ইদানিং মোদির অপদার্থতা, দুষ্কর্ম, জুমলাবাজির সমালোচনা করলেই কিছু পরভোজী ফেকু দেশপ্রেমী পাকিস্তান, মুসলমান এবং পাথরবাজ কাশ্মীরি বলে চেঁচাতে শুরু করছে!! পাকিস্তানের সদর্থক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করলে তাঁকে পাকিস্তান পন্থী, পাকিস্তানের দালাল, দেশদ্রোহী, ইত্যাদি উপাধিতে ভরিয়ে দিচ্ছেন !! যে শহীদের পরিবার সন্তান, স্বামী, ভাই হারিয়ে যুদ্ধের বিরুদ্ধে, শান্তির পক্ষে মত দিচ্ছে তাদেরকে নানা ভাবে হেনস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সৈনিকের বিধবা স্ত্রীকে পর্যন্ত ধর্ষণের ধমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। দেশপ্রেমের এমন নজির স্থাপন করছে কয়েকটি সংগঠন যারা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ব্রিটিশের দালালী করেছে, হিটলার, মুসোলিনীকে সমর্থন করেছে এবং দেশের সাথে বেইমানী করেছে !!
সম্প্রতি পুলওয়ামার সন্ত্রাসী আক্রমণ, ৪৯ জন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু, নিরাপত্তার যে বিশাল ঘাটতি, ভারতীয় বায়ু সেনার আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ, অভিনন্দন এর গ্রেপ্তার, অভিনন্দন এর হস্তান্তর সম্পর্কে যারাই নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করার চেষ্টা করেছেন তাদেরকেই গদি মিডিয়া নানা নামে চিহ্নিত করার জন্য ধমকি দিয়েছে। সারা পৃথিবীর সংবাদ সংস্থা যে সত্য খবর প্রচার করছে তাকে উপেক্ষা করেছে এই গদি মিডিয়া। প্রমাণ ছাড়াই গল্প রচনা করে মানুষকে উন্মাদ করে তুলছে !!!
ভারতের এপর্যন্ত ক্ষমতাসীন শাসকদের কাছে পাকিস্তান একটি দারুন অনুঘটক? অপদার্থতা, অকর্মণ্যতা ঢাকার জন্য পাকিস্তান একটি বড় ইস্যু! শাসক শ্রেণী জবাবদিহির সম্মুখীন হলেই চলে আসে পাকিস্তান, কাশ্মীর, মুসলমান ইস্যু! অথবা যুদ্ধ জিগীর তুলে অপদার্থতা ঢাকা দেবার চেষ্টা করা হয় !! শাসক শ্রেণির এই খেলা চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। আর এই ইস্যুকে জিইয়ে রাখার জন্য ঘরজামাইয়ের মত পুষে রাখা হয় মাসুদ আজাহারের মত কিছু ভাড়ুয়াকে। শ্বশুরেরা বিপদে পড়লেই এই জামাইয়েরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। জামাইয়েরা ধরা পড়লে শ্বশুরেরা নাটক তৈরি করে জামাইদের নিরাপদে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। জামাইদের নিরাপদ করার জন্য নিমন্ত্রণ ছাড়াই শ্বশুরেরা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে পৌঁছে যান! প্রধান্মন্ত্রীর মায়ের জন্য কাশ্মীরি শাল উপহার দেন এবং শাহী বিরিয়ানি খেতে খেতে জামাইদের বন্দোবস্ত করে আসেন !!!
না, এতে দোষ নেই !! কিন্তু কর্তার বিরুদ্ধে কথা বললেই তাঁকে পাকিস্তানী হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হয়।
কর্তাদের কাছে পাকিস্তান তাই একটি মহৎ অনুঘটক। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে পাকিস্তান একটি ভৌগলিক ভূখণ্ডের নাম। ভারত তথা অন্যান্য দেশের মতই সেটি একটি ভূখন্ড মাত্র। সেখানে অসংখ্য খ্যাতনামা মানুষের জন্ম হয়েছে। জন্ম নিয়েছেন আব্দুল গপফর খান এর মত দেশপ্রেমী। জন্ম নিএছেন ইকবালের মত কবি, জন্ম নিয়েছেন মিলখা সিং কৃতি সন্তান।
দুষ্কৃতিরাও আছে। আছে মাসুদ আজাহারের মত আরএসএস এর ঘরজামাইয়েরা ! আমরা বিশ্বাস করি দেশের সুনাম দুর্নাম নির্ভর করে শাসক দলের নীতির জন্য। যদি পাকিস্তানের সরকার সন্ত্রাসবাদীদের মদত করে অবশ্যই আমরা তার কড়া নিন্দা করব। আর যদি পাকিস্তান সরকার মানবতার পক্ষে কাজ করে তবে তার প্রশংসাও করব। একটি ভৌগলিক নির্বাক ভূখন্ডকে অপরাধের ক্ষেত্র হিসেবে দাগিয়ে দেব না।
পৃথিবীর সব থেকে বড় সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের নাম আরএসএস। তার জন্ম ভারতে। ইউনেস্কো এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ তালিকায় স্থান দিয়েছে। ভারতের বিশ্বহিন্দু পরিষদ এবং বজরং দলও সন্ত্রাসবাদী নিষিদ্ধ সংগঠন। তাই বলে কি ভারতকে সন্ত্রাসবাদী দেশ বলা হবে ?
না, আমরা যেমন আমাদের প্রিয় ভারতকে কোন ভাবেই সন্ত্রাসবাদী দেশ ভাবতে পারি না, ঠিক সেই ভাবেই পাকিস্তানের শান্তিপ্রিয় নাগরিকেরা তাদের প্রিয় দেশকে সন্ত্রাসবাদী দেশ হিসেবে মানতে পারে না।
সন্ত্রাস যাদের কাজ, সন্ত্রাস যাদের ধর্ম সেই আরএসএস, বজরং, বিশ্বহিন্দু পরিষদের বিরুদ্ধে আমরা কতটা সচেতন? কতটা প্রতিবাদ করি এই কদর্য সংগঠনগুলিকে? ভারতকে শান্তির দেশে পরিণত করতে আমরা কি এই জুমলাবাজদের বিরুদ্ধে লড়াই করি না তাদের টাকায় চালিত সন্ত্রাসবাদী প্রচার মাধ্যমগুলির পাঁচন খেয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে উন্মত্ততা দেখাই ? যারা কপট দেশপ্রেমের গাঁজা খেয়ে মানবতার কথা ভুলে যায়, ভুলে যায় ন্যায়, সাম্য, স্বাধীনতা এবং ভ্রাতৃত্বের কথা, তাঁরা আর যাই হোক দেশপ্রেমিক নয়। তাঁরা মানবাধিকারের পক্ষে নয়। তাঁরা অবশ্যই সন্ত্রাসবাদী।
No comments:
Post a Comment