Pages

Saturday, 24 May 2014

চণ্ডালী অভিজ্ঞানঃ ১০ আহম্মক 
আমার দাদু ও দিদিমা আমার জীবনে চণ্ডালী সংস্কৃতির মস্তবড় দুই জোগানদার। সুযোগ পেলেই আমাকে বেকুপ প্রতিপক্ষ ধরে গালপাড়তে লেগে যায়। দয়া করে “গাল” কে গালাগালি হিসেবে নেবেন না। কেননা আমাদের “গাল (মুখ)” থেকে যে মারামারি হয় তার আদি রূপ হল “গালমারাও  (সাঁওতালী শব্দ, যার প্রকৃত অর্থ হল আলোচনা করা)”। আর এই “গালমারাও” থেকে পরবর্তী কালে গালগল্প, গালমারান ইত্যাদি ইত্যাদি শব্দগুলি চণ্ডালী শব্দ ভাণ্ডারে সঞ্চিত হয়েছে। তা দাদু দিদিমার কাছে আমার প্রতিপক্ষ সাঁজতে বেশ মজা লাগে। আর এর প্রতিফল হিসেবে জোটে দেদার এগাল অগাল। গোপনে বলে রাখি এই গাল গুলির মধ্যে এমন কিছু চণ্ডালী অভিজ্ঞান লুকিয়ে থাকে যার টানে ইচ্ছে করেই আমি মাঝে মাঝে দাদু দিদিমার কাছে গাল খেতে যাই।  
সাম্প্রতি নির্বাচনে মায়াবতী, মুলায়ম, লালু, নীতিশদের শোচনীয় পরাজয়ের পর দিদিমার মেজাজ একেবারে তিরিক্ষি। ফোন করে বলেছে, “শালা এতদিন ধরে যা যা খাইছিস আজ শোধ দিবি”। বুঝতে পেরেছি আজ আমার কপালে কিছু উপরি পাওনা আছে। আমি বুঝি দিদিমার এই ক্ষোভের কারণ। বুড়ি নিজের হাতে আঠা বানিয়ে ১৪ই এপ্রিল কমিটির পোষ্টার মারতো। পূজোর সময় বুকস্টল সাজিয়ে দাদু বিক্রি করতেন আম্বেদকরের নানা বই। বাড়িতে লোক আসতো দেদার। তারাও বুডির হাতে চা ও গাল খেত শুনেছি।
আজ গরম একটু কম। দাদু খালি গায়ে বারান্দার চেয়ারে বসে তাল ঠুকছিল কখন আমি আসবো। বুড়ি বিকেলে পান খেতে খেতে দাঁতে শাণ দিচ্ছিল আর পাকিস্তান থেকে মোদির শপথ অনুষ্ঠানে নোয়াজ শরিফ আসবে কি আসবে না তার বিতর্ক শুনছিল। আমি ঢুকতেই বুড়ি পানের ডিব্বা গুটাতে গুটাতে বলে ওঠে, “শালা কবে তোগে মুরোদ হবে অ্যা? চা ওয়ালা প্রধানমন্ত্রী হচ্ছে, আর তোরা শালা ভ্যারেণ্ডা বাজাচ্ছো’? আজ ২০ বছরের দেনা শোধ করবি। খাইয়া না খাইয়া তোদের জন্যি কাজ করছি। ফেত্তম যখন বাংলায় বিএস পি দাঁড়াল ২% ভোট পালো। আর এখন শালা ১%ও ভোট পাচ্ছ না। তোগে খাওয়াই হবে কি? 
বোঝেন আমার অবস্থাটি কি! শালা বুড়ি চাও খেতে দেয় গালও পাড়ে! দাদু আমাকে খানিকটা রিলিফ দেয়। এক্স মিটারি তো! সহযোদ্ধার বিপদ দেখলে তাকে বাঁচানোই যার কাজ। দাদু বলে, “আরে আমাদের নিজেদের মানুষরাইতো বড় আহম্মক। কালিদাসের জাত। কোন ভাবেই এদের কানে জল যায় না। জল ঢুলেও বোঝেনা। ইঁদুরগুলো বিড়ালকে রাজা বানিয়ে সুখে ঘুমাতে চায়”। এদের থেকে বড় আহম্মক আর কাদের বলবো বলতো! এরা হল আহম্মক নাম্বার পাঁচ।  
হঠাৎ দাদু বলেন, “নোট বইটা আনছোতো? আজ লিখে নাও আহম্মকের ছড়া। আমরা মরলি আর এসব পাবা না। লেখ।
অগত্যা বুড়ি রান্না ঘরের দিকে যায়। আর আমি দাদুর দেওয়া পুরানো ডাইরিতে লিখতে বসি আহম্মকের ছড়াঃ
১০ আহম্মক ঃ
আহম্মক নাম্বার ১ , যার শূন্য ট্যাক।
আহম্মক নাম্বার ২ , যে চালে তোলে পুঁই ।
আহ ম্মক নাম্বার ৩ , যে মাইয়াদের দেয় ঋণ।
আহম্মক নাম্বার ৪ , যে বিনা অন্যায়ে খায় মার।
আহম্মক নাম্বার ৫, যে পরের পুকুরে ছাড়ে মাছ।
আহম্মক নাম্বার ৬ , যে ঘরের কথা পরের কাছে কয়।
আহম্মক নাম্বার ৭ , যে বাবা মাকে দেয়না ভাত।
আহম্মক নাম্বার ৮ , যে জমি বেচ্যা কেনে খাট।
আহম্মক নাম্বার ৯ , যে শ্বশুর বাড়ি রয়।
আহম্মক নাম্বার ১০ , যে বউয়ের কথায় করে উঠ বস।

দাদু আহম্মক নাম্বার ৫ এর ব্যাখ্যা শুরু করে। প্লেট হাতে নিয়ে দিদিমা আমার কাছে বসে। খোসা চাড়ানো টুকরো টুকরো করে কাটা গোলাপখাস আমের প্লেটটি হাতে দিয়ে বলে, “তোরা কত নাম্বার আহম্মক কে জানে! সারাজীবন নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে বেড়াস”!

এই আমার প্রাপ্তি। সেরা প্রাপ্তি। দাদুর চণ্ডালী অভিজ্ঞান আর দিদিমার গাল।     

No comments:

Post a Comment