তিনি দিগ্বিজয়ের জন্য মনোনীত। যজ্ঞের জন্য উৎসর্গকৃত। ধর্ম যুদ্ধের জন্য নিবেদিত। তিনি অশ্বমেধের ঘোড়া। তাই তাঁকে সাজানো হয়েছে সযত্নে। চন্দন চর্চিত ললাট। অগ্নিসম রক্ততিলক। শিরে ভাগুয়া ধ্বজ। তুরি, ভেরি, দামামার উন্মত্ত রণহুংকার তুলে তিনি ছুটে চলেছেন। তারই হ্রেষারবে শিহরিত হচ্ছে দশদিক। হ্যা তিনিই বর্তমান ভারতের মনুবাদী শিবিরের ছুটন্ত ঘোড়া। তিনি নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি।
এরকমই একটি ঘোড়ার সন্ধানে ছিল মনুবাদীরা যাকে দিগ্বিজয়ের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং দিগ্বিজয়ের কাজ সমাপ্ত হলে বলি চড়ানো যেতে পারে। বলিতেই মোহগ্রস্থ অশ্বের মুক্তি। হোমাগ্নীর পুত রসে ভস্মীভূত হওয়াতেই তার পরম শান্তি। ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি। মোদি সেই দাস সংস্কৃতি ও পরম্পরার ধারক ও বাহক যে দেবপ্রসাদ লাভ করে পরম শান্তি পেতে চায়।
শূদ্র নিধনের প্রতীকী পরিভাষা ঃ
রামরাজ্যের রণহুংকারঃ
এই অশ্বমেধের ঘোড়া ছুটেছিল খৃষ্টপূর্ব ১৮৭ সাল আগে একবার। প্রকাশ্যে দিবালোকে যখন পুস্যমিত্র শুঙ্গ সম্রাট অশোকের প্রপৌত্র ব্রিহদ্রথকে নৃশংস ভাবে হত্যা করল। পুস্যমিত্র শুঙ্গের এই অশ্বমেধ যজ্ঞ ছিল ঐতিহাসিক কালের সর্ববৃহৎ শূদ্র নিধন যজ্ঞ। অশ্বমেধের নামে ধ্বংস করা হয়েছিল মূলনিবাসী সভ্যতার সমস্ত নিদর্শন। পুস্যমিত্র তার চরিত্রকে অবলম্বন করে লিপিবদ্ধ করেছিল রামায়ন কাহিনী। শম্বুকের মতো জ্ঞান তাপসদের হত্যা করে তাদের ধড় থেকে মাথা নামিয়ে দিয়ে ব্রাহ্মনদের সন্তুষ্ট করেছিল রাজা রাম। মোদির ভাষণেও উঠে আসছে রামরাজ্যের সেই রণহুংকার।
কূর্ম অবতারঃ
কচ্ছপ তার খোলসের মধ্য থেকে ক্রমশ শুঁড় বাড়তে শুরু করেছে। মৃতদেহ তার
প্রধান খাদ্য। ব্রাহ্মণ ভোজনের জন্য শূদ্রের লাশ চাই। সস্তা বহুজনের লাশ। সুলতানি
আমল থেকে ইংরেজ কাল পর্যন্ত ওরা মুখ খুলতে পারেনি। ইংরেজদের কাছ থেকে ক্ষমতা
হস্তান্তরের পর থেকেই ওরা ক্রমশ দাঁত নখ বার করতে শুরু করেছে। শুরু হয়েছে সস্ত্রের
ঝনঝনানি। সস্ত্র পূজা। কিন্তু একটি ঘোড়ার দকার ছিল ওদের। এযাবতকাল ওরা ব্যবহার
করছিল ক্ষত্রিয় শক্তি। কিন্তু ক্ষত্রিয়রা ভূসম্পদের ৮০% দখল করে নিলে ওরা বাণিয়া শক্তি ব্যবহার করে। তুলে আনা হয় মোহনদাস
নামক এক বানিয়াকে। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকেও তারা হত্যা করতে
কুণ্ঠাবোধ করেনি। পাঞ্জাব এবং বাংলার শক্তিকে খর্ব করে তাদের খণ্ডিত করে বিপুল
মানুষকে দেশহীন নাগরিকে পরিণত করতেও তারা দ্বিধা করেনি।
বিনাশায় চ দুষ্কৃতমঃ
ওদের মোক্ষ লাভের সবথেকে বড় অন্তরায় এখন ভারতীয় সংবিধান এবং তার প্রণেতা
বাবাসাহেব ডঃ বিআর আম্বেদকর। কারণ এই
সংবিধান প্রণয়ন করে আম্বেদকর তাদের স্বপ্নের রাম রাজ্যকে আস্তাকুড়ে ফেলে দিয়েছেন।
চতুর্বর্ণ ব্যবস্থাকে শুধু ধ্বংস নয় তাকে গর্হিত ও শাস্তি যোগ্য অপরাধ বলে
প্রতিপাদিত করে দিয়েছেন। সংবিধানের মধ্যে ভাগিদারী ব্যবস্থা বলবত করে সমস্ত
মানুষের সার্বিক উত্থান সম্ভব করে তুলেছেন। এই সংবিধানের কারণেই ক্রমশ রাষ্ট্র
ক্ষমতায় উঠে আসছে বহুজন মানুষ। রাষ্ট্র হয়ে উঠছে for
the people, by the people, of the people এর। শক্তিশালী বহুজন মানুষের শক্ত অভিঘাতেই
উত্তর ভারতে দাঁত বসাতে পারছেনা ভুদেবতারা।
ধর্মসংস্থাপনার্থায়ঃ
সুতরাং পুনর্নির্মাণ চাই। সংবিধানকে ধ্বংস করে মনুর শাসন কায়েম করা চাই।
জনগণকে পুনরায় বর্ণবাদ বা হিন্দুত্বের খোঁয়াড়ে পোরা চাই। বাবরি ধ্বংস চাই, গোধড়া
চাই, সমঝোতা এক্সপ্রেস চাই, গুজরাট মডেল চাই, কাঁসির দখল চাই, বুদ্ধ গয়ার বিলুপ্তি
চাই এবং এগুলো নির্দ্বিধায় প্রচার করার জন্য একজন নির্বোধ দাস চাই। একটা ঘোড়া চাই।
কল্যাণ সিংকে (দাস বংশের আর এক
প্রতিনিধি) দিয়ে শুরু হয়েছিল এই রনভেরি। জাঠ রাজ সিং এ খেলার একেবারে অনুপযুক্ত। মুরলী
মনোহর যোশির গায়ে এত শক্তি নেই। সুতরাং দাস চাই। ঘোড়া চাই। যে বলি প্রদত্ত হবে
জেনেও রামরাজ্য বিস্তারের কাজ করতে পারে।
নরেন্দ্র দামোদর মোদি সেই দাস সেই অশ্বমেধের ঘোড়া যিনি অবলীলায় এগুলো
প্রচার করেতে পারেন। গুজরাট দাঙ্গায় শত শত
মানুষের প্রান নিয়েও গাড়ির চাকায় কুকুর পিষে মরেছে বলে তামাশা করতে পারেন। ১৯৪৭ সালের পরে যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁরা বিছানা-বেডিং বেঁধে রাখুন! ১৬ মে-র পরে তাঁদের বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে বলতে পারেন।
This comment has been removed by the author.
ReplyDelete
ReplyDeleteএকটি তথ্য তুলে ধরা দরকার । মোদি শূদ্র নয় । আর্য বানিয়া - কাঞ্চি ঘোচি সম্প্রদায়ের। এই সম্প্রদায় আর্থিক দিক দিয়ে খুবই শক্তিশালী । মোদি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এই সম্প্রদায়কে OBC তালিকাভুক্ত করে বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে । মন্ডল কমিশনের তালিকায় মোদির সম্প্রদায় নেই । ভারতবর্ষে মোদি গোষ্ঠীর হাতে প্রচুর সম্পদ। নীরব মোদি, ললিত মোদি, মোদি কেয়ার আরো কতো ব্যবসা এই ক্ষুদ্র মোদি সম্প্রদায়ের হাতে ।
http://www.dnaindia.com/india/report-narendra-modi-belongs-to-modh-ghanchi-caste-which-was-added-to-obcs-categories-in-1994-says-gujarat-government-1986389
ReplyDeleteঠিক। নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি মোদ ঘাঞ্চি সম্প্রদায়ের মানুষ। এরা বানিয়া বা পণী। বানিয়ারা কিন্তু আর্য (ঋক বেদের সময় এদের নিকৃষ্ট হিসেবে দেখা হত, সরমার সূক্ত থেকে যায়) নয়। এরাও এদেশের মূলনিবাসী। কালে এরা আর্যদের বশ্যতা স্বীকার করে এবং বৈশ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
ReplyDeleteনরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তার সম্প্রদায়কে বৈশ্য থেকে শূদ্র বা ওবিসি তালিকায় নিয়ে আসে।