Pages

Monday 26 November 2012



আম্বেদ করের  Social Inclusion Doctrin-1
ব্রাহ্মন্যবাদীদের গোটা রাজনীতিটাই Exclusion theory'র উপর দাঁড়িয়ে। মানুষের মধ্যে বিভেদের বিষ না থাকলে ব্রাহ্মন্যবাদ টেকেনা। মাক্সবাদীরা Inclusion'র কথা বলে। কিন্তু ভারতবর্ষে তার প্রয়োগ করার জন্য যারা বেশী উৎসাহী হলেন তারা কেউই শোষিত শ্রেণীর প্রতিনিধি নয়। ব্রাহ্মন্যবাদের পাঠশালায়  declassed কম্যুনিস্ট নেতা। তারা ভারতীয় পটভূমিতে শোষক-শোষিতের ব্যাখ্যাই দিতে পারলেন না। অথবা সযত্নে এড়িয়ে গেলেন ব্রাহ্মন্যবাদীদের discrimination theory বর্ণবাদ। Class struggle না  Caste struggle বুঝতে বুঝতে নখ-দন্ত ভোঁতা হয়ে গেল । সুযোগ বুঝে ব্রাহ্মন্যবাদীরা পুরো পলিটব্যুরোটাই দখল করে নিল। Declassification তত্ত্বের বহুল প্রয়োগে বামুন ঘরের ছেলে/মেয়েদের জাতীয় স্তর থেকে একেবারে আলু-পটল কারবারীদের ইউনিয়ন পৌঁছে দিল। মাক্সবাদী স্কুলে ১০০ বছর ধরেও কোন শোষিত শ্রেণীর প্রতিনিধি উঠে এলো না। অথবা উঠতে দেওয়া হল না।  ভারতীয় মাক্সবাদ হয়ে দাঁড়ালো চিরাচরিত ব্রাহ্মন্যবাদী বা মনুবাদের প্রয়োগশালা । এটাই আশঙ্কা ছিল ডঃ বি আর আম্বেদকরের। শ্রম মন্ত্রী থাকাকালীন মাক্সবাদী ইউনিয়নকে আর্থিক সুবিধা পেতে সাহায্য করলেও নমুনা দেখে তিনি শঙ্কা বোধ
করেছিলেন ।

ভাগিদারী আন্দোলনের সপক্ষে এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বঞ্চিত জনপুঞ্জের মধ্যে প্রকৃত যে আন্দোলন বা সংস্কারগুলি শুরু হয়েছিল সমকালীন ভারতে তার সাথে মাক্সবাদীরা মিলতে পারেনি। চন্ডাল হরিচাঁদ ঠাকুরের তেভাগা আন্দোলন,মহাত্মা জ্যোতি রাও ফুলের সত্যশোধক সমাজ গঠন,রামস্বামী পেরিয়ারের Self Respect Movement,নারায়নাগুরুর সামাজিক পুনর্গঠন আন্দোলন,মহাত্মা গুরুচাঁদ ঠাকুরের শিক্ষা,চাকুরী ও রাজনৈতিক ভাগিদারী আন্দোলন এবং সর্বোপরি বাবাসাহেবের জাতপাত, শোষণ মুক্ত সর্বজন সমাজ গঠনের কোন প্রক্রিয়াতেই মাক্সবাদীদের অংশগ্রহণ ছিল না। বা এই আন্দোলনগুলিকে
বঞ্চিত,নিপিড়িত মানুষের  দাসত্বের থেকে মুক্তি বা  ব্রাহ্মন্যবাদের divine slavery থেকে মুক্তির প্রয়াস বলেও
স্বীকার করেনি। বরং মনুবাদীদের মতো এই আন্তরিক উত্থানকে জাতপাতের রাজনীতি বলে উপেক্ষা করেছে।

পাহাড়ী বিদ্রোহ (দুমকা),মুন্ডা বিদ্রহো,তিলকা মাঝির জল-জঙ্গল-জমি-পাহাড়-বনভূমি রক্ষার আন্দোলন,সিধু-কানুর "হুল মাহা" মাতৃভূমি রক্ষার আমরণ লড়াই,বীরসার "উলগুলান" কোনটিই দিকু সমাজের কাছে সমাদর পায়নি।

ভারতবর্ষের কোন রাজনৈতিক দল জাতপাত চূর্ণ করে মানুষের মধ্যে চিরায়ত বিভেদের দেয়ালটিকে ভাঙতে চায়নি। বরং সযত্নে লালন করেছে। পালন করেছে। আলাদা আলাদা কক্ষের(সেল)আলাদা আলাদা তালা ঝুলিয়ে (সংখ্যা লঘু,এসসি/এসটি,ওবিসি ইত্যাদি)বিভেদটিকে একটি চিরস্থায়ী বন্দবস্তে পরিণত করে ফেলেছে। আম্বেদকর  দর্শণ জাতপাত ভাঙ্গার কথা বলে। বহুজনের পারস্পরিক সহাবস্থানের ভিত্তিতে বিভেদের শেকড় সমূলে উৎপাটন করার কথা বলে। আম্বেদকর  দর্শণের এটাই সব থেকে বড় মূলধন। তার  Annihilation of the Caste কে অনুশরণ করে  কাঁসিরাম জি আওয়াজ তুললেন "জাতি তোড়ো সমাজ জোড়ো" 'জয় ভিম, জয় ভারত'। ১৯৮৪ সালে গঠন করা হল বহুজন সমাজ পার্টি। তিনি বললেন এটি একটি রাজনৈতিক মিশন। সমাজ পুনর্বিন্যাসের মিশন। সমাজ নর্বিন্যাসের পরিকল্পনা হবে "যার যত সংখ্যা ভারি,তার তত ভাগিদারী। ভিশন 'বহুজন হিতায়,বহুজন সুখায়'।

 কিন্তু জাত ব্যবসায়ীরা এতে বেজায় অখুশি। উল্টে তারা জাতপাকে রাজনীতির আঙিনায় নিয়ে আসার জন্য বহুজন সমাজ পার্টিকেই দায়ী করতে লাগলেন। ব্যপারটা অদ্ভুত!ভারতীয় বহুজন সমাজ জাতপাতের কারণেই বঞ্চনার স্বীকার । হিন্দু বর্ণ ব্যবস্থায় সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষকেই জাতের জাঁতাকলে সর্বহারা করা হয়েছে যুগ যুগ ধরে। জাতপাতকে ধর্মীয় মহিমা দিয়ে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ রাষ্ট্রীয় উৎপাদনের প্রায় সবটাই আত্মসাৎ করছে এটা অবশ্যই রাজনীতি। যে রাজনীতির পেষা কলে ফেলে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষকে শুধু সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়নি,মর্যাদাহীন করে পশুসুলভ জীবন যাপন করতে বাধ্য করা হয়েছে।    
বঞ্চিতের আত্ম বিকাশের অন্তরায়,শোষণ যন্ত্রের এই জগদ্দল পাথরটাকে গুড়িয়ে দেওয়াই আম্বেদকরের মিশন । এই মিশন "Survival for the fittest"নয় । নয় বেঁচে থাকার জন্য শধুই লড়াই এর উন্মত্ত রণহুঙ্কার। বা প্রতিশোধ পরায়ণ ক্ষমতা দখলের দস্তাবেজ ।  যে লড়াইয়ের অন্য প্রান্তে অবস্থান করে শ্রেণী শ্ত্রু।
যাকে রণনীতি বা রণকৌশলের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে পরাভূত করে প্রোলেতারিয়েতের শাসন কায়েম করতে হয় ।
এই আদিম হিংস্র মানবিকতার বৈদেশিক ব্যখ্যা আম্বেদকরবাদে জায়গা পায়নি। বরং পরম মিত্রতা বা ভাইচারাই চিরস্থায়ী ভাবে বৈরিতার অবসান ঘটাতে পারে, ভারতীয় দর্শনের এই অমর বাণী তিনি মেনে নিলেন।“NAHI BERENA BERANI SAMANTIDHA KUDACHANANG. ABERENA CHA SAMMANTI ESO DHAMMO SANATANO”।