ব্রাহ্মন্যবাদী শাস্ত্রগুলি শাকান্ন ভোজনের উপর তেমন বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি বরং শাকান্ন ভোজন থেকে গোমাংস ভোজনের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। অতিথিদের ভোজনের উদ্দেশ্যে গোমাংসই শ্রেষ্ঠ এমন উপদেশ আমরা বেদ এবং অন্যান্য গ্রন্থগুলিতে ভুরি ভুরি দেখতে পাই। অতিথিরা গরুর মাংস বেশি খেতে পছন্দ করত বলে তাদের “গোঘ্ন” বলা হত। মহাভারতের অনুশাসন পর্বে শ্রাদ্ধাদি কাজে অতিথিদের গোমাংস ভক্ষন করালে পূর্বপুরুষ এক বৎসর স্বর্গসুখ পেতে পারে এমন উপদেশ পিতামহ ভীষ্ম দিয়েছিল যুধিষ্ঠিরকে (মহাভারতের অনুশাসন পর্ব ৮৮ অধ্যায়)। বিরাট রাজার গোশালায় অজস্র গরু বলি দেওয়া হত তার উল্লেখ পাওয়া যায়। রামায়ন কাহিনীতে রাম যে গরুর মাংসের সাথে মদ খেতে ভাল বাসত তার উল্লেখ আছে। বনবাসকালে রাম তার মাতার কাছে আক্ষেপ করে বলেছিল যে সে ১৪ বছর গরুর মাংস খেতে পারবেনা, সোমরস পান করতে পারবে না এবং স্বর্ণ পালঙ্কে ঘুমাতে পারবে না।
শতপথ ব্রাহ্মণে গো হত্যা এবং গোমাংস খাওয়ার বিধান রয়েছে(১১১/১/২১)
ঋকবৈদিক কালে আর্যরা গরু খেত তার পরিষ্কার উল্লেখ পাওয়া যায়।
“ ইন্দ্র বলল তাদের খাওয়ার জন্য ১৫ প্লান ২০টি ষাঁড় রান্না করা হয়েছে (ঋক X.86.14)। এই ভাবে ঋকবৈদে অগ্নির উদ্দেশ্যে ঘোড়া, বলদ, ষাঁড়, দুগ্ধহীন গাই এবং ভেড়া বলি দেবার কথা উল্লেখ আছে। এই সময় আরো দেখা যায় যে গরু বা ষাঁড়গুলিকে আর্যরা তরোয়াল বা কুড়ুল দিয়ে হত্যা করত।
একটি বেঁটে ষাঁড় বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে, একটি চিতকপালী শিংওয়ালা গরু ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে, একটি কাল গরু পুষানের উদ্দেশ্যে, একটি লাল গরু রুদ্রের উদ্দেশ্যে বলি দেওয়া হত।
তৈত্রিয় ব্রাহ্মণে “পঞ্চশারদীয়-সেবা” নামে একটি ভোজন অনুষ্ঠান পাওয়া যায় যেখানে যার প্রধান বৈশিষ্ট হল ১৭টি ৫ বছরের নীচে গোবৎস কেটে রান্না করে অতিথিদের পরিবেষণ করা।
বাল্মীকি রামায়ণের আদি ও অযোধ্যাকাণ্ডে স্পষ্ট করে লেখা আছে — “রাম গোমাংস ভক্ষণ করতেন”। বনবাসে যাবার পথে রাম, লক্ষ্মণ ও সীতা ভরদ্বাজ মুনির আশ্রমে উপস্থিত হলে মুনিবর মধুপর্ক, বৃষ মাংস এবং ফলমূল দিয়ে তাদের ভোজনের ব্যবস্থা করেছিলেন (বাল্মীকি রামায়ণ ২/৫৪)।
ঋক বেদ সংহিতায় “বিবাহসূক্ত”-এ কন্যার বিবাহ উপলক্ষ্যে সমাগত অতিথি-অভ্যাগতদের গো-মাংস পরিবেশনের জন্য একাধিক গোরু বলি দেওয়ার বিধান আছে (ঋগ্বেদ সংহিতা ১০/৮৫/১৩)।
চাণক্য তাঁর “অর্থশাস্ত্র”-এ, বলেছেন — (১) গোপালকেরা মাংসের জন্য ছাপ দেওয়া গোরুর মাংস কাঁচা অথবা শুকিয়ে বিক্রি করতে পারে (অর্থশাস্ত্র ২/২৯/১২৯)।
চরক বলছেন – গো-মাংস বাত, নাক ফোলা, জ্বর, শুকনো কাশি, অত্যাগ্নি (অতিরিক্ত ক্ষুধা বা গরম), কৃশতা প্রভৃতি অসুখের প্রতিকারে বিশেষ উপকারী (চরকসংহিতা ১/২৭/৭৯)।
সুশ্রুতও একই সুরে বলেছেন – গো-মাংস পবিত্র এবং ঠান্ডা। হাঁপানি, সর্দিকাশি, দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, অতি ক্ষুধা এবং বায়ু বিভ্রাটের নিরাময় করে (সুশ্রুতসংহিতা ১/৪৬/৪৭)।
স্বামী বিবেকানন্দতো পরিষ্কার বলেছেন ব্রাহ্মণরা গরুর মাংস ভক্ষন করত। তবে হঠাৎ কেন বামুনেরা এত গো-প্রেম দেখাতে শুরু করেছে যে তারা নিরীহ মানুষকেও হত্যা করতে দ্বিধা করছে না?