সাম্প্রতি
আমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর বাৎসরিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মধ্যে
মানবাধিকার লঙ্ঘনের উপরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। জুন মাসের শেষে
দেশ বিদেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলি যে প্রতিবেদন পেশ করেছে তা
বাংলাদেশের পক্ষে লজ্জাজনক। এই সংগঠনগুলি জানিয়েছে যে মে মাসেই
সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৭৪জন মানুষ। রাজনৈতিক কারণে আহত ১৩৩২ জন।
হত্যা করা হয়েছে ১৪জন শিশুকে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪০ জন নারী ও শিশু ।
এদের মধ্যে শিশু ২১ জন। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ২০১৬ব সালের প্রথম তিন
মাসে শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল ২০ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৪ জনকে।
রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে টাঙ্গাইলের নিখিল জোয়ারদার নামে এক ধর্মীয়
সংখ্যালঘুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বান্দারবনে হত্যা করা হয়েছে অহিংসের
পূজারী এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে। ১লা জুনে প্রকাশিত এইবেলা ফাউন্ডেশন নামে
একটি মানবাধিকার সংগঠন তার প্রতিবেদনে জানাচ্ছে যে, মে মাসে সংখ্যালঘুদের
উপর কম করে ৮৩টি জানঘাতী আক্রমণ করা হয়েছে জতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কম করে
৫১০টি পরিবার। অসংখ্য সংখ্যালঘু গ্রাম অবরুদ্ধ করে হামলা চালানো হচ্ছে।
জমিজমা, ঘরবাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চলছে। ভিটে ছাড়া করা
হয়েছে অসংখ্য পরিবারকে। সম্পত্তি দখল এবং গণধর্ষণের শিকার হয়েছে অসংখ্য
সংখ্যালঘু নারী ও শিশু।

যে ভাবে সে দেশের সংখ্যালঘু, মুক্তমনা লেখক,
সাহিত্যিক, নারী, শিশু ও সমকামীদের উপর একের পর এক জীবনঘাতী আক্রমণ সংঘটিত
হয়ে চলেছে তা এক কথায় অমানবিক। পরিকল্পিত জাতিসংঘের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ
দেখিয়ে ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের উপর যে নির্মম রাষ্ট্রীয়
সন্ত্রাস চলছে তা একবগগা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও নিকেশ নীতির ইঙ্গিত বহন করে।
এই দীর্ঘমেয়াদী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে এটাই প্রমানিত হয় যে সরকার রাজনৈতিক
কারণেই চাপাতি সংস্কৃতিকে পোষণ করে চলেছে এবং ইচ্ছে করেই ঘাতক এবং তাদের
উন্মাদ ধর্মীয় গুরুদের নরহত্যার ময়দানে ছেড়ে দিয়ে রেখেছে। এই নরপিশাচদের
প্রতি সরকারের নিস্ক্রিয়তা থেকে প্রমানিত হয় যে বাংলাদেশ বিশ্বমানবিকতার
বোধ একেবারেই হারিয়ে ফেলেছে। বিশেষত গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে
সন্ত্রাসী হামলার পরে বাংলাদেশের মাথায় সন্ত্রাসীদের আঁতুড়ঘর হিসেবে আর
একটি পালক উঠে এসেছে। ডি কে হোয়াং নামের কোরিয়ান ভদ্রলোকের গোপন ক্যামেরা
এবং আইসিস প্রকাশিত সন্ত্রাসীদের তালিকা থেকে একেবারে পরিষ্কার হয়েগেছে যে,
বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সন্তান সন্ততিরাও চাপাতি
সংস্কৃতি থেকে কাফের নিধনের জান্নাত সংস্কৃতিতে উঠে এসেছে।
এই
নিতিহীন, নির্মম বাতাবরণে উৎসাহিত হয়ে উঠেছে আর একদল জল্লাদ। ইতিমধ্যে
তারাও ত্রিশূল-তলোয়ারে ধার দিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে। নির্লজ্জ ভাবে হুঙ্কার
দিচ্ছে যে ওপারে হিন্দুদের গায়ে নখের আঁচড় পড়লে এপারের সমস্ত মসজিদ
মাদ্রাসা থেকে ইমাম শুন্য হয়ে যাবে। অর্থাৎ আমদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে
যে এই জল্লাদেরা আসলে একে অন্যের পরিপূরক। একজনের রাজনৈতিক পুষ্টি বাড়াতে
আর একজন সম্পূর্ণভাবে ইন্ধন যোগায়। নিরীহ জনগণকে ধর্মীয় আবেগে আবিষ্ট করে
ভ্রাতৃঘাতি দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি করে। হাতে তুলে দেয় চাপাতি, খড়গ,
ত্রিশূল-তলোয়ার। নিরীহ মানুষের লাশের উপরে প্রতিষ্ঠিত হয় এদের ক্ষমতার
মন্দির-মসজিদ।
আদিম হিংস্রতার এই নিষ্ঠুর প্রবণতা দেখে নিজেদের সভ্য
বলতে সত্যি আমাদের ঘৃণা হয়। রাষ্ট্র পরিচালকদের এই নির্লজ্জ আহম্মকি দেখে
মনে হয়, জান্তব জীবন ছেড়ে আমারা এক পা ও এগোতে পারিনি। পৃথিবীর সত্যি বড়
দুর্দিন আজ। নেতৃত্বের বড় অভাব। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান
প্রাতিষ্ঠানিক পরিচ্ছদ ছেড়ে এখনো বেরোতে পারছি না। জড়ত্ব ঝেড়ে ফেলে এখনো
উদাত্ত কন্ঠে বলতে পারছিনা, “কান্ডারী বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র”।
No comments:
Post a Comment