Pages

Saturday 7 November 2020

খুন, সন্ত্রাস এবং যৌনতার উৎসব কালীপূজা

 

খুন, সন্ত্রাস এবং যৌনতার উৎসব কালীপূজা    

শরদিন্দু বিশ্বাস, কোলকাতা  

 

বাংলায় দুর্গাপূজা এবং কালীপুজার মত এমন নৃশংস নরহত্যার ধর্মীয় আয়োজন করে ব্রাহ্মণবাদীরা কি প্রচার করতে চাইছেন না যে তাঁরা এখনো মনেপ্রাণে অসুর (আদিবাসী-মূলনিবাসী) বিদ্বেষী ? তাঁরা এখনো ঘৃণা এবং হত্যার নীতিতে বিশ্বাসী! তাঁরা এখনো বঙ্গবাসীকে হত্যার যোগ্য মনে করেন? তা না হলে ধর্মের নামে এমন গণহত্যার পরিকল্পনা করা যেত কী ?  আদিবাসী-মূলনিবাসীর প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ, সন্ত্রাস এবং ধ্বংসের পরিকল্পনা না থাকলে কেন তাঁরা ধর্মের নামে, প্রশাসনের মাধ্যমে এমন ঢালাও প্রদর্শনের জন্য রাজকোষের অর্থ এবং রাষ্ট্রীয়শক্তির প্রয়োগ করছেন? দুর্গা-কালি পূজার নামে ঢালাও মদের যোগান, অসাংবিধানিক উপায়ে বিশেষ কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য অর্থ বরাদ্দ এবং এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কার্নিভালের উন্মত্ততায় পর্যবসিত করা কী  ইঙ্গিত বহন করে ! এটা কী কোন বিকারগ্রস্থতা না দাসত্বের শৃঙ্খল? এটা কী ধর্মীয় ভাবাবেগ না গণহত্যার  প্রস্তুতি। যাতে প্রলয়ের কালে গোটা আদিবাসী-মূলনিবাসী সমাজকে দুষ্কৃতি হিসেবে দাগিয়ে  দিয়ে কচুকাটা করা যায় এবং চন্ড(চন্ডাল), মুন্ডের (মুন্ডা, যারা বঙ্গে সমস্ত আদিবাসীদের গোড়া) কাটা মাথার মালা পরিয়ে করালবদনী কালীর অভিষেক করা যায়!

 এমন জিঘাংসাএমন উন্মত্তা ভেদ নীতির সগর্ব আয়োজন পৃথিবীর কোন সুসভ্য দেশে খুঁজে পাওয়া দুরূহ! বলা বাহুল্য যে, ব্রাহ্মণ সমাজের জন্যই এই আদিম হিংস্র  বীভৎস ঘৃণা এবং হত্যার ধর্মীয় আবেগ সগৌরবে পালিত হচ্ছে এবং এই ঘৃণাকেই ভারতীয় পরম্পরার সাথে যুক্ত করার চেষ্টা শুরু হয়েছে!  

 বাংলা এখন বর্বরতার আঁতুড়ঘর

আদিম হিংস্রতা, বর্বরতা পৈশাচিক প্রবৃত্তি নরতত্ব, সমাজতত্ব মনোবিজ্ঞানের একটি   বিরলতম অধ্যায়। মানুষের জিনোটাইপ ফিনোটাইপের আড়ালে এগুলি কি ভাবে প্রচ্ছন্ন হয়ে আছে তাও গবেষণাগারের সিরিয়াস পরীক্ষা নিরীক্ষার চ্যাপ্টার। পৃথিবীর বিবর্তনের কারণেই হোক বা গতিজাড্যের কারণেই হোক হোমোইরেক্টাস যুগের আদিম বর্বর মানসিকতা সম্পন্ন মানব প্রজাতি বাংলায় কিন্তু কেন্দ্রীভূত হয়েছে এবং যোগ্যতম  প্রজাতি হিসেবে এই বিশেষ শ্রেণির মানুষেরা তাদের বিরলতম প্রতিভা এবং স্বভাবটি ধরে রেখেছে তাদের আচার, বিচার ধর্মীয় আচরণের মাধ্যমে নিঃসন্দেহে একটি প্রজাতির ক্ষেত্রে এটি একটি প্রবল গুন। লক্ষণীয় বিষয় এই যে, হিংস্রতার এই প্রবল গুনটি তারা অন্য প্রজাতির মধ্যেও সঞ্চারিত করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে প্রবৃত্তিটি মানব মজ্জায় ঢুকে গিয়ে একটি স্থায়ী স্বভাবে রূপান্তরিত হয়ে পড়েছে। বিস্তার লাভ করেছে এবং মূলাধারটি জৈব বৈচিত্রের (জাত ব্যবস্থা) আড়ালে সুরক্ষিত হয়ে আছে। এহেন দুর্লভ, বিরল আদিম হিংস্র বিষয়টির জন্যই সম্ভবত বাংলা একসময় গোটা পৃথিবীর গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে চলেছে।  বাংলায় কালীপুজা নামে নরহত্যার এক ভয়াল ধর্মীয় আয়োজন দেখলেই সহজে অনুমান করা যাবে যে কী বীভৎস জিঘাংসার বিষ বহন এবং বপন করে চলেছে ব্রাহ্মণ সমাজ!       

কালীপূজা এক বীভৎসতার প্রজেকশন?  

হাতে ঝুলছে কাঁটা নরমুণ্ড খড়্গ থেকে ঝরে পড়ছে টাটকা রক্ত নরমুণ্ডুগুলি থেকে ঝরে পড়া রক্ত পান করছে পিশাচ শৃগাল ইতিউতি পড়ে আছে পুরুষের মুণ্ডহীন ধড়। তিনি "কালী করাল বদনী, অসি, পাশধারিণী, বিচিত্র খট্বাঙ্গধারিণী, নরমুণ্ড ভূষিতা। তিনি ব্যাঘ্র চর্ম পরিহিতা, শুষ্ক মাংস ভৈরবীরূপিণী বিস্তৃত বদনা, লোল জিহ্বা, ভীষণা লকলকে জিভ দিয়ে চেটেপুটে পান করছেন সেই রক্ত! চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকা শিবের(ঈশ্বর) বুকের উরপ পা তুলে এই তাণ্ডব নর্তন বীভৎসতার প্রতীক নয়। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয় উল্লাস। হ্যা, এমনটাই মেনে নিতে হবে। নতুবা মান-সম্মান-মুণ্ডু সবটাই যাবে।  

 দুর্গা এবং কালী নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করলেন কেন  ব্রাহ্মণ সমাজ?

ঋগ্বেদে পৃথ্বী, অদিতি, দিতি, নিস্তিগ্রি,  ইন্দ্রাণী, ঊষা, সূর্যা, আগ্নেয়ী, বরুণানী, রোদসী, রাকা, সিনিবলী, শ্রদ্ধা, আরমতি, অপ্সরা, সরস্বতী এমন বেশ কিছু দেবীর উল্লেখ আছে কিন্তু দুর্গা এবং কালীর উল্লেখ নেই। অর্থাৎ দুর্গা এবং কালীর অস্তিত্ব বেদ স্বীকার করেনা। দুর্গা-কালী সহ আরো বহু দেবীর উল্লেখ পাই সপ্তম শতকের পর পৌরাণিক যুগে। এরা হলেন- দেবী, সতী, অম্বিকা, পার্বতী, হৈমবতী, গৌরী, কালী, নিরীতি, চন্ডী, কাত্যায়নী, দুর্গা, দশভূজা, সিংহবাহিনী, মহিষাসুরমর্দিনী, জগ্ধাত্রী, মুক্তকেশী, তাঁরা, ছিন্নমস্তা, অন্নপূর্ণা লক্ষ্মী। এদের কার যে কখন জন্ম, কে যে এদের পিতামাতা, কে যে এদের শয্যাসঙ্গী তার ঠিক ঠিকানা নেই। ব্রাহ্মণ পুরোহিতেরা অনেক সময় উমা, পার্বতী, গৌরী, তাঁরা, অম্বিকাদের দেবীর বিভিন্ন নাম হিসেবে প্রচার করে থাকেন। এ আর এক ধরণের চাতুরী। গৌরী , গিরি রাজার কন্যা। শিবের স্ত্রী। তিনিই আবার উমা! পার্বতী দক্ষ রাজার কন্যা। তিনিও শিবের স্ত্রী।  মহাভারত অনুসারের দুর্গা হলেন গোয়ালা নন্দ ঘোষ এবং যশোমতীর কন্যা। তিনি  মহামায়া। অসুর কন্যা দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান হিসেবে কৃষ্ণের জন্ম হলে বসুদেব তাকে নন্দের বাড়িতে রেখে আসে এবং নন্দের কন্যাকে দেবকীর কাছে নিয়ে আসে। 


এই কাহিনীগুলি থেকে অনেকে মনে করতে পারনে যে দুর্গা, কালী, উমা, পার্বতী প্রভৃতি চরিত্রগুলি সুপরিকল্পিত ভাবে তৈরি নয়। মনে করতে পারেন যে এই চরিত্রগুলির মধ্যে নানা বিভ্রান্তি থেকে গেছে। আসলে এই বিভ্রান্তির মধ্যে পাঠককে আটকে রাখাই ব্রাহ্মণবাদী কারসাজী। একটা মস্তবড় ধাঁধাঁ। দেবদেবীর নামে, ধর্মের নামে মানুষকে স্থায়ী ভাবে প্রহেলিকার মধ্যেই ঠেলে দিতে চায় ব্রাহ্মণ সমাজ।

কালীকে নিয়ে এই হেঁয়ালি কে

মহাভারতে অর্জুণের স্তবের মধ্যে দুর্গা এবং কালীকে একই দেবী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। লিঙ্গপুরাণ আবার উল্টো কথা বলে। এখানে দুর্গা এবং কালী স্বতন্ত্র দেবী।   

মার্কণ্ডেয় পুরাণে “দেবীমাহাত্ম” নামে একটি অধ্যায় আছে। এই অধ্যায় বলা হয়েছে যে, শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামে দুইজন অসুর পুরন্দরকে পরাজিত করে তাঁর ইন্দ্রত্ব (রাজা উপাধী) কেড়ে নেয়। সূর্য, চন্দ্র, বরুণ, কুবের, যম, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর সকলের শক্তি হরণ করে দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে। দেবতাগণ তখন দুর্গাকে স্মরণ করে। দুর্গা তখন নির্বস্ত্রা, পীনবক্ষা, কামিনী, অম্বিকারূপ ধারণ করে গঙ্গাজলে স্নান করছিল। শুম্ভ ও নিশুম্ভের দুই সহচর চন্ড এবং মুণ্ড এই কামিনী নারীর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে তাঁদের রাজার সাথে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। অম্বিকা এই প্রস্তাব মেনে নেয়। সর্ত একটাই। যে তাঁকে যুদ্ধে পরাজিত করতে পারবে তাঁরই  শয্যাসঙ্গিনী হবে অম্বিকা। চন্ড ও মুণ্ড দ্রুত শুম্ভের নিকট এই বার্তা পৌঁছে দিলে শুম্ভ ধুম্রলোচন নামে এক সেনাপতিকে এই নারীর চুলের মুঠি ধরে নিয়ে আসতে আজ্ঞা দেয়। ধুম্রলোচন দেবীকে ধরতে গেলে শুরু হয় যুদ্ধ। দেবী ধুম্রলোচনকে হত্যা করলে চন্ড ও মুণ্ড বিশাল সৈন্য নিয়ে দেবীকে আক্রমণ করে। অম্বিকা তখন ভয়াল মূর্তি ধারণ করে। রাগের চোটে তাঁর কপাল থেকে বেরিয়ে আসে আর এক দেবী। ইনি করালবদনা  কালী। শীর্ণকায়া দেবী। ব্যাঘ্রচর্ম পরিহিতা, লোলজিহ্বা, গলায় মুণ্ডমালা। জবাফুলের মত রক্তবর্ণ চোখ। বিকৃতবয়ান, অসি পাশ খট্টাঙ্গাদি ধারণ করে এই কালী হাতি, ঘোড়া, সোইন্যদের ধরে ধরে গিলতে থাকে। এই কালী তাঁর খড়গাঘাতে চন্ড ও মুণ্ডকে হত্যা করে তাই তাঁর আর এক নাম চামুণ্ডা( মার্কণ্ডেয় পুরাণ/দেবীমাহাত্ম/৮৭ অধ্যায়)

মহামায়া শীঘ্রই শত্রুদের ধ্বংস করে ফেললেন। তখন শুম্ভ ও নিশুম্ভের প্রধান সেনাপতি রক্তবীজ সমস্ত সৈন্য ধ্বংস হতে দেখে নিজেই দেবীর সামনে এসে উপস্থিত হলেন। যদিও দেবী তাঁকে আঘাতে আঘাতে হতবুদ্ধি করে দেন, তবুও দেখা যায় যে, মাটিতে পড়ে যাওয়া তাঁর প্রতিটি রক্তবিন্দু থেকে জন্ম নিল আরো এক হাজার দৈত্য। শক্তিতে যারা স্বয়ং রক্তবীজের তুল্য। সুতরাং অচিরেই অসংখ্য দৈত্য দুর্গাকে ঘিরে ফেলল। এই বিস্ময়কর দৃশ্য দেখে দেবতারা ভয়ে কাঁপতে লাগল। অবশেষে চন্ডী নামে এক দেবী যিনি যুদ্ধে দুর্গাকে সাহায্য করছিলেন, প্রতিজ্ঞা করলেন যে, কালী যদি দৈত্যের রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই পান করেন, তা হলে তিনি দৈত্যের সঙ্গে লড়বেন এবং তাঁর সমস্ত সৈন্যকে ধ্বংস করবেন। সে কাজ করতে কালী সম্মত হলেন। এই ভাবে সেনাপতি রক্তবীজ এবং তাঁর সেনাবাহিনী শীঘ্রই ধ্বংস হল ( হিন্দু ধর্মের হেঁয়ালি/ বি আর আম্বেদকর/ ১১৩)              

 সপ্তম শতকে মহাকবি বানভট্ট তাঁর “চন্ডীশতক” নাটকে এই কাহিনী বর্ণনা করেছেন।

মৎসপুরাণে আবার অন্য একটি কাহিনী পাওয়া যায়। এই কাহিনী অনুসারে অন্ধক নামে এক অসুর শিবের সঙ্গে পার্বতীর অন্তরঙ্গ অবস্থান দেখে তাঁকে হরণ করার জন্য যুদ্ধ শুরু করে। শিব পাশুপাত বানে এই দানবকে বিদ্ধ করলে তাঁর রক্ত থেকে অসংখ্য বীরের সৃষ্টি হয়। এই বীরদের রক্তশ্রোত থেকেও জন্ম নেয় হাজার হাজার মায়াবী অন্ধকাসুর। শিব তখন এই রক্তশ্রোত পান করানোর জন্য অগণন মাতৃকাগণের সৃষ্টি করে। এই মাতৃকা গণের মধ্যে কালী, মহাকালী, চামুণ্ডা, মহেশ্বরী, শঙ্করী, শ্যামা, মেনকা, রম্ভা উল্লেখযোগ্য। অর্থাৎ শিব হল  এই রক্ত খেকো মাতৃকাগণের জন্মদাতা। (আদি মৎস পুরান/৯৯ ওধ্যায়/২৫১)

হাঁড়ির মেয়ে চন্ডী ? 

বাংলার “ময়নামতি” লোকসাহিত্যে চণ্ডীকে "হাঁড়ির ঝি" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ঐতিহাসিকেরা মনে করেন যে, বাংলায় ব্রাহ্মণ অনুপ্রবেশ ঘটার আগে হাঁড়ি সমাজই পূজার দায়িত্ব পালন করতেন। আর এই হাঁড়ি সমাজের মেয়েই চন্ডী। তিনি তাঁরা, শীতলা, মনসার মতই লোকসমাজে পূজিতা হতেন।   
ওঁরাও আদিবাসীদের মধ্যেও এই চন্ডী পূজা করার প্রচলন আছে। আমাবস্যার রাতে ওঁরাও যুবক উলঙ্গ হয়ে এই চণ্ডীর পূজা করেন। 
চন্ডাল সমাজের মধ্যে কুলাই চণ্ডীর বা কুলাই পূজার প্রচলন আছে। এই পূজায় নারীরাই পূজার পরিচালিকা।     

 দুর্গা ও কালীর মাধ্যমে যৌনতার প্রচার করলেন কেন ব্রাহ্মণ সমাজ?        

কালিকা পুরাণে কালীকে কামেশ্বরী, কামপ্রদায়িনী, পঞ্চরসে কামিনী, শ্রীকামা, গুপ্তকামা, বিন্ধবিলাসিনী, যোনিরূপিনী, কামদা, কামধেনু, লিঙ্গধারিণী, ললিতা, মাতঙ্গিনী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কামকেলীকে শুধুমাত্র গ্রন্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি ব্রাহ্মণ সমাজ। তাঁরা ধর্মের নামে, দেবদেবীর নামে এই যৌনতাকে সমাজের মধ্যেও ছড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা করলেন। এই যৌনতাকে সার্বজনীন করার দিকে যে গ্রন্থ দুটি সব থেকে বড় ভূমিকা নিয়েছিল তা বিদ্যাপতি রচিত কালিকা পুরাণ এবং বৃহদ্ধর্ম পুরাণ।                                       

 বিদ্যাপতি কালীকা পুরাণে শবরোৎসবের উদাহরণ দিয়ে উল্লেখ করেছেন যে,  ‘কুমারী, বেশ্যা, নর্তকীদের নিয়ে শঙ্খ, তূর্য, মৃদঙ্গ, ঢোল বাজিয়ে বহুবিধ ধ্বজা বস্ত্র সহ খৈ, ফুল ছড়িয়ে, পরস্পরের প্রতি ধুলো কাঁদা ছিটিয়ে ক্রীড়া কৌতুক গান করতে করেতে যাত্রা করবে। ভগলিঙ্গ প্রদর্শনপূর্বক,   যৌনউত্তেজক গান এবং তদৃশ্য বাক্যালাপ করে আনন্দ করবে, এই সময় যে ব্যক্তি অশ্লীলতা ভালোবাসেনা বা নিজেও অপরের বিরুদ্ধে এরূপ শব্দ ব্যবহার করেনা ভগবতী রুষ্ট হয়ে তাকে শাপ দেবেন এবং বিনাশ করবেন

 বৃহদ্ধর্ম পুরাণেও এই শবরোৎসবের বর্ণনা আছেঃ

ভগ লিঙ্গাভিধানৈশ্চ শৃঙ্গার বচনৈ স্তথা

গানং কার্যং ভোজয়চ্চ ব্রাহ্মনাৎ স্তোষয়েস্ত্রিয়া

(  বৃহদ্ধর্ম পুরাণ ২২ অধ্যায় ২০-৩০পৃ)
অর্থাৎ  যোনি দ্বারা, লিঙ্গ দ্বারা, শৃঙ্গার বচন, গান, কাজ, ভোজন দ্বারা নারীরা  ব্রাহ্মণকে তুষ্ট করবেন। এবং সেটি না করলে এই দেবী রুষ্ট হয়ে অভিশাপ দেবেন।

বৌদ্ধ তাঁরা মায়ের প্রভাব খর্ব করতে ব্রাহ্মণরা নির্মাণ করলেন কালী ?   

বোধিসত্ত্ব তারাছিলেন গোতমা বুদ্ধের মতই সর্বোচ্চ জ্ঞানের অধিকারিণী। তিনি ছিলেন সর্বমান্য করুণার প্রতীক। ঐতিহাসিকেরা মনে করেন এই তাঁরা চীন দেশ থেকে এসে বুদ্ধের অনুগত হন এবং বোধিসত্ত্ব লাভ করেন। অনেক ঐতিহাসিকেরা মনে করেন যে তিনি ভোট বা তিব্বত থেকে এসে বুদ্ধের করুণা লাভ করেছিলেন। পূর্ব ভারত, চীন, মায়ানমার, জাপান সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ দেশেই তাঁরা বোধিসত্ত্ব হিসেবে পূজিতা হন।      

তাঁরা ছিলেন কালচক্কযানের প্রবক্তা। কালচক্কযান সৌরবর্ষ এবং চন্দ্রবর্ষের একটি সমন্বয়। ” The internal Wheel of Time is concerned with the human body, including its energy system. The alternative Wheel of Time includes the doctrine, path and initiations of  Kalachakra, its circular Mandala abode, and its results.

সর্ব সত্তার মঙ্গল কামনাই হল এই কালচক্কযানের মূল উদ্দেশ্য। এই কালচক্কযানকে একেবারে কালি পূজাতে পরিবর্তিত করে যৌনতা ও হিংস্রতা রূপান্তরিত করে মা তাঁরাকে মুছে দেবার চেষ্টা করল ব্রাহ্মণ সমাজ। দেবানামৃতং তদিয়ং কৌলিকী সুরা” (মাতৃকা ভেদতন্ত্র, ৩য় পটল) কৌলিকী সুরাপানই(দিশি মদ) ব্রাহ্মণত্বের প্রধান কারণ বলে বর্ণিত হল। দেব প্রসাদের মত মদ-গাঁজা, সিদ্ধি-ভাং চুল্লু-তাড়ির নেশা দিয়ে জনগণকে বুদ করে ব্রাহ্মণেরা এই বাংলায় নিজেদের সুরক্ষিত করল?  

 

ভাবীকালের গবেষকেরা নিশ্চয়ই এই বিষয় নিয়ে বিস্তর পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন। ম্যান মিউজিয়ামের এমন উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে বাংলা সেদিন হোমো- ইরেক্টাস জামানার আদিম হিংস্রতার জন্য বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেবে। কিন্তু ততদিন তো চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে কালিকা পুরাণের সাজেশন। তাইতো আবেগ মোহিত গলায় প্রশাসনিক কর্ত্রীর গলায় চণ্ডী পাঠের ফোয়ারা ছোটে। কোল্লামখুল্লা প্রোমোদের জন্য মদ, গাঁজা, চুল্লুর ঢালাও জোগানের ফরমান জারি হয়। বেশ্যাবৃত্তির জন্য ধার্য হয় মাসোহারা। জনগণের টাকায় ব্রাহ্মণবাদের এমন প্রয়োগ সত্যি বিরল এক নমুনা! 
গ্রন্থ সূত্র ঃ 

১) ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ  
২) মার্কণ্ডেয় পুরাণ
৩) কালীকা পুরাণ

৪) দেবী পুরাণ
৫) হিন্দু ধর্মের হেঁয়ালি, ডঃ বি আর আম্বেদকর

৬) The Roots of Bengali Culture / Samaren Roy
৭) বাঙালীর ধর্ম ও সমাজ/ যতীন্দ্র চট্টোপাধ্যায়