বর্ণাশ্রমে বেষ্টিত ভারতীয়দের হিন্দু বলে প্রমানিত করার রাস্তাটা প্রসারিত হতে শুরু করে 1921 সাল নাগাদ। প্রকৃত পক্ষে ব্রাহ্মণরা তখনো পর্যন্ত নিজেদের হিন্দু মনে করতেন না। এখনো করেন না। এর কারন পরে বলছি । 1922 সালে তারা নাসিকে ‘হিন্দু মহাসভা’ এর স্থাপন করে । কিন্তু কেন? সে ইতিহাস ধাপে ধাপে প্রকাশ করছি । তার অগে অমরা দেখছি রাজা রামমোহন রায় 20 আগষ্ট 1828 সালে ‘ব্রাহ্ম সমাজ’ স্থাপন করেন । দয়ানন্দ সরস্বতী 1875 সালে ‘আর্য সমাজ’স্থাপন করেন । এই ‘আর্য সমাজ’ স্থাপনের পিছনেও একটা ষড়যন্ত্র আছে । কে এই দয়ানন্দ সরস্বতী ? এর আসল নাম কেদার নাথ পান্ডে । যিনি গুজরাটি ব্রাহ্মণ। তিনি রাজকোট জেলার টংকারা নামক বোম্বে (মুম্বাই) আসেন । বোম্বেতে কেন ? কারণ 1873 সালে মহারাষ্ট্রে মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলে ‘সত্যশোধক’ সমাজ’-এর স্থাপণ করেন ।‘সত্যশোধক’ অর্থাৎ সত্য কলুষিত হয়েগিয়েছিল ব্রাহ্মণদের ষড়যন্ত্রে, তাই তাকে শোধন করা দরকার হয়ে পড়ে । ‘সত্যশোধক’ কে ENCOUNTER কারার জন্য কেদার নাথ পান্ডে মহশয় দয়ানন্দ সরস্বতী নামে এই ‘আর্য সমাজ’-এর স্থাপন করেন। উদ্দেশ্য সত্যশোধক আন্দোলনকে সম্পূর্ণ
রূপে ধ্বংস করে দেওয়া। ষড়যন্ত্র করে মানুষগুলোকে বিপথ চালিত করা।
শয়তানের যেমন ষড়যন্ত্রের অভাব হয় না।
এখানে একটা জিনিস আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কেউই হিন্দু সমাজ স্থাপন করেননি । অর্থাৎ 1921 সালের পূর্ব পর্যন্ত ব্রাহ্মণ নমেরই সংগঠণ নির্মান হয়েছে । হিন্দু নামধারী কোন সংগঠণের নির্মান হয়নি । অর্থাৎ রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে হিন্দু নামকে ব্রাহ্মণরা স্বীকার করেনি।
ব্রাহ্মণরা নিজেদেরকে কখন ও কেন হিন্দু বলে মেনে নিল বা হিন্দু বলে প্রচার শুরু করল ?
ইংলন্ডে 1917-18সাল নাগাদ প্রাপ্ত বয়ষ্কের ভোটাধীকারের আন্দোলন শুরু হয় । কারন ইংলন্ডেও সকল প্রাপ্ত বয়ষ্কদের ভোটাধীকার ছিল না । ওখানে যারা ট্যাক্স দিত এবং যারা লেখাপড়া শেখা লোক ছিল তাদেরই ভোটাধীকার ছিল। আন্দোলন ইংলন্ডে শুরু হয় আর বিপদের ঘন্টা ভারতের ব্রাহ্মণরা শুনতে পায় । কেন? কারন ঐসময় ভারত ছিল ব্রিটিশদের অধীন। ভারেতর ব্রাহ্মণরা মনে করলেন যে, ইংলন্ডে যদি বয়ষ্কের ভোটাধীকার চালু হয়ে যায়, তাহলে তো সেটা ভারতেও লাগু হবে । কারন ব্রিটেনে যে আইন পাশ হবে ভারতেও সেটা যেকোন সময় লাগু হতে পারে ।আর ভারতে যদি বয়ষ্কদের ভোটাধীকার আইন লাগু হয় , তাহলে ভারতে যে শুদ্র (OBC) ও অতিশুদ্ররা (SC & ST) আছে এদের সংখ্যা অনেক গুন বেশী; আর ভোটাধীকার হিসাবে নির্বাচণ হলে যাদের সংখ্যা বেশী রাজ ক্ষমতা তাদেরই হবে । ব্রাহ্মণরা ব্রাহ্মণ হিসাবে ভোট চাইলে সব ব্রাহ্মণও যদি এক জনকে ভোট দেয় সেটা 3.5%এর বেশি হবে না। ফলে তারা কোন নির্বাচণ ক্ষেত্রেই জিততে পারবেনা ।এর ফলে তাদের যে হাজারো বছর ধরে শাসন প্রনালী চলে আসছিল সেটার সমুহ বিপদ ঘনিয়ে আসবে । কিন্তু হিন্দু নামের সংগঠন হলে নেতা ব্রাহ্মণই হবে, আর সমস্ত SC,ST, OBC দেরকে নিজেদের CONTROL এ রাখতে পারবে। এই ভাবনা থেকে তারা 1922 সালে নাসিকে ‘হিন্দু মহাসভা’ এর স্থাপন করে । আর 1925 সালে R.S.S. অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ-এর স্থাপন করে । হিন্দু শব্দকে ব্রাহ্মণরা একটি রণকৌশল হিসেবে গ্রহণ করে্ন এবং তার ব্যাপক প্রচার শুরু করে দেন। এই প্রচারের ঢক্কা নিনাদ সমানে চলেছে। তাই তারা প্রচার করছে "গর্ব করে বল আমি হিন্দু" ।
ব্রাহ্মণরা সত্যি সত্যি কি নিজেদের হিন্দু বলে মনে করে ?
এবার ভাবুন ব্রাহ্মণরা সত্যি সত্যি কি নিজেদের হিন্দু বলে মনে করে ? যদি করে তবে তারা ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য জতির মেয়েকে বিয়ে করেনা কেন? এক্ষেত্রে তারা লোমালোম বিচার করতে বসে। দুএকটি ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ধর্তব্য নয় । আবার প্রয়োজনে তারা নিজেদের মেয়েকে অন্য জাতের ছেলের সংগে যখন বিবাহ দেয়ন। এটি অতি ধূর্ত একটি রণকৌশল। এর আসল উদ্দেশ্য হল অন্য জাতির উত্থান ও উত্তরণকে সুকৌশলে বিপথ চালিত করা, কন্যাধনের মাধ্যমে অন্য জাতির মেধাকে ধ্বংস করা ও তাদের অর্জিত সম্পত্তি হস্তগত করা। অন্য জাতিকে গোলাম বানানোর এটি একটি প্রাচীনতম কৌশল। এটা প্রমানিত যে, ব্রাহ্মণরা SC,ST, OBC দের সামনে নিজেদের হিন্দু বলে পরিচয় দিলেও কিন্তু লোক গননায়ও তারা নিজেদের ধর্ম ও জাত দু’টোই ব্রাহ্মন বলে লিখতে পছন্দ করে।
ব্রাহ্মণদের অনুসারে ‘হিন্দু ’শব্দের ব্যাখ্যা কি?
ব্রাহ্মণরা প্রচার করছে ‘গর্ব করে বল আমি হিন্দু ’। ভারতবর্ষে বহুজনের উত্থানে ওদের মনে আবার আশঙ্কা
ভারতবর্ষে বহুজনের উত্থানে ওদের মনে আবার আশঙ্কা ঘনীভূত হয়েছে। তাই ওরা আবার হিন্দুত্বকে ঢাল হিসেবে বেছে নিয়েছে। যদি কেউ জানতে চায় যে, কিসের ভিত্তে গর্ব করা হবে? ‘হিন্দু’ নাম তো আক্রমনকারী মুসলমানদের দেওয়া ? তাই তারা প্রচার করছে ইতিহাসের পাতায় যে, সিন্ধু থেকে হিন্দু হয়েছে । কিভাবে ? ওরা পুঁথির ভর্তি করে লিখছেন যে, মুসলমানরা ফার্সি ভাষায় কথা বলত । ফারসিতে ‘স’ ‘হ’ –এর মত উচ্চারিত হয় বা তারা ‘স’ কে ‘হ’ বলত, তাই সিন্ধু থেকে হিন্দু হয়েছে ।
তর্কের খাতিরে আমরা হিন্দু মেনে নিলেও প্রশ্ন থাকবে মুসলমানদের দেওয়া নাম ব্রাহ্মণরা কেন মেনে নিতে বলছেন! বা তা নিয়ে গর্ব করা কি করে সম্ভব! কেননা হিন্দুত্ববাদীরাতো সব সময়তো মুসলমান বিরোধী?
যদি সিন্ধু থেকে হিন্দু হয়ে থাকে তবে সেটা শুধু সিন্ধু অববাহিকা অঞ্চলে বসবাসকারী লোকদের ক্ষেত্রে হিন্দু শব্দ প্রযোজ্য হওয়া উচিত ছিল ।সম্পুর্ন ভারতবর্ষের লোকদের ক্ষেত্রে হিন্দু নামাঙ্কণ হওয়ার দরকার পড়ে না । ।সম্পুর্ন ভারতবর্ষের লোকদের ক্ষেত্রে হিন্দু নামে চিহ্নিত হওয়ার কারণ,সারা ভারতে মুসলমান শাসন কায়েম ছিল । তাই হিন্দু শব্দের প্রসার সারা ভারতব্যাপী হয়েছিল । আর একটা কথা সিন্ধু থেকে হিন্দু হয়ে থাকলে শুধুমাত্র সিন্ধু অঞ্চলে এই নাম সীমাবদ্ধ থাকা উচিত ছিল ।এতে প্রমান হয় সিন্ধু থেকে হিন্দু হয়নি । আরও একটা কথা ‘স’ কে যদি ‘হ’ বলত তাহলে‘স’ দিয়ে আরও যে সব শব্দ আছে সেগুলোরও পরিবর্তন হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটা তো হয়নি । যেমন মুসলমান উচ্চারণ "মুহলমান" হয়নি। পার্সি "পার্হি" শিয়া "হিয়া" সুন্নি "হুন্নি" বা সুলেমান "হুলেমান" হয়নি।
যদি সিন্ধু থেকে হিন্দু হয়ে থাকে তাহলে হিন্দুধর্ম অনুসারে‘গঙ্গা’নদীর পরিবর্তে সিন্ধু নদীকেই পবিত্র হিসাবে মানা উচিত ছিল। কিন্তু সেটা মানা হয়নি। অতএব যদি সিন্ধু থেকে হিন্দু হয়েছে একথাটি ডাহা মিথ্যা এবং চালিয়াতি। (চলবে)
আরো গভীর analysis পাওয়ার আশায় থাকলাম। অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন একটি বিষয় পুরো লেখাটা না দেখে মন্তব্য করা অনুচিৎ। তবে ব্রাহ্মণ্যবাদের শিকড় অনক গভীরে আশা করি লেখক মনুসংহিতা, বেদ, গীতা এবং বৌদ্ধধর্ম প্রসঙ্গ আনবেন এক এক করে
ReplyDeleteধন্যবাদ ইন্দ্রনীল আপনার সময়োপযুক্ত পরামর্শ ও আগ্রহের জন্য। আপনার অভিমত জগদীশ বাবুকেও জানালাম। যোগাযোগ রাখুন।
Deleteভালো বলেছেন, কিন্তু এতে যথেষ্ট না।
ReplyDeleteThank u.
ReplyDelete