Pages

Tuesday, 27 March 2018

রক্ষাকবচ -১, SC/ST prevention of Atrocities Act. 1989






ভারতীয়  সংবিধানের প্রস্তাবনায় লেখা হয়েছেঃ
WE, THE PEOPLE OF INDIA, having solemnly resolved to constitute India into a SOVEREIGN SOCIALIST SECULAR DEMOCRATIC REPUBLIC and to secure to all its citizens:
JUSTICE, social, economic and political;
LIBERTY, of thought, expression, belief, faith and worship;
EQUALITY of status and of opportunity;
and to promote among them all
FRATERNITY assuring the dignity of the individual and the unity and integrity of the Nation;
IN OUR CONSTITUENT ASSEMBLY this twenty-sixth day of November, 1949, DO HEREBY ADOPT, ENACT AND GIVE TO OURSELVES THIS CONSTITUTION.

ভারতের সংবিধানে সমস্ত মানুষকে সমান মর্যাদা দানের কথা উল্লেখ করলেও সমাজ ব্যবস্থায় রয়ে গেছে জাতপাতের বিভেদ। তথাকথিত স্বাধীনতার ৭১ বছর পেরিয়ে এসেও ভারতের জাতিগত বৈষম্যের প্রভাব এতটুকুও কমেনি। এখনো এদেশের ভদ্রলোক নাগরিকেরা বঞ্চিত মানুষদের পশুর থেকেও খারাপ নজরে দেখে। এই মানসিকতা আরো প্রকট হয়ে দেখা দেয় জাতপাতের  প্রশ্নে এই জাতপাতের ধারনা ভারতের নাগরিক সমাজের মধ্যে এত প্রবল যে মানব জাতি এখানে ৬৭৪৮টি জাতিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে (Anthropological Survey of India, Oxford University Press, 1998)  এবং এই বিভাজনের পরতে পরতে রয়েছে দুর্ভেদ্য বিভেদ ঘৃণার বেড়াজাল। এই বিভেদ আবার ধর্মীয় রসায়নে জারিত হয়ে ভারতের মানুষের মজ্জায় মজ্জায় গিয়ে একটি স্থায়ী রূপ ধারন করেছে এবং জন্মান্তরের সাথে প্রথিত হয়ে গেছে।




বাবা সাহেব ডঃ বিআর আম্বেদকর ভারতীয় সংবিধানের মধ্যে জাতপাত বিলুপ্তির জন্য  নানা অবকাশ রাখলেও মানুষের মন থেকে জাতের বৈষম্য ঘোচে নি। মেটানো যায় নি অস্পৃশ্যতার গ্লানি। ভারত সরকারকে তাই  Untouchability (Offences) Act 1955  প্রয়োগ করে জাতপাত এবং অস্পৃশ্যতার ঘৃণাকে নিয়ন্ত্রিত করতে হয়। ১৯৭৬ সালে এই আইন নিপীড়িত নিষ্পেষিত মানুষগুলিকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সাথে যুক্ত করে এই আইনকে Protection of Civil Rights Act. রূপান্তরিত করা হয়।


ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে এবং জাতপাত ধ্বংস করার কথা উল্লেখ রা হয়েছে। সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ভারতের প্রতিটি নাগরিক আইনের চোখে সমান   বর্ণ, ধর্ম জাত, জাতি, জন্মস্থান, লিঙ্গ বৈষম্য বা ভেদাভেদ সংবিধানে নিষেধ করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ১৭তে কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে অস্পৃশ্যতা। তবুও তথাকথিত উচ্চবর্ণের দ্বারা এসসি/এসটি মানুষেরা চরম ভাবে নির্যাতিত হয়েছে। উচ্চ বর্ণের মানুষেরা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত মিলিটারী বাহিনী তৈরি করে সংগঠিত ভাবে জল-জঙ্গল-জমির উপর দখলদারী করেছে। এসসি /এসটিদের ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দিয়েছে। নির্বিচারে কেড়ে নিয়েছে তাঁদের ভিটে মাটি। নারীদের ইজ্জৎ লুটেছে, ল্যাংটো করে ঘোরানো হয়েছে এবং খুন করে গাছে টাঙ্গিয়ে দিয়েছে নরনারীর লাশ। রাস্তা কেটে, পানীয় জল বন্ধ করে এমনকি হাটবাজার বন্ধ করে চলেছে সামাজিক বয়কট।  এই ধরণের পাশবিক অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন ফুলন দেবী। যাকে রাজপুত বা ঠাকুর সমাজের গুন্ডা বাহিনী ধর্ষণ করে উলঙ্গ ভাবে  সমগ্র গ্রাম ঘুরিয়েছিল। তাঁদের অত্যাচারের ফুলন গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন এবং প্রতিশোধ নেবার জন্য গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী।

এসসি/এসটিদের উপর যে নির্মম অত্যাচার চলত তা সরাসরি প্রত্যক্ষ করে সাইমন কমিশন। ১৯২৮ সালের ২৯শে মে বাবা সাহেব আম্বেদকর বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভার পক্ষ থেকে এসসি এবং এসটিদের উপর সংগঠিত নানা অত্যাচারের ঘটনাকে উল্লেখ করে  সাইমন কমিশনকে একটি প্রতিবেদন পেশ করেন।

ব্রিটিশের কাছ থেকে শাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে সারা ভারত জুড়ে এই অত্যাচার আরো বেড়ে যায়। ইমানুয়েল শেখরণ নামে তামিলনাডুর একজন শিক্ষিত দলিত নেতা অস্পৃশ্যতা সম্পর্কিত কেসগুলি নিয়ে হাইকোর্টে লড়াই শুরু করলে তাকে হত্যা করা হয়। এই হত্যার প্রতিবাদে ১৯৫৭ সালে তামিলনাডুর রামানাথপুরমে শুরু হয়ে যায় দাঙ্গা। ১৯৬৮ সালে তামিলনাডুর কিলাভেনমানিতে গণহত্যার শিকার হয় ৪২জন দলিত। ১৯৬৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের  কাঞ্চিকাচেরলার   দলিত নেতা কোটেসুকে হত্যা করা হয়। ১৯৭৮ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের ইন্দ্রভেলিতে  জমি নিয়ে বিবাদের ফলে ১০জন আদিবাসীকে হত্যা করে ব্রাহ্মন্যবাদিরা।                       

১৯৭৯ সালে বিহারের বেলচি এবং ১৯৮০ সালে পিপরাতে গণহত্যার শিকার হয় এসসিরা।  ওই বছরে উত্তর প্রদেশের এক দলিত ঘোড়ার পিঠে চড়ে বরযাত্রী নিয়ে যাবার অপরাধে খুন হয়ে যায়।  ১৯৮৫ সালে বিহারের শিবগঞ্জ জেলার বানঝিতে পুলিশের গুলিতে মারা যায় ১৫জন আদিবাসী।

এই সব অত্যাচার এবং হত্যার প্রতিবাদে দলিত নেতা এবং এমপিরা কংগ্রেস সরকারের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেন। ১৯৮৭ সালের ১৫ই আগস্টের ভাষণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এসসি/এসটিদের উপর নির্যাতন এবং নিপীড়ন বন্ধ করার জন্যে একটি কঠোর আইন তৈরি করবেন বলে ঘোষণা করেন। (Wikipedia, Scheduled Caste and Scheduled Tribe (Prevention of Atrocities) Act, 1989. )


এসসি এবং এসটিদের উপর নিপীড়ন নিয়ন্ত্রণ আইন

No. 33 OF 1989   [11th September, 1989.]


আইনটির মধ্যে ৫টি অধ্যায় এবং ২৩টি ধারা রয়েছে। আইনটিতে ভারতীয় সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে অস্পৃশ্যতা, অত্যাচার, জাতের নামে অপমান এবং ঘৃণা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে অধ্যাদেশ রয়েছে তার অধীনে এসসি এসটিদের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকারকে   মৌলিক অধিকার হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়েছে।              


এই আইনটি ভারতের সমস্ত এসসি এবং এসটিদের উপর নিপীড়ন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভারতীয় সংসদ দ্বারা  ১১ই সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ সালে পাশ করা হয়েছে এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি সই করে সরকারী গেজেটে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।  ১৯৯০ সালের ৩০শে জানুয়ারী থেকে এই আইন সমগ্র দেশে কার্যকরী করা হয়।

এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যেঃ
() আইনটিকে Scheduled Castes and the Scheduled Tribes (Prevention of Atrocities) Act, 1989 হিসেবে গণ্য করা হবে।


() এই আইন জম্মু-কাশ্মীর ছাড়া ভারতের সকল রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের জন্য কার্যকরী হবে।

() কেন্দ্রীয় সরকারের গেজেটে বিবৃতি দিয়ে এই আইন বলবত করা হবে।


২। () এই আইনে নিপীড়নের সংজ্ঞাকে সেকশন ধারার অধীনে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে।


৩। দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে নৃশংসতা জনিত অসন্তোষ এবং তার শাস্তি বিধান।

এখাণে বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি সে যদি এসসি বা এসটি সমাজের কেউ না হয়, তবে সে যদি

 (দলিত সমাজের কোন ব্যক্তিকে অখাদ্য খেতে বাধ্য করে।

() আঘাত করেজাতপাত তুলে ব্যঙ্গ করে, বাডিরপাশে নোংরা আবর্জনা, বিষ্ঠা বা হানিকারক কোন পদার্থ জমা করে,

() জোর করে কাপড় খুলে নেয়, বিবস্ত্র করে লোকালয়ে ঘোরাতে বাধ্য করে, মুখে চুনকালি লাগায় বা কোন ধরণের অমানবিক আচরণ করে যা অমর্যাদাকর

() অন্যায় ভাবে চাষের জমি, ঘরবাড়ি, তার আওতায় থাকা কোন সম্পত্তি দখল করে নেয়,

() এসসি এবং এসটির দখলে থাকা কোন জঙ্গল, জলাভূমি, বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়,

() দলিত সমাজের কোন সরকারী চাকরীজীবীকে যদি জোর করে ভিখারী, কৃতদাস বানানোর চেষ্টা করা হয়

() দলিত সমাজের কারুর বিরুদ্ধে যদি মিথ্যে বিদ্বেষপূর্ণ, হয়রানীকর   প্রাতিষ্ঠানিক ষড়যন্ত্র করা হয়

() দলিত সমাজের চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে যদি কোন মিথ্যে অসার গুজব রটানো হয় যা ওই ব্যক্তির আইনি  অধিকারকে ক্ষুন্ন করে

(১১) দলিত সমাজের কোন নারীকে আঘাত করা, তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা বা তাকে যৌন নির্যাতন করা, তার সম্মানহানী করা,

(১৩) দলিত সমাজ যেখান থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করে তা নোংরা করা, বন্ধ করে দেওয়া,

(১৫) দলিত সমাজের মানুষকে ঘর, বাড়ি, জমি জায়গা থেকে উচ্ছেদ করে তাকে বিতাড়িত করা এই সবই চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ।


বিশেষ আদালতঃ

দ্রুত শুনানি এবং বিচারের জন্য এই আইনে একটি বিশেষ আদালতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রুল ১৩(১)এ বলা হয়েছে যে বিচারক এই কেসগুলিকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিবেচনা করে এই কেসের দ্রুত রায় দেবেন।  এই সমস্ত অপরাধগুলিকেই Non bell able ধারায় নিতে হবে এই আইনে  ন্যুনতম মাস প্রয়োজনে বছরের জেলের বিধান দেওয়া হয়েছে। হত্যা এবং সম্পদ লুন্ঠনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।                                   

তদন্ত ব্যবস্থাঃ

রুল ৭(১) অনুযায়ী SC/ST Atrocities Act. 1989 এর তদন্ত একজন ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্ট অফ পুলিশ (ডিএসপি) এর  নিচে কোন অফিসারকে দিয়ে করা যাবে না।

ক্ষতিপূরণঃ

দাঙ্গা, অগ্নিসংযোগ বা নির্যাতনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসসি এসটি সমাজের মানুষেরা দারুন ভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাঁদের পুনর্বাসন এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য এই আইনে রাজ্য সরকারকে যথোপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।           

সদিচ্ছার অভাবঃ

SC/ST Atrocities Act. 1989 এর মধ্যে দলিত মানুষদের সমস্ত সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও রাজ্য সরকারগুলির এই আইন প্রয়োগ করার ব্যাপারে সদিচ্ছার অভাব এবং অনীহা রয়েছে। সমস্ত রাজ্যে নামমাত্র বিশেষ আদালত গঠন করলেও সাধারণ মানুষ  এই আইন সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ রয়েগেছে। সরকারী প্রচার মাধ্যমেও এই আইন সম্পর্কে দলিত মানুষদের সচেতনতা বাড়ানোর কোন ব্যবস্থা করা হয় নি। দলিত মানুষ এই আদালতের সুযোগ কিমি. নিলেও ৮০% কেস পেন্ডিং হয়ে পড়ে আছে। একটি ক্ষেত্র সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এই বিশেষ আদালতের জন্য  ৭৭০০০ দলিত মানুষের জন্য একজন আইপিএস অফিসার নিযুক্ত করা হয়েছে।     

দেশে দলিতদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অত্যাচার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দেশে এতবড় একটি রক্ষা কবচ থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট অন্য কথা বলছে।       

২০১১ এর সরকারী পরিসংখ্যান  বলছে-

অপরাধের ক্ষেত্রে দলিত হওয়ার কারণে,

) প্রতি ১৮ মিনিটে একজন দলিত হেনস্থার শিকার হয়।

) প্রতি দিন জন দলিত নারী ধর্ষিতা হয়।

) প্রতি দিন   জন দলিতকে হত্যা করা হয়।

) প্রতি দিন টি দলিত বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

) প্রতি দিন কম বেশী একজন দলিতকে অপহরণ করা হয়। [সপ্তাহে টি]

গ্রামের অবস্থা আরো খারাপঃ

) গ্রাম্য এলাকায় প্রতি ৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তত পক্ষে একটি বিদ্যালয়ে দলিতদের জন্য আলাদা করে বসার ব্যবস্থা থাকে।

) ২৭. শতাংশ গ্রামের দলিতদের থানায় ঢুকতে দেওয়া হয় না।

) ৩টি দলিত বাড়ির মধ্যে অন্তত ১টি বাড়িতে স্বাস্থ্য কর্মীরা যেতে অস্বীকার করেন।

) অন্তত অর্ধেক গ্রামে একই জায়গা থেকে দলিতদের জল নিতে দেওয়া হয় না।

) ৭০ শতাংশ গ্রামে দলিতদের সাথে উঁচু জাতের মানুষেরা এক সাথে খেতে অস্বীকার করেন।

দলিত মেয়েদের উপরে নির্যাতনঃ 

)প্রতিদিন জন দলিত মেয়ে ধর্ষিতা হয়।

) গ্রামের অন্তত ৭০ শতাংশ দলিত মেয়ে নিরক্ষর।

) হাজারে হাজারে দলিত মেয়ে তাঁদের বয়ঃসন্ধি হওয়ার আগেই পতিতালয়ে পাচার হয়ে যায়। এবং দেশের পতিতালয়ের অন্তত ৯০ শতাংশই দলিত।

) দেশে যত ধর্ষণ হয় তাঁর সিংহ ভাগই দলিত মহিলা। বেশিরভাগই তাঁদের ভূ-স্বামী অর্থাৎ যাদের জমিতে খেটে খায় তাঁদের দ্বারাই ধর্ষিতা হয়। আর এই ধর্ষণের মাত্র শতাংশ থানায় রিপোর্ট হয়! যার ভেতরে ৩০ শতাংশ রিপোর্ট পুলিশ মানতে অস্বীকার করে কারণ উঁচু জাতের সামাজিক প্রতিপত্তির কথা ভেবে। [তথ্য সুত্রঃ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক নিউজ। ন্যাশন্যাল জিওগ্রাফিক আশঙ্কাও করেছে যে অনেকেই সংখ্যার এই পরি সংখ্যান মানতে চাইবেন না, কারণ এতটাই ভয়ংকর পরিসংখ্যান!(“No one believes these numbers are anywhere close to the reality of crimes committed against Dalits. Because the police, village councils, and government officials often support the caste system…”)]

দলিতদের অর্থনৈতিক অবস্থা সামাজিক অবস্থাঃ

) দেশে দলিত সম্প্রদায়, মুসলিম সম্প্রদায়ের থেকেও দরিদ্র! ২০১১ সালের পরিসংখ্যানে এমনটাই বলছে সরকারের রিপোর্ট। গ্রামের ৪৪. শতাংশ ST এবং ৩৩. শতাংশ SC দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে; যেখানে মুসলিমদের শতাংশ হল ৩০. শতাংশ। শহরে ST ২৭. এবং SC ২১. শতাংশ দরিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে। যেখানে মুসলিম ২৬. শতাংশ। [সুত্রঃ DNA INDIA]

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কর্ণাটকে, সেখানে ৯৩ শতাংশ দলিত পরিবার দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে!!! [সুত্রঃ টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ২০১৩]

) প্রায় অর্ধেকের বেশী(৫৪%) দলিত শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।

) ১০০০ এর ভেতর ৮৩ জন দলিত শিশু জন্মের একবছরের মধ্যে মারা যায়।

এতো সব কিছুর পরেও যারা দাবী করেন যে, এখন তো অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। তাঁদের জন্য গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান দিইঃ

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (NCRB) – তথ্য অনুযায়ীঃ

২০০৯= হত্যা-৬২৪; ধর্ষণ-,৩৪৬; মোট অপরাধ-৩৩,৫৯৪

২০১০= হত্যা-৫৭০ ; ধর্ষণ-,৩১৯ ; মোট অপরাধ-৩২,৭১২

২০১১= হত্যা-৬৭৩ ; ধর্ষণ-,৫৫৭ ; মোট অপরাধ-৩৩,৭১৯

২০১২= হত্যা-৬৫১ ; ধর্ষণ-,৫৭৬ ; মোট অপরাধ-৩৩,৬৫৫

২০১৩= হত্যা-৬৭৬ ; ধর্ষণ-,০৭৩ ; মোট অপরাধ-৩৯,৪০৮

২০১৪= হত্যা- ; ধর্ষণ-,২৩৩ ; মোট অপরাধ-৪৭,০৬৪

সম্প্রতি ঘটনা এবং দলিত আইনের প্রয়োগঃ

SC ST Atrocities Act. 1989 এর আওতায় যে ২০% কেস হয় তার যে কি দশা হয় তা রোহিত ভেমুলার প্রাতিষ্ঠানিক হত্যার কেস থেকে প্রমানিত। এই কেসের অন্যতম আসামী ছিলেন তৎকালীন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানী, বাঙ্গারু দত্তাত্রেয় এবং হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আপ্পা রাও। সরকার প্রথমেই এই কেসকে দুর্বল করে দেবার জন্য রোহিত ভেমুলার জাতি সূচক শংসাপত্রকে জাল প্রমান করার চেষ্টা শুরু করে। তদন্তের পর ম্যাজিস্ট্রেট এই শংসাপত্রকে সঠিক বললেও পরে তা আবার ফিরিয়ে নেওয়া হয়। ঝুলে থাকে রোহিতের কেস।
উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে দলিত ঘর জ্বালিয়ে দিয়ে মানুষ হত্যা করে রান প্রতাপের জন্মদিন পালন করে রাজপুত সমাজ। এতে ৭০জনেরো বেশী রাজপুতদের উপরে এই দলিত আইন অনুসারে কেস করা হয়। এই কেসের পরে পুলিশ আসামীদের ছেড়ে দিলেও ভীম আর্মির চন্দ্রশেখর আজাদ সহ একাধিক দলিতের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন অনুসারে কেস করে এবং বিজেপির যোগী সরকার অত্যাচারী রাজপুতদের বিরুদ্ধে সমস্ত কেস তুলে নেয়।

 ২০১৮ সালের ১লা জানুয়ারী ছিল ভীমা কোরেগাঁওয়ের শৌর্য দিবসের ২০০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানকে বানচাল করে দেবার জন্য একেবারে অতর্কিতে সন্ত্রাসবাদী কায়দায়  আক্রমণ করে "ব্রাহ্মণ সভা" এবং আরএসএস। তারা আগুন জ্বালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং নিরীহ, নিরস্ত্র নারীপুরুষের উপরে লাঠি, রড, পাথর চালিয়ে রক্তাক্ত করে দেয়। এই ঘটনায় প্রতক্ষ্য সংযোগ থাকার জন্য মিলিন্দ একবোটে এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির গুরুজী সাম্বাজী ভীড়ের বিরুদ্ধে   SC ST (Prevention of Atrocities) Act. 1989  অনুসারে কেস হয়। এই কেসে মিলন্দ একবোটে এরেস্ট হলেও এখনো সাম্বাজী ভিড়েকে এরেস্ট করা হয় নি।

রক্ষা কবচ ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রঃ     
ঠিক এই সময়  SLP (Crl.) No. 5661 of 2017, Subhash Kashinath Mahajan v. State of Maharashtra. Vide its order dated 20.11.2017, একটি ৮৯ পাতার নির্দেশিকা জারি করে  SC ST (Prevention of Atrocities) Act. 1989 কে দুর্বল এবং কার্যত অকেজো করে দেওয়া হল।   (চলবে, এর পরে সুপ্রিমকোর্টের ৮৯ পাতার সংক্ষিপ্ত নির্দেশিকা)  


5 comments:

  1. ব্রাহ্মণ বিদেশী । তাই তারা মূলনিবাসীদের কখনো ভাল করে না ।

    ReplyDelete
  2. অনেক অনেক তথ্যপেলাম, যা পথ চলতে খুবই সাহায্য করবে আমায়।।
    ধন্যবাদ ঊদ্দিপন স্যার।।

    ReplyDelete
  3. sc/st creamy lair jara tara dalale porinoto. Tara esob bhabar somoy pai na.
    onek guruttopurno combined clarified lekha. Manushke manobik o socheton hoa khubi dorkar.
    Jai Bhim dada.

    ReplyDelete