব্যবস্থার গতিমুখ পুঁজিপতি কেন্দ্রীক প্রবণতা থেকে জনমুখী বাস্তবতায়
পরিণত হয়। এমন জনমুখী অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণের ফলেই রাষ্ট্রীয় সমস্ত সম্পদের
ভাগীদার হয়ে ওঠে জনগণ। রাষ্ট্র হয়ে ওঠে নিয়ন্ত্রক শক্তি। এখানে বলে রাখি যে
আম্বেদকর তাঁর মাষ্টার ডিগ্রীর জন্য Ancient Indian Commerce’ এর
উপরে থিসিস করেন এমএসসিতে থিসিস করেন ‘The Evolution of Provincial Finance
in British India’ এর উপর এবং ডিএসসি তে “The Problem of the Rupee – Its origin and its
solution.” নিয়ে গবেষণা পূর্ণ করেন।
Tribute to Dr. Ambedkar at
Columbia University:
আর একটি মহান ঘটনার কথা এখানে
উল্লেখ করছি এই কারণে যে এই ঘটানার মাধ্যমে ডঃ বি আর আম্বেদকর এমন উচ্চতায়
প্রতিষ্ঠিত হন যে তাঁর অতিবড় সমালোচকেরাও বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। কারণ অনেক
সামালোচকই তখন পর্যন্ত বাবাসাহেবকে জাতীয়
নেতা হিসেবেও মেনেনিতে দ্বিধা করতেন। তারা আম্বেদকরকে একটি প্রাদেশিক নেতা হিসেবে
প্রচার করতে ভালবাসতেন। ঘটনাটি ২০১০ সালের (Tribute to Dr Ambedkar at Columbia
University: Prof. Nicolas Dirks, http://c250.columbia.edu/c250_celebrates/remarkable_columbians/bhimrao_ambedkar.html
published: 04
Nov 2010)।
এই সময় আমেরিকার কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫০ বছরের
ইতিহাসের উপর একটি গবেষণা মূলক সমীক্ষা চালায়। কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্মান লাভ করেছেন এরকম ৬৪ জন
জগৎবিখ্যাত মনিষীর মধ্যে এই সমীক্ষা চালানো হয়। ২০১০ সালের ১৫ এপ্রিল রাত
৮ঃ০৫ টায় একটি ওয়েব সাইট থেকে আমরা জানতে পারি যে, এই জগত বিখ্যাত শ্রেষ্ঠ
মনিষীদের মধ্যে যিনি সর্ব প্রথম স্থান অধিকার করেছেন তিনি বাবা সাহেব ডঃ বি আর
আম্বেদকর। এযুগের বোধিসত্ব। কসমিক মার্গ দর্শনের একনিষ্ঠ পরিব্রাজক।
যার
ওয়েবসাইট থেকে আমরা এখবর জানতে পারি তিনি প্রফেসর গেইল ওমভেট। যিনি বাবা সাহেব ডঃ
বি আর আম্বেদকরের জীবন ও আদর্শের উপর পি এইচ ডি করেছেন এবং আমেরিকার সম্ভ্রান্ত
পরিবারের বৈভব ছেড়ে দিয়ে আম্বেদকর এবং গোতমা বুদ্ধের জ্ঞান সমুদ্রের সন্ধানে
নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। মহারাষ্ট্রে এসে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন এবং মারাঠি সন্তান
ডঃ পতঙ্কর কে বিয়ে করে আম্বেদকরের জীবনাদর্শকে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থানে তুলে ধরছেন।
তিনি কৃতজ্ঞ চিত্তে উল্লেখ করেছেন যে এই মহামানবদের প্রদর্শিত পথেই আছে পৃথিবী ও
মানুষের নিশ্চিত কল্যাণের পথ। There is no parallel to these philosophies”. ২০১২ সালের ১০ই জুলাই, London School
of Economics সারা বিশ্বের একজন সেরা মনিষী হিসেবে
সম্মানিত করে। ঠিক একই বছরে Oxford
University তাঁকে ১০০০ বছরের সেরা
মনীষী হিসেবে সম্মানিত করে। কিন্তু এই খবরটি চক্রান্তকারীরা হ্যাক করে দেয়।
এর পরেই সিএন আই বি এন এবং দি হিষ্ট্রি চ্যানেল আয়োজিত
জনমতের ভিত্তিতে একটি প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয় ভারতবর্ষে। এই অনুষ্ঠানের নাম
ছিল The
Greatest Indian After Gandhi
(জনান্তিকে
বলে রাখি এই বিতর্ক শুরু হয়েছিল মাত্র দুজন মানুষের মধ্যে। এরা ছিলেন মোহন দাস
করমচাঁদ গান্ধী ও ডঃ ভীম রাও রামজী আম্বেদকর। জনমতের ভিত্তিতে গান্ধী কেবল ২২% ভোট
পায়। এবং বাবা সাহেব পান ৭৮% ভোট। কোন অজ্ঞাত কারণে সেই প্রক্রিয়াটি বাতিল হয় এবং
পরে গান্ধীকে বাদ দিয়ে ভারতের ৫০ জন
ব্যক্তিকে The
Greatest Indian এর
তালিকায় রাখা হয়।)
২০১২ সালের ১১ই আগস্ট। সাবানা
আজমী, অমিতাভ বচ্চন সহ সমস্ত জুরীদের বিচারে বাবা সাহেব ডঃ বি আর আম্বেদকর কে The
Greatest Indian হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু
এর পরেও কি প্রতিক্রিয়াশীলরা বাবা সাহেবের বিরুদ্ধে তাদের চক্রান্ত বন্ধ করেছেন?
মেনে নিয়েছেন তার শ্রেষ্ঠত্ব? আমরা যদি এমন মনে করে থাকি তা হবে বাস্তব থেকে
আমাদের দূরে থাকার একটি নির্মম পরিহাস। আমরা যা বরাবরই
করে এসেছি বা করতে ভালবাসি। আর আমাদের এই
নির্লিপ্ততার বা অজ্ঞতার পূর্ণ সুযোগ নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীলেরা বাবা সাহেবকে
সাম্রাজ্যবাদীদের মদতদাতা হিসেবে প্রমান করার চরম খেলায় মেতে উঠেছে। এরকম দুটি
খেলার প্রামান্য উদাহরণ আমি এর আগের লেখাগুলিতে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তার
খানিকটা এই আলোচনার সাথেও সংযোজন করলাম।
ডঃ বি আর আম্বেদকরের ভাগিদারী দর্শনঃ
ভারতীয় বহুজন সমাজ জাতপাতের কারণেই বঞ্চনার স্বীকার । হিন্দু বর্ণ ব্যবস্থায় সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষকেই জাতের জাঁতাকলে সর্বহারা করা হয়েছে যুগ যুগ ধরে। জাতপাতকে ধর্মীয় মহিমা দিয়ে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ রাষ্ট্রীয় উৎপাদনের প্রায় সবটাই আত্মসাৎ করছে। যে রাজনীতির পেষা কলে ফেলে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষকে শুধু সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়নি,মর্যাদাহীন করে পশুসুলভ জীবন যাপন করতে বাধ্য করা হয়েছে। বঞ্চিতের আত্ম বিকাশের অন্তরায়,শোষণ
যন্ত্রের এই জগদ্দল পাথরটাকে গুড়িয়ে দেওয়াই আম্বেদকরের মিশন ।
বহুজনের পারস্পরিক সহাবস্থানের ভিত্তিতে বিভেদের শেকড় সমূলে উৎপাটন করার কথা বলে এই দর্শন। আম্বেদকর দর্শণের এটাই সব থেকে বড় মূলধন।
এই মিশন "Survival for the fittest"নয় । নয় struggle for exhistance এর উন্মত্ত রণহুঙ্কার। বা প্রতিশোধ পরায়ণ ক্ষমতা দখলের দস্তাবেজ । যে লড়াইয়ের অন্য প্রান্তে অবস্থান করে শ্রেণী শ্ত্রু। যাকে রণনীতি বা রণকৌশলের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে পরাভূত করে প্রোলেতারিয়েতের শাসন কায়েম করতে হয় । এই আদিম হিংস্র মানবিকতার বৈদেশিক ব্যখ্যা আম্বেদকরবাদে জায়গা পায়নি। বরং পরম মিত্রতা বা ভাইচারাই চিরস্থায়ী ভাবে বৈরিতার অবসান ঘটাতে পারে, ভারতীয় দর্শনের এই অমর বাণী তিনি মেনে নিলেন।
সমাজ বিবর্তনের ইতিহাসে বাবা সাহেব ডঃ বি আর আম্বেদ করের মতাদর্শ কালের এক অনিবার্য ভবিষ্যলিপি। এ মতাদর্শ শুধুমাত্র ভারতবর্ষে নয় বরং সমগ্র পৃথিবীর মঙ্গল বার্তা হিসেবে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। পৃথিবীর সর্বজনের কল্যাণে ক্রমপ্রকাশিত এই আলোক বর্তিকা যে মহামিলনের এক ক্ষেত্রে পরিণত হবে তার আভাস কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে দিকে দিকে।
এতে প্রোমাদ গুনতে শুরু করেছে মনুবাদীরা। যাদের এক এবং অদ্বিতীয় এজেন্ডা বর্ণ ব্যবস্থা কায়েম রাখা। এবং আম্বেদকর নির্মিত ভারতীয় সংবিধান সম্পূর্ণ ধ্বংস করে মনুস্মৃতিকে সংবিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
সাম্প্রতি বিজেপির ঘোষিত প্রধান মন্ত্রী পদের দাবিদার গুজরাট গণহত্যার নায়ক মোদির ভাষণে এই জায়নবাদী যুদ্ধের দামামা আমরা শুনতে পেয়েছি। শুরু হয়েছে
হুঁকার র্যালি।
কিন্তু সব থেকে অবাক করে দিয়েছে বামপন্থীদের আগাম বার্তা। মনুবাদীদের সাথে একই সুরে সুর মিলিয়ে বাবা সাহেব ডঃ বি আর আম্বেদ করের বিরুদ্ধে তারাও ষড়যন্ত্রে
সামিল হয়েছে। এই যুদ্ধের মাষ্টার প্লান যে একই চৌখুপির আদলে তৈরি হয়েছে তা বোঝা যায় পরপর দুটি সম্মেলন থেকে। প্রথমটি সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দীর জয়পুর কর্পোরেট বই মেলা এবং অপরটি চন্ডীগড়ে আয়োজিত কোলকাতার বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা পরিচালিত সেন্টার ফর সোস্যাল স্টাডিজ এর জাতি বিমর্শ সম্মেলন। এই দুটি সম্মেলনের চরিত্রই এক। একই সুরে ভিন্ন গান। একটিতে মূলনিবাসী বহুজন সমাজকে ভ্রষ্টাচারের জন্য অপরাধী ঘোষণা। অন্যটিতে মুলনিবাসী বহুজন সমাজের রাষ্ট্র ক্ষমতা অর্জনের ভাগিদারী সামাজিক শৈলীর নির্মাতা বাবা সাহেব ডঃ বিআর আম্বেডকরকে খারিজ করে দেওয়া !
জয়পুর সাহিত্য সম্মলনের মতই চণ্ডীগড় সম্মেলনও বহুজনবিরোধী মঞ্চে পরিণত হয় এবং সেখানে আম্বেডকরকে ভারতীয় আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অপ্রাসঙ্গিক হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং তাঁকে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের সমর্থক সাব্যস্ত করার প্রবল চেষ্টা হয়!
অর্থাৎ মূলনিবাসী বহুজনের স্বাধিকার, আত্তবিকাশ, আত্তমর্যাদা,স্বশক্তিকরন ও সক্ষমতা আর্জনের বিপক্ষে মাক্সবাদী-গান্ধীবাদী-মনুবাদীরা সব এক। একই সঙ্গে এটাও পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, বিভিন্ন মতাদর্শের বিচিত্র রঙা সাইনবোর্ডের আড়ালে লুকিয়ে থাকলেও আসলে ওরা এক। ওরা বুঝতে পেরেছে যে, বাবা সাহেবের Social inclusive doctrine
৮৫%
মূলনিবাসী বহুজন সমাজকে কেন্দ্রীভূত করে তুলবে। এবং এই ভাগিদারী সামাজিক শৈলী মুলনিবাসী বহুজনদের রাষ্ট্র ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে নিয়ে আসবে।
এবং শ্রেণি-সংগ্রামহীন, হিংসাশ্রয়ী রক্তরঞ্জিত যুদ্ধ ছাড়াই সংঘটিত হবে এক নিঃশব্দ রাষ্ট্র বিপ্লব। সর্বজনের কল্যাণে সর্বজনের রাষ্ট্রীয় উত্থান। আত্তউপলব্ধি ও আত্তিকরণের এমন নিঃশব্দ সামাজিক নির্মাণ সাধিত হলে একই সঙ্গে চতুর্বর্ণের ঘৃণার পাহাড় এবং শোষক-শোষিতের আজন্ম লড়াইয়ের মিথ্যে ধাপ্পা আস্তাকুড়ে জায়গা নেবে।
এটাই ওদের ভয়। তাই সব শিয়ালের এক রা ! একই সঙ্গে (মাক্সবাদ +মনুবাদ+গান্ধীবাদ)আক্রমণ শানাও। ত্রিশূল আর কাস্তেতে শান দাও। রামধুন জপ করো। মাওবাদীদের আমদানি করো। মোদির সাথে গলা মিলিয়ে বল ভারত নির্মাণের জন্য যুদ্ধ চাই। মহাপ্রলয় ছাড়া মহা নির্মাণ হয়না।
না, এ আশঙ্কা একেবারে অনৈতিহাসিক নয়। বরং বাবাসাহেব এমনটাই ভবিষ্যবানী করেছিলেন। মাক্সবাদকে সমাজ পরিবর্তনের একটি অনবদ্য পন্থা হিসেবে স্বীকার করলেও ভারতীয় মাক্সবাদীদের প্রতি তার কোন বিশ্বাস ছিলনা। বরং তিনি বলেছিলেন যে, এরা সবুজ ঘাসের আড়ালে লুকিয়ে থাকে দুমুখো বিষধর সাপ। সুজোগ পেলেই ছোবল মারবে। মনুবাদীদের বংশধরেরাই মাক্সবাদীদের ডিক্লাসড লিডার। তাই মার্ক্সবাদের নামে এরা মনুবাদকেই কায়েম করবে।
এই বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন মান্যবর কাশীরাম জি। তার অমোঘ ঘোষণা ছিল, মূলনিবাসীরা রাজনৈতিক উত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা অর্জনের দিকে এগিয়ে গেলে সব মনুবাদী শক্তি এক হয়ে যাবে। কারণ সব রসুনের গোড়া এক জায়গায়। যার নাম মনুবাদ। বহিরাগত শোষকদের Divine প্রভুত্বের জীয়ন কাঠি”।
শ্রমজীবী শ্রেনীর রাস্ট্র ক্ষমতা দখলের চেষ্টা কখনই বুর্জোয়া শক্তি মেনে নেবে না। সংগঠিত করবে সীমাহীন নির্যাতন। তখন রক্তক্ষয়ী বিপ্লব ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ থাকবে না। এটা একটা পরিস্থিতির বিচারে করা ভবিষ্যৎ বানী। কিন্তু ভারতে মনুবাদীশক্তির পতন না হলে শ্রমিক শ্রেনী সংগঠিত ই হবে না। বিপ্লব তো দুরের কথা। এখানেই বুদ্ধ ও বাবাসাহেব এবং বহুজন মনিষীদের প্রাসঙ্গিকতা।
ReplyDeleteআরো জানতে ইচ্ছে হচ্ছে তাঁর জীবনের কথা (জিবনী)
ReplyDeleteধন্য বাদ দাদা আপনাকে ।এমন সত্য ঘটনা কাহিনী উপস্থাপনার জন্য।
জয় ভীম জয় ভারত
বাবা সাহেবের এই ভাগিদারী দর্শন নিয়ে একটি গ্রন্থ রচনার ইচ্ছে আছে।
ReplyDeleteজয় ভীম । আরো জানার অপেক্ষায় থাকলাম।
ReplyDelete