Pages

Thursday 28 April 2016

কমরেড কান্তি বিশ্বাস স্মরণে ঃ যুদ্ধ পরিস্থিতি - judhho poristhiti Yesterday at 4:37am


১৯৭৭ সাল। পশ্চিমবঙ্গে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে গঠিত হলো প্রথম বামফ্রন্ট সরকার। আরও অনেকের মতনই সিপিআই(এম) প্রার্থী হিসেবে জিতে এলেন কমিউনিষ্ট নেতা কমরেড কান্তি বিশ্বাস। জ্যোতি বসু কে মূখ্যমন্ত্রী হিসেবে সামনে রেখে গঠিত হলো বামফ্রন্টের ক্যাবিনেট। সেই ক্যাবিনেটে নেই কোন নিম্নবর্ণের প্রতিনিধি। কমরেড কান্তি বিশ্বাস এই ব্যাপারটা পার্টির দৃষ্টিগোচর করলেন। বাম আন্দোলনে তখনো শ্রেনীর প্রশ্ন সামনের সারিতে, জাতের প্রশ্ন নিয়ে তখনও তারা মাথা ঘামাচ্ছেন না। তাই এই ব্যাপারটিকেও খুব একটা গুরুত্ব দিলেন না হয়তো। কান্তি বিশ্বাস কে ক্যাবিনেটে নেওয়া হলো, কিন্তু তিনি হলেন পোর্টফোলিও ছাড়া মন্ত্রী। ক্ষোভে পদত্যাগের কথা বললেন তিনি। তার ক্ষোভ প্রশমিত করতেই তাকে যুবকল্যাণ এবং স্বরাষ্ট্র (পাসপোর্ট) দপ্তরের ভার দেওয়া হলো।
১৯৮২ সাল। আবার ভোটে জিতে দ্বিতীয় বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হলো। এবার কান্তি বিশ্বাস ক্যাবিনেটে জায়গা পেলেন স্কুল শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে। এবং এর পরেই 'শিক্ষিত' এবং 'প্রগতিশীল' বাঙালি সমাজের মধ্যে আলোড়ন উঠলো। সেই সময়কার সংবাদপত্রে মধ্যবিত্ত বাঙালিরা চিঠি লিখতে শুরু করলেন - কেন একজন 'চন্ডাল', 'নিম্নবর্ণ' কে শিক্ষামন্ত্রী করা হয়েছে। একদিন প্রমোদ দাসগুপ্ত কান্তি বিশ্বাস কে ডেকে ওনাকে ৪০০ র বেশি চিঠি দেখালেন, যা সিপিআই(এম) এর রাজ্য সম্পাদক হিসেবে প্রমোদ দাসগুপ্ত কে উদ্দ্যেশ্য করে লেখা। সেই চিঠি যারা লিখেছেন, তাদের মধ্যে পার্টির সমর্থকরাও আছেন। প্রতিটি চিঠির বিষয়ই এক - একজন নিম্নবর্ণের মানুষকে কেন শিক্ষামন্ত্রী করা হয়েছে? রাজ্যের শিশুদের শিক্ষার দায়িত্ব কিভাবে একজন চন্ডালের হাতে ছাড়া যায়? প্রয়োজনে ওনাকে আরও বেশি দায়িত্ব দিয়ে অন্য দপ্তরে সরিয়ে দেওয়া হোক, কিন্তু শিক্ষার মতন একটা দপ্তর কিছুতেই একজন চন্ডালের হাতে দেওয়া যায় না।
না, কান্তি বিশ্বাসকে তার দপ্তর থেকে সরানো হয়নি। ঢাকা ইউনিভার্সিটির স্নাতক এই 'চন্ডাল' ২০০৬ অবধি একের পর এক বামফ্রন্টের ক্যাবিনেটের স্কুলশিক্ষামন্ত্রী ছিলেন - স্কুলশিক্ষার ক্ষেত্রে বামফ্রন্টের যদি এতটুকুও সাফল্য থেকে থাকে, তা একান্তই কমরেড কান্তি বিশ্বাসের অবদান।
২০০০ সাল। সব রাজ্যের স্কুল শিক্ষামন্ত্রীদের নিয়ে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে একটি সম্মেলন হচ্ছে। 'ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক' নিয়ে আলোচনা। কংগ্রেস এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো থেকে আসা শিক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে তুমুল দ্বন্দ্ব। বিজেপি চেষ্টা করছে স্কুলের সিলেবাসে সুচতুর ভাবে তাদের হিন্দুত্ববাদের এজেন্ডা প্রবেশ করানোর। বিরোধিদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কান্তি বিশ্বাস। উনি সওয়াল করছেন আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত সিলেবাসের পক্ষে। হঠাত রেগে গেলেন কেন্দ্রের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী, বিজেপির সাংসদ মুরলিমনোহর যোশী। উঠে দাঁড়িয়ে বললেন - আমি কান্তি বিশ্বাস কে সম্মান করি। ওনার মতন জ্ঞানের ব্যাপ্তি অন্য কোন শিক্ষামন্ত্রীর নেই। কিন্তু একইসাথে আমি ওনাকে ঘৃনা করি, কারন উনি একজন বাঙালি ব্রাহ্মন হয়েও তফসিলি জাতির সার্টিফিকেট নিয়ে নিম্নবর্ণ সেজে থাকেন।
কান্তি বিশ্বাস অবাক হয়ে বললেন - আমি ব্রাহ্মন, এই কথা আপনাকে কে বললো?
যোশী বললেন - ব্রাহ্মন না হলে আপনি শিক্ষাক্ষেত্রে এত মেধাবী এবং এত জ্ঞানী হলেন কি করে?
কান্তি বিশ্বাস প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন - আপনার ধারনা একজন নিম্নবর্ণ শিক্ষায় মেধাবী হতে পারে না। এ আপনার বর্ণবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
বিগত কয়েকদিন ধরে আমরা যে স্লোগানগুলো নিয়ে চর্চা করছি - ব্রাহ্মন্যবাদ সে আজাদি, মনুবাদ সে আজাদি - সেই স্লোগানগুলো যে লড়াইয়ের কথা বলে, সেই লড়াইয়ের সামনের সারির সৈনিক ছিলেন কান্তি বিশ্বাস। এই ব্রাহ্মন্যবাদ বা মনুবাদের ধারক ও বাহক যেমন বিজেপি এবং গোটা সংঘ পরিবার, তেমনই এর ওপর একচেটিয়া দাবি শুধু তাদের না। সমস্ত রাজনৈতিক দল, সমাজের সমস্ত স্তরে, এমনকি কমিউনিষ্ট এবং বামপন্থীদের মধ্যেও এই ব্রাহ্মন্যবাদ এবং মনুবাদ বিরাজমান। আমরা যখন এর থেকে আজাদি চাই, তখন আসলে আমরা নিজেদের মননে এবং চেতনায় লুকিয়ে থাকা 'prejudice' এর সাথে লড়াই করছি। এবং এই লড়াই চিরন্তন, আমাদের প্রত্যেকের জীবনের শেষদিন অবধি এই লড়াই চলবে। তাই শুধু বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদীরা নয়, এই লড়াই নিজেদের সাথেও লড়তে হবে আমাদের। শ্রেনী আন্দোলন হাত ধরবে বর্ণ আন্দোলনের - আজ নীল রঙ মিশবে লাল রঙ এর সাথে - সেটাই হবে ব্রাহ্মন্যবাদ সে আজাদি!
২৭ এপ্রিল, ২০১৬ - মারা গেলেন কমরেড কান্তি বিশ্বাস।
লাল সেলাম!
জয় ভীম!
(উপরোক্ত ঘটনাবলী এবং তথ্য কমরেড কান্তি বিশ্বাসের আত্মজীবনী 'আমার জীবনঃ কিছু কথা' থেকে নেওয়া)

 https://www.facebook.com/juddhoporisthiti/posts/1179460518750840?fref=nf

Monday 25 April 2016

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ও বাবা সাহেব ডঃ বি আর আম্বেদকর



শরদিন্দু উদ্দীপন
সোনারপুর, কলকাতা।

“এমন দিন আসবে যখন আমাদের নিরবতা (ফাঁসি) তোমাদের লড়াইয়ের আওয়াজ থেকেও অধিকতর শক্তিশালী হবে”
১৮৮৬ সালের ৭ই অক্টোবর ফাঁসির আগে এ কথা শুনিয়ে ছিলেন  আগস্ট স্পাইজ । স্পাইজের এই ভাষণ মূলত মে দিবসের এক প্রামান্য দলিল যার থেকে আমরা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে পারি।
স্পাইজ বলেছিলেন। “ আমরা মানুষকে তাদের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে সামাজিক সম্পর্কের কথা জানাতে চেয়েছিলাম। মানুষ যে সামাজিক ব্যবস্থা, সামাজিক কানুন এবং পরিস্থিতির মধ্যে বাস করে আমরা তা বর্ণনা করেছিলাম। আমরা সামাজিক  অসাম্যের মূল কারণগুলি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সমীক্ষা করে প্রশ্নাতীত ভাবে মজুরী ব্যবস্থাকে শ্রমিকদের সামনে আনতে চেয়েছিলাম আমরা আরো  বলেছিলাম যে এই মজুরী ব্যবস্থা হল এমন একটি বিকাশ ব্যবস্থা যা যুক্তি গ্রাহ্য হবে, উন্নততর সভ্যতার পথ দেখাবে এবং সামাজিক সহযোগিতার ভিত্তি গড়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। এই তত্ত্ব বা পরিকল্পনা যা আমরা গ্রহণ করেছিলাম তা কেবলমাত্র পছন্দ ছিল তা নয়, ভবিষ্যৎ সমাজ ব্যবস্থার জন্যেও প্রয়োজনীয় ছিল। বর্তমান সামাজিক ব্যবস্থায় বিকাশের এই ঝোঁককে নৈরাজ্য বলে মনে হলেও এটি হবে সার্বভৌম রাজতন্ত্র ও শ্রেণীহীন সমাজ গঠনের প্রক্রিয়া যেখানে নিঃসন্দেহে স্বাধীনতা ও আর্থিক সমতার ভারসাম্য বজায় থাকবে এবং প্রাকৃতিক নিয়মের ভিত গড়ে দেবে”।
(Address of August Spies (October 7, 1886), From Voices of A People's History, edited by Zinn  and Arnove)         
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট হিসেবে বলা যায় যে, ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সময়কালে ঔপনিবেশিক ব্যবসাবানিজ্য, বিপুল পরিমাণ পুঁজি ও বৈজ্ঞানিক  আবিষ্কারের ফলে ইংল্যান্ড তথা ইউরোপের অর্থনীতিতে এক বিস্ময়কর পরিবর্তন সূচীত হয়েছিলএই সময় থেকেই প্রচলিত কৃষিকাজ থেকে রাষ্ট্র ক্রমশ শিল্পায়নের দিকে ঝুঁকে পড়তে থাকেশিল্পের হাত ধরেই সূচনা হয় পুঁজিবাদের।  শিল্পায়নের শর্ত হিসেবে পর্যাপ্ত পুঁজি এবং কাঁচামাল সাথে সাথে প্রয়োজন হয় সস্তা শ্রমিকের যোগান। ফলে শিল্প কারখানা স্থাপনের সাথে সাথে উৎপাদক বা শ্রমজীবী মানুষেরও সমাগম ঘটতে থাকে। পুঁজিবাদ যেহেতু মুনাফার নিরিখে বাঁধা তাই শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের থেকে উপর্যুপরি উৎপাদন এবং অধিক পরিমাণে মুনাফা হয়ে ওঠে পুঁজিপতিদের প্রধান লক্ষ্যউৎপাদনক্ষেত্রের পরিকাঠামোয় থেকে যায় নানা ত্রুটি। ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার খাটুনি, কম বেতন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, মহিলাদের জন্য অব্যবস্থা, দাসত্ব এবং অমানুষিক জীবনযাপনের এই ত্রুটি বিচ্যুতি ক্রমশ  অসন্তোষের জন্ম দেয়১৮৭২ সালে কানাডায় কলকারখানায় অব্যবস্থা, শ্রমিকদের জীবন ও অধিকার নিয়ে এক বিশাল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এই শোভাযাত্রার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৮৮৪ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক ৮ ঘণ্টা কাজের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। শ্রমিকরা তাদের দাবীগুচ্ছকে ১৮৮৬ সালের ১লা মে’র  মধ্যে কার্যকরী করতে হবে বলে মালিকপক্ষকে সময় বেঁধে দেন। কালাতিক্রান্ত হয়ে যাবার পরেও মালিকপক্ষ এই দাবীগুচ্ছ মেনে না নিলে শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করে। ১৮৮৬ সালের ৪ঠা মে বিশাল সংখ্যক শ্রমিক  শিকাগোর হেমার্কেট স্কোয়ারে জমা হয়ে মিটিং শুরু করেন। মিটিং এর শেষ পর্যায়ে আচমকা এক বোমা বিস্ফোরণে ৬৬ জন পুলিশকর্মী আহত হলে পুলিশবাহিনী শ্রমিকদের উপর হামলা শুরু করে এতে ১১জন শ্রমিক নিহত হয়। পুলিশবাহিনী অগাস্ট স্পীজ সহ ৮জন শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে এবং ৬ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ফাঁসির রায় শোনার পর স্পীজ আদালতের উদ্দেশ্যে যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন সেই বিবৃতিই মূলত মে দিবসের প্রামান্য দলিল।
১৮৯১ সালের আন্তর্জাতিক দ্বিতীয় কংগ্রেসে ১লা মে শ্রমিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
                                                           
দেশে দেশে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষার জন্য নানা আইন তৈরি হলেও পুঁজি নির্ভর অর্থনীতিতে মুনাফা লুন্ঠনের প্রবণতাও বেড়ে চলেছে দিন দিনসামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমতা  প্রতিষ্ঠার পথে এই প্রবণতা সবথেকে বড় অন্তরায়। অনিবার্য কারণেই আগ্রাসী অর্থনীতি ও অসাম্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠছে নানা দেশে নানা নামে। ঐতিহাসিক কারণেই অগাস্ট স্পীজের সেই মর্মবাণী শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার লাভের পথে এখনো অদম্য শক্তির উৎস স্পেনের ১৫এম মুভমেন্ট, অ্যামেরিকার ওকুপাই মুভমেন্ট, কানাডার এন্টি-কনজুমারিস্ট মুভমেন্ট এই সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অসাম্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শ্রমিক স্বার্থ রক্ষার জন্য এখনো যে স্থিতিশীল কিছু করে উঠতে পারেনি এই  আন্দোলনগুলি তার অন্যতম নিদর্শন।

বিশ্ব শ্রমিক দিবসে ডঃআম্বেদকরের প্রাসঙ্গিকতাঃ   
অধুনা অর্থনৈতিক বিকাশের সাথে সাথে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষার নীতি নির্ধারণে ডঃ বি আর আম্বেদকর অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন। আক্ষরিক অর্থে তিনি ছিলেন শ্রমজীবী বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি। ১৯৩৬ সালে তিনি "স্বতন্ত্র শ্রমিক পার্টি" গঠন করেন এবং মুম্বাইয়ের সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সালের এই নির্বাচনে তিনি ১৩ জন প্রার্থীকে সংরক্ষিত আসন এবং ৪ জন প্রার্থীকে সাধারণ আসন থেকে দাঁড় করান। এদের মধ্যে ১১ জন প্রার্থী সংরক্ষিত আসন থেকে এবং ৩ জন প্রার্থী সাধারণ আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশ ভারতে শ্রম দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯৪২ সালে আম্বেদকর ভাইসরয় এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের প্রতিনিধি হিসেবে শ্রমমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার  গ্রহণ করেন। শ্রমমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি যে সংস্কারমূলক আইন কানুন ও নীতি রুপায়নে মনোনিবেশ করেন তা যেন  অগাস্ট স্পীজের শোষণহীন ভারসাম্য যুক্ত সামাজিক ন্যায় বিচারেরই এক অবিকল প্রতিচ্ছবি। মে দিবসের গঠনতন্ত্রের সাথে সহমত পোষণ করে বাবাসাহেব আম্বেদকর তার সীমিত সময় কালের মধ্যে (১৯৪২-১৯৪৬) এমন কিছু নির্দেশিকা এবং আইন কার্যকর করেন যা শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও মর্যাদা ফিরে পেতে রক্ষাকবচের কাজ করে।  এক ঝলকে এই আইন, কানুন এবং নীতিগুলি দেখলেই বোঝা যায় কী পরম মমতার সাথে আম্বেদকর শ্রমজীবী সাধারণ  মানুষের ক্ষময়য়ন ও অস্তিত্ব রক্ষায় ব্রতী ছিলেন।    
শ্রমমন্ত্রী হিসেবে আম্বেদকরের সংস্কারঃ
·         ১৯৪২ সালের ২৭শে নভেম্বর ইন্ডিয়ান লেবার কনফারেন্সের ৭ম অধিবেশনে একটি নির্দেশ জারি করে
·         ১২-১৪ ঘণ্টা কাজের পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা করা হয়।
·         মেটার্নিটি বেনিফিট অ্যাক্ট 
·         ওমেন লেবার ওয়েলফেয়ার ফান্ড
·         ওমেন এন্ড চিলড্রেন লেবার প্রোটেকশন অ্যাক্ট
·         মহিলাদের ভূগর্ভে কয়লা খনিতে কাজ করা বন্ধ করেন
·         ইন্ডিয়ান ফ্যাক্টরি অ্যাক্ট
·         ন্যাশনাল এমপ্লয়মেন্ট এক্সেঞ্জ
·         এমপ্লয়ীস স্টেট ইন্সিওরেন্স (ইএসআই)
·         ইন্ডিয়াস ওয়াটার পলিসি এন্ড ইলেকট্রিক পাওয়ার প্লানিং
·          ডিয়ারনেস আলাউন্স (ডিএ) টু ওয়ার্কার
·         রিভিশন অব স্কেল অব পে ফর এমপ্লয়ীস
·         কোল এন্ড মাইকা মাইন প্রোভিডেন্ড ফান্ড, ১৯৪৬
·         লেবার ওয়েলফেয়ার ফান্ড, ১৯৪৪
·         পোষ্ট ওয়ার ইকনোমিক প্লানিং
·         ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ল
·         ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন (আমেন্ডমেন্ট) বিল, ১৯৪৩
·         দামোদর ভ্যালি প্রজেক্ট এন্ড হিরাকুদ প্রজেক্ট, ১৯৪৫
·         হেলথ ইন্সিওরেন্স স্কিম
·         প্রোভিডেন্ড ফান্ড অ্যাক্ট
·         ফ্যাক্টরি আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট
·         লেবার ডিস্পিউট অ্যাক্ট
·         মিনিমাম ওয়েজেজ
·         লিগাল স্ট্রাইক অ্যাক্ট       

এই সমস্ত সংস্কারমূলক কাজগুলিকে বাবাসাহেব আম্বেদকর পরবর্তীকালে ভারতীয় সংবিধানে সমন্বিত করেছিলেন যাতে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ একটি শক্ত রক্ষা কবজ পায়। মে দিবসের গঠনতন্ত্রের সাথে ভারতীয় প্রেক্ষাপটটি যুক্ত করে  বাবা সাহেব বলেছিলেন, প্রাচীন কাল থেকেই ভারতের শ্রম বিভাজন স্থায়ী ভাবে জাত নির্ভর যা প্রগতির পথে অন্তরায় এবং ধ্বংসাত্মক। শিল্প গতিশীল। শিল্পের প্রগতির কারণেই শ্রমিককে তার জাতপাত থেকে অবশ্যই মুক্ত থাকতে হবে। যদি হিন্দু জাতি ব্যবস্থায় এই পরিবর্তন সাধিত না হয় তবে শিল্প ক্ষেত্রে ব্যাপক কর্মহীনতা তৈরি হবে। তিনি অনবদ্য দক্ষতায় ভারতীয় সংবিধানে জাত ব্যবস্থার সমস্ত সমস্যার নিরসন করে শ্রমজীবী মানুষের জীবনকে সুরক্ষিত করেছেন এবং মানুষকে মর্যাদার দিক থেকেও একাত্ম করার চেষ্টা করেছেন। মানুষের আত্মমর্যাদার এই একিকরণের প্রয়াস নিঃসন্দেহে সার্বভৌম সমাজতন্ত্র গড়ে তোলার পক্ষে এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ যা মে দিবসের ভাষণে আগস্ট স্পাইজের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল।     
গত ৬ই ডিসেম্বর বাবা সাহেব ডঃ বি আর আম্বেদকরের মহাপরিনির্বাণ দিবসে দিল্লীর বিজয় ভবনে   লেবার এন্ড এমপ্লয়মেন্ট মিনিস্ট্রি আয়োজিত  এক অনুষ্ঠানে নোবেল বিজয়ী মাননীয় কৈলাস সত্যার্থী তাই যথার্থ বলেছেন, “It was because of Babasahebs farsightedness that most of the critical labour issues including forced labour, maternity benefit for women and working conditions were discussed and included in the Constitution of India when a large majority of the world was still discussing the means to address these issues”.


তত্ত্ব সূত্রঃ  
1.       Address of August Spies (October 7, 1886), From Voices of A People's History, edited by Zinn  and Arnove
2.      Progress of Industrial Revolution in England : History of Europe (1789-1945), J.N ghosh and Sons
3.      The Doctor and the Saint Ambedkar, Gandhi the battle against caste by Arundhuti Roy
4.      Some Unknown facts about Dr. Ambedkar on 'MAY DAY' also known as 'LABOR DAY'  Compiled & Edited by CBA (Channel Babasaheb Ambedkar) Community Media
5.      Volume 10 – Dr. Babasaheb Ambedkar as member of the Governor-General’s Executive Council (1942-46).
6.      জাত ব্যবস্থার বিলুপ্তি : Dr. B.R. Ambedkar   অনুবাদঃ রঞ্জিত শিকদার, ডঃ আম্বেদকর প্রকাশনী
7.      Tribute to Dr. Ambedkar, Labor and Employment Ministry 
 

Thursday 14 April 2016

125 Birth Anniversary of Babasaheb Dr. B. R. Ambedkar : Bhikkhu Bodhipala

 Today 14th April we celebrate the day in India as the Ambedkar Jayanti. Dr. B. R. Ambedkar was born in 14th April 1891 in Madhya Pradesh. He was born in a Dalit family. He was born at a time when India practised caste difference and human beings were divided into groups who were not allowed to mix with each other and this went to such an extent that even shadows were also not allowed to fall on the other.
Babasaheb as he was fondly called struggled all his life but being a brilliant student he succeeded in reaching to the higher echelons of education through sheer dint of his scholastics and a little help from well wishers. He came out with flying colours in whatever he did.
Babasaheb dabbled in politics too when he was made the law minister in Pandit Jawaharlal Nehru's cabinet. He was also made the Chairman of the Constitution Drafting Committee and thus he was the chief architect of the Constitution of India which gives us such important characteristics of freedom, justice, equality, fraternity and liberty.

Dr. Ambedkar had given the call to be educated (Shikshit Bano), unite (Sanghatit Bano) and agitate (Sangharsh karo). This should be our motto in life if we have to achieve what is guaranteed in our Constitution. The Buddha also said the same to the Vajjis to sit and rise in unity, to discuss in unity and to raise your voice which is correct in unity.

Babasaheb had declared that it was not in his hands that he was born into the society practising untouchability that was being propagated by the Hindus but it was in his hands that he would not die as one. He therefore to clear the stigma of an untouchable showed to the millions of an ancient Path that was once prevalent in India but forgotten yet glorified beyond the shores of Indian boundaries that was the path of the Buddha which he embraced with millions of his Dalit brethren in 1956 giving not only himself and his community a lease of fresh air but at the same time recognising the regeneration of Buddhist Culture that was started in 1891 by Anagarika Dharmapala of Sri Lanka and Ven. Kripasaran Mahasthavir of Bengal which seemed to have borne fruit now.

Buddha's ideology of Ehipassiko, come and see, understand and question may have encouraged Babasaheb to embrace Buddha and His Teachings which amongst other things was the unflinching encouragement that it provides human beings to be his own God rather than to be subdued with One whom we can't see. The Buddha with his teachings respecting all faiths and ideologies has never encouraged mankind to glorify his own religion and scorn the others and showing vengeance but has always respected the other faiths to the utmost and has laid the onus on us to develop our mind and conscience to the utmost form of purity where there is non self and ego. This is what Ambedkar eschewed all his life.

Let us on this day on the occasion of the 125th Birth Anniversary of Babasaheb Dr. Bhimrao Ambedkar salute this man for his audacity to challenge the circumstances and come out with all glory in whatever field he chose to be. We have to study him more closely to understand him, to know him and to walk his path. Let this be this occasion. He is no more a leader for many but is a redeemer for the masses who hold him in very high esteem in the lanes and by lanes of the Dalit communities. Today and in the days to come we will see him as the heart of India in terms of social justice and an inclusive society where all are one and equal.

JAI BHIM

Bhikkhu Bodhipala
Kolkata
bodhipala.bdg@gmail.com

Tuesday 12 April 2016

কালের ভবিষ্যলিপিঃ আম্বেদকরবাদ



সংঘ পরিবার বুঝে নিয়েছে যে ভারতকে হিন্দুস্তান বানানোর এটাই শেষ সুযোগ। কেননা তাদের টোল থেকে জন্মানো বিজেপি সরকার এখন একচ্ছত্র ভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন। যা করার এখনি না করতে পারলে সাধের রামরাজ্য মগজেই শুকিয়ে যাবে। আলেয়ার আলোর মত উবে যাবে ব্রাহ্মন্যবাদের পরম্পরা এবং মিথ্যার মাইথলজি।


মোদির স্বচ্ছ ভারত বা মেক ইন ইন্ডিয়া যে ব্রাহ্মন্যবাদ পুনঃ প্রতিষ্ঠার এক সুচতুর কৌশল তা কিন্তু নানা ইস্যুতে উঠে আসছে। ক্রমশই মুখোশ খসে গিয়ে বেরিয়ে আসছে ব্রাহ্মন্যবাদের বীভৎসতা। এই মডিউলগুলিতে যে কী ভয়ঙ্কর বিষ মেশানো রয়েছে তা ভারতের মূলনিবাসী বহুজন সমাজ হাড়েহাড়ে বুঝে নিয়েছে। তারা বুঝে নিয়েছে যে এই স্বচ্ছ ভারত বা ভারত সাফাই অভিযানের নেপথ্যে লুকিয়ে আছে মূলনিবাসী দলিত বহুজনের (SC/ST, OBC and Minorities) নিকেশ অভিযান।