Pages

Sunday, 24 July 2016

হিন্দু শাস্ত্রে গরু খাওয়ার নির্দেশঃ




ব্রাহ্মন্যবাদী শাস্ত্রগুলি শাকান্ন ভোজনের উপর তেমন বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি বরং শাকান্ন ভোজন থেকে গোমাংস ভোজনের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। অতিথিদের ভোজনের উদ্দেশ্যে গোমাংসই শ্রেষ্ঠ এমন উপদেশ আমরা বেদ এবং অন্যান্য গ্রন্থগুলিতে ভুরি ভুরি দেখতে পাই। অতিথিরা গরুর মাংস বেশি খেতে পছন্দ করত বলে তাদের গোঘ্নবলা হত। মহাভারতের অনুশাসন পর্বে শ্রাদ্ধাদি কাজে অতিথিদের গোমাংস ভক্ষন করালে পূর্বপুরুষ এক বৎসর স্বর্গসুখ পেতে পারে এমন উপদেশ পিতামহ ভীষ্ম দিয়েছিল যুধিষ্ঠিরকে (মহাভারতের অনুশাসন পর্ব ৮৮ অধ্যায়)। বিরাট রাজার গোশালায় অজস্র গরু বলি দেওয়া হত তার উল্লেখ পাওয়া যায়। রামায়ন কাহিনীতে রাম যে গরুর মাংসের সাথে মদ খেতে ভাল বাসত তার উল্লেখ আছে। বনবাসকালে রাম তার মাতার কাছে আক্ষেপ করে বলেছিল যে সে ১৪ বছর গরুর মাংস খেতে পারবেনা, সোমরস পান করতে পারবে না এবং স্বর্ণ পালঙ্কে ঘুমাতে পারবে না।

শতপথ ব্রাহ্মণে গো হত্যা এবং গোমাংস খাওয়ার বিধান রয়েছে(১১১/১/২১)

ঋকবৈদিক কালে আর্যরা গরু খেত তার পরিষ্কার উল্লেখ পাওয়া যায়।
ইন্দ্র বলল তাদের খাওয়ার জন্য ১৫ প্লান ২০টি ষাঁড় রান্না করা হয়েছে (ঋক X.86.14)এই ভাবে ঋকবৈদে অগ্নির উদ্দেশ্যে ঘোড়া, বলদ, ষাঁড়, দুগ্ধহীন গাই এবং ভেড়া বলি দেবার কথা উল্লেখ আছে। এই সময় আরো দেখা যায় যে গরু বা ষাঁড়গুলিকে আর্যরা তরোয়াল বা কুড়ুল দিয়ে হত্যা করত।
একটি বেঁটে ষাঁড় বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে, একটি চিতকপালী শিংওয়ালা গরু ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে, একটি কাল গরু পুষানের উদ্দেশ্যে, একটি লাল গরু রুদ্রের উদ্দেশ্যে বলি দেওয়া হত।
তৈত্রিয় ব্রাহ্মণে পঞ্চশারদীয়-সেবানামে একটি ভোজন অনুষ্ঠান পাওয়া যায় যেখানে যার প্রধান বৈশিষ্ট হল ১৭টি ৫ বছরের নীচে গোবৎস কেটে রান্না করে অতিথিদের পরিবেষণ করা।

বাল্মীকি রামায়ণের আদি ও অযোধ্যাকাণ্ডে স্পষ্ট করে লেখা আছে — “রাম গোমাংস ভক্ষণ করতেন। বনবাসে যাবার পথে রাম, লক্ষ্মণ ও সীতা ভরদ্বাজ মুনির আশ্রমে উপস্থিত হলে মুনিবর মধুপর্ক, বৃষ মাংস এবং ফলমূল দিয়ে তাদের ভোজনের ব্যবস্থা করেছিলেন (বাল্মীকি রামায়ণ ২/৫৪)।

ঋক বেদ সংহিতায় বিবাহসূক্ত”-এ কন্যার বিবাহ উপলক্ষ্যে সমাগত অতিথি-অভ্যাগতদের গো-মাংস পরিবেশনের জন্য একাধিক গোরু বলি দেওয়ার বিধান আছে (ঋগ্বেদ সংহিতা ১০/৮৫/১৩)।

চাণক্য তাঁরঅর্থশাস্ত্র”-, বলেছেন — (১) গোপালকেরা মাংসের জন্য ছাপ দেওয়া গোরুর মাংস কাঁচা অথবা শুকিয়ে বিক্রি করতে পারে (অর্থশাস্ত্র ২/২৯/১২৯)।

চরক বলছেন গো-মাংস বাত, নাক ফোলা, জ্বর, শুকনো কাশি, অত্যাগ্নি (অতিরিক্ত ক্ষুধা বা গরম), কৃশতা প্রভৃতি অসুখের প্রতিকারে বিশেষ উপকারী (চরকসংহিতা ১/২৭/৭৯)।

সুশ্রুতও একই সুরে বলেছেন গো-মাংস পবিত্র এবং ঠান্ডা। হাঁপানি, সর্দিকাশি, দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, অতি ক্ষুধা এবং বায়ু বিভ্রাটের নিরাময় করে (সুশ্রুতসংহিতা ১/৪৬/৪৭)।

স্বামী বিবেকানন্দতো পরিষ্কার বলেছেন ব্রাহ্মণরা গরুর মাংস ভক্ষন করত। তবে হঠাৎ কেন বামুনেরা এত গো-প্রেম দেখাতে শুরু করেছে যে তারা নিরীহ মানুষকেও হত্যা করতে দ্বিধা করছে না?

Tuesday, 19 July 2016

আলোর বৃত্তে



আলোর বৃত্তে
শরদিন্দু উদ্দীপন
10.07.2016
 
শ্রাবণের ঘনঘোর হামা দেওয়া রাত
ঝগড়ুটে ঝঞ্ঝার ক্রমাগত হানা
জানলার ফাঁক দিয়ে বেয়াড়া বাতাস
শিস দিয়ে বলে যায় সামাল সামাল।


সামাল সামাল হো সামাল সামাল
দামাল মেঘের পাল ঘিরেছে আকাশ


ভাঙনের কুলে কুলে ঝপাং ঝপাং
হুড়মুড় ভেঙে পড়ে বিশ্বাসের বাঁধ
জোড়াতালি দেওয়া ঘরে অসহায় একা
কিলবিল সরীসৃপ ঘোরে চারিধার।

যেটুকু সলতে ছিল পুড়ে পুড়ে শেষ
হাত দিয়ে আগলে রাখি নিভু নিভু বাতি
ঝাপসা চোখ ভিজে যায় শ্রাবনের জলে
প্রতিক্ষায় তবু এক রাত জাগা পাখি।

একটু ভোরের আলো একটি প্রত্যূষ
একটি শিশুর মুখ উষ্ণ ভালবাসা
একমুঠো রোদ্দুর সেওতো অনেক
আলোর বৃত্তে তবু ঘুরে ফিরে আসা।




 যেতে হবে
শরদিন্দু উদ্দীপন


যেতে হবে আরো কিছু দূরে
আরো কিছু অগম প্রান্তর
আনাবিষ্কৃত মেরুচূড়া
পেঙ্গুইন ঈপ্সিত
অনন্ত আরো কিছু অসম নুড়ির সন্ধানে
যেতে হবে।

পথ পড়ে আছে বিস্তর
দুস্তর দুরন্ত উৎরাই
আঁতেলের অপকীর্তি
প্রত্যয় কুয়াশানিলীন
পড়ে আছে এই পথে
কালান্তক সাপেদের বিষাক্ত খোলস।
বহুতর পৃথিবীর ঊর্ধ্বতন ভাঁড়
ভাগাড়ে ভাঁড়ার ভরে গেছে

শ্রান্তি কেন ?
শ্রাবস্তী এখনো সুদূর
বুকে বাঁধ সাহস কাঁচুলি
তারপর হেঁটে চলো
কেমন সহজে হাঁটা যায়।

এখনো যক্ষের গাছে অনিকেত ফুল
ফাগুয়ার পরাগ বাহার
প্রজাপতি ঝিলমিল সরল বৈকালী
এখনো অলক্ষ্যে আছে
জোনাকির গাঢ় তমোবোধ।

যেতে হবে
আরো কিছু দূরে...
আরো কিছু অগম প্রান্তর
নীল নীল শৈবাল
অতলান্তিক সফেন সৈকত
ঈপ্সিত নুড়ির খোঁজ
পেঙ্গুইন পেয়ে যাবে
চলো যেতে যেতে

Wednesday, 13 July 2016

রবীন্দ্রনাথের “নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ” গোতমা বুদ্ধের ‘আত্তদীপ ভব” উপলব্ধির গভীরতম অনুরণনঃ




 “Attā hi attanō nāthō
kō hi nāthō parō siyā
attanā hi sudanténa
nātham labhati dullabham” (Dhammapada verse 160)

ত্ত মগ্নতায় নিজের অস্তিত্বের খোঁজে  রবীন্দ্রনাথ ছিলেন এক অনন্য পরিব্রাজক ভাবুক কবি। অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা, অজ্ঞানতা থেকে জ্ঞানের মার্গে বিচরণ এবং আত্তোপলব্ধির সর্বোচ্চ পরাকাষ্ঠায় উত্তীর্ণ হয়ে নিব্বানা লাভের মাধ্যমে সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্ত জীবন এবং বিশ্বমানবতার বিজয় কেতন ওড়ানোই ছিল তার অভিলাষ। “আত্তোদীপ ভব” মহামতি গোতমা বুদ্ধের এই প্রগাঢ় সনাতন বাণী তাঁর জীবন প্রকোষ্ঠের কন্দরে কন্দরে ছড়িয়ে দিয়েছিল এক শুচি শুভ্র চেতনার আলো। বুদ্ধের দয়া, প্রেম, করুণা এবং আত্তমগ্নতা তার জীবনকে এমন ভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিল তার প্রকাশ পাই “নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ” কবিতায়। কবিতাটি তার ২২ বছর বয়সের একটি অনন্য রচনা যা “কড়ি ও কোমল” কাব্যে প্রকাশিত হয়েছিল।  

Tuesday, 12 July 2016

কান্ডারী বল ডুবিছে মানুষ...



সাম্প্রতি আমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর বাৎসরিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের উপরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। জুন মাসের শেষে দেশ বিদেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলি যে প্রতিবেদন পেশ করেছে তা বাংলাদেশের পক্ষে লজ্জাজনক। এই সংগঠনগুলি জানিয়েছে যে মে মাসেই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৭৪জন মানুষ। রাজনৈতিক কারণে আহত ১৩৩২ জন। হত্যা করা হয়েছে ১৪জন শিশুকে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪০ জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে শিশু ২১ জন। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ২০১৬ব সালের প্রথম তিন মাসে শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল ২০ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৪ জনকে। রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে টাঙ্গাইলের নিখিল জোয়ারদার নামে এক ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বান্দারবনে হত্যা করা হয়েছে অহিংসের পূজারী এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে। ১লা জুনে প্রকাশিত এইবেলা ফাউন্ডেশন নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন তার প্রতিবেদনে জানাচ্ছে যে, মে মাসে সংখ্যালঘুদের উপর কম করে ৮৩টি জানঘাতী আক্রমণ করা হয়েছে জতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কম করে ৫১০টি পরিবার। অসংখ্য সংখ্যালঘু গ্রাম অবরুদ্ধ করে হামলা চালানো হচ্ছে। জমিজমা, ঘরবাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চলছে। ভিটে ছাড়া করা হয়েছে অসংখ্য পরিবারকে। সম্পত্তি দখল এবং গণধর্ষণের শিকার হয়েছে অসংখ্য সংখ্যালঘু নারী ও শিশু।

যে ভাবে সে দেশের সংখ্যালঘু, মুক্তমনা লেখক, সাহিত্যিক, নারী, শিশু ও সমকামীদের উপর একের পর এক জীবনঘাতী আক্রমণ সংঘটিত হয়ে চলেছে তা এক কথায় অমানবিক। পরিকল্পিত জাতিসংঘের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের উপর যে নির্মম রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে তা একবগগা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও নিকেশ নীতির ইঙ্গিত বহন করে। এই দীর্ঘমেয়াদী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে এটাই প্রমানিত হয় যে সরকার রাজনৈতিক কারণেই চাপাতি সংস্কৃতিকে পোষণ করে চলেছে এবং ইচ্ছে করেই ঘাতক এবং তাদের উন্মাদ ধর্মীয় গুরুদের নরহত্যার ময়দানে ছেড়ে দিয়ে রেখেছে। এই নরপিশাচদের প্রতি সরকারের নিস্ক্রিয়তা থেকে প্রমানিত হয় যে বাংলাদেশ বিশ্বমানবিকতার বোধ একেবারেই হারিয়ে ফেলেছে। বিশেষত গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার পরে বাংলাদেশের মাথায় সন্ত্রাসীদের আঁতুড়ঘর হিসেবে আর একটি পালক উঠে এসেছে। ডি কে হোয়াং নামের কোরিয়ান ভদ্রলোকের গোপন ক্যামেরা এবং আইসিস প্রকাশিত সন্ত্রাসীদের তালিকা থেকে একেবারে পরিষ্কার হয়েগেছে যে, বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সন্তান সন্ততিরাও চাপাতি সংস্কৃতি থেকে কাফের নিধনের জান্নাত সংস্কৃতিতে উঠে এসেছে।

এই নিতিহীন, নির্মম বাতাবরণে উৎসাহিত হয়ে উঠেছে আর একদল জল্লাদ। ইতিমধ্যে তারাও ত্রিশূল-তলোয়ারে ধার দিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে। নির্লজ্জ ভাবে হুঙ্কার দিচ্ছে যে ওপারে হিন্দুদের গায়ে নখের আঁচড় পড়লে এপারের সমস্ত মসজিদ মাদ্রাসা থেকে ইমাম শুন্য হয়ে যাবে। অর্থাৎ আমদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে এই জল্লাদেরা আসলে একে অন্যের পরিপূরক। একজনের রাজনৈতিক পুষ্টি বাড়াতে আর একজন সম্পূর্ণভাবে ইন্ধন যোগায়। নিরীহ জনগণকে ধর্মীয় আবেগে আবিষ্ট করে ভ্রাতৃঘাতি দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি করে। হাতে তুলে দেয় চাপাতি, খড়গ, ত্রিশূল-তলোয়ার। নিরীহ মানুষের লাশের উপরে প্রতিষ্ঠিত হয় এদের ক্ষমতার মন্দির-মসজিদ।

আদিম হিংস্রতার এই নিষ্ঠুর প্রবণতা দেখে নিজেদের সভ্য বলতে সত্যি আমাদের ঘৃণা হয়। রাষ্ট্র পরিচালকদের এই নির্লজ্জ আহম্মকি দেখে মনে হয়, জান্তব জীবন ছেড়ে আমারা এক পা ও এগোতে পারিনি। পৃথিবীর সত্যি বড় দুর্দিন আজ। নেতৃত্বের বড় অভাব। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান প্রাতিষ্ঠানিক পরিচ্ছদ ছেড়ে এখনো বেরোতে পারছি না। জড়ত্ব ঝেড়ে ফেলে এখনো উদাত্ত কন্ঠে বলতে পারছিনা, “কান্ডারী বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র”।