Pages

Tuesday, 13 December 2016

হামরা সাঁওতাল বটে , শরদিন্দু উদ্দীপন





যেখানে কামিন মরদ 
দিন রাত গতর খাটে
ধান পুঁতে, জনার ফলায়
থালা ভরা শাকভাঁজা মাড়ভাত খায়্যে
তুদের ছানার মুখে অন্ন জোগায়
যেখানে পলাশ রাঙা বাগালের বাঁশি
ঝিম ধরা দুপুরের বেহাগী বাতাস
শাল, মহুল আর শিমুলের বনে
দিনরাত খেলা করে মাতাল ভ্রমর। 

যেখানে ঝিঙাফুলি সাঁঝে এখনো পিদিম জ্বলে
তুংদা টমাক বোল তোলে দিদিগ ধিতাং
হামদের আড়িচালি, লাই লাকচার
হামদের শাক্রাত, কড়াম, সোহরাই
সেইখানে জাহের থান ঘিরে হামদের বাস।

তোড়া গোড়া ডুংরির বাঁকে বাঁকে
ট্যাড় বাদি বহাল পারাইয়ে হামদের কুলী বটে     
তুদের পারা সড়ক লাই, বিজলী বাত্তি লাই
পিয়াস মিটানোর টুকুস জলও নাই’গ বাবু
দুফরে দামান্ডি খ্যায়ে হামদের কামিনগুলা জলকে চলে
মাথায় কলসি লিয়ে সার বাধ্যে হাট্যে যায়
ভুতনীর ডাঙ্গাল প্যারায়ে   
দুকোশ দুরের কানালীর কাদা খোড়া জল
হামদের পিয়াস মিটায়গ বাবু
মায় বাপে নামাল খাটে
গিধড়াগুলান ভক্ষে গোঙায়
গোগো মায়বাপে দু’গেলাস হান্ডি খ্যায়ে
বসে বসে মৃত্যুর পহর গোনে।       
 
এমনি কাঁকড় বেছানো হামদের পথ’গ বাবু
হাতের মুটোয় মরণ বাঁচন  
তবুও রোজ রাতে তুংদা টমাক বোল তোলে
সেরেং এর সুরে সুরে কামিনগুলা কোমর দুলায়
তাহারে তা নানা ত্রানা তাহারে তা নানা হে
তাহারে তা নানা ত্রানা তাহারে না না......।
মরদের বুক জ্বালে মন পুড়্যে হায়
তিরিও হালাং হালাং করে ঠোঁটের ছোঁয়ায়   
সড়পা, লাগড়ে লাচতে লাচতে ভোর হয়

এমনি সরল জীবনকেও বুঝতে লারলি বাবু?
বুঝতে লারলি হামদের ভাষা?
হামদের আড়িচালি লাইলাকচার?
তোদের কামুক চোখে হামদের কামিনগুলা
ভোগের মাল হয়ে গেল?
সাঁওতাল রমণীর উদ্দাম যৌবনের ছোঁয়া লিতে
তুদের এতই লালচ বটে!
পাসুরে গেলি হামদের তিলকা বাবা!
পাসুরে গেলি হামদের শালগীরা!
হামদের সিধু-কানু, বীরসা ভগবান!
পাসুরে গেলি হামদের সেঙ্গেল, হুল, উলগুলান!
পাসুরে গেলি হামদের টাঙ্গি, বল্লম আর বিষাক্ত কাঁড়বাঁশ!



হামরা সাঁওতাল বটে
সব দিতে পারি’গ বাবু, সব দিতে পারি
শুধু ইজ্জৎ দিতে লাইরব।
মা, বোন আর কামিনের ইজ্জৎ হামদের জীবন বটে
হামদের বাঁচে থাকার সব সম্পদ
তার দিকে যদি তোদের চোখ পড়ে, হাত উঠে
হা্মিও তিলকা বাবার মত শালগিরা দেব।
হামিও বীরসার মত উলগুলানে আগুন ঝরাব
হামিও সিধু-কানুর মত বাঘের পারা গর্জে বলব
“শালা তোরা হামদের মা-বোনকে ছিনেছিস,
হামরা তুদের জীউ ছিড়ে লিব”।    

  
 

1 comment: