Pages

Monday, 11 February 2013


আশিস নন্দী মহাশয়কে একটি খোলা চিঠি
আপনাকে ধন্যবাদ আশিস নন্দী মহাশয়। ধন্যবাদ এই কারণে যে আপনি শাসক শ্রেণীর পক্ষ নিয়েও পশ্চিমবঙ্গের আর্থ সামাজিক

বিকাশের প্রকৃত সত্যটি উন্মোচন করে দিয়েছেন। জয়পুর করপোরেট সাহিত্য উত্সবে "সংরক্ষন বিরোধী মঞ্চে" আপনি বলেছেন যে, ভারতবর্ষে দুর্নীতির জন্য দায়ী হল এসসি, এস টি ও ওবিসি মানুষেরা । ... গত একশো  বছরে এসসি/এসটি ও ওবিসিরা পশ্চিমবঙ্গে শাসন ক্ষমতায় নেই তাই এখানে দুর্নীতি কম। অর্থাৎ আপনি পরিষ্কার করে উল্লেখ করেছেন যে,গত একশো বছর ধরে পশ্চিম বাংলায় এসসি/এসটি ও ওবিসিদের কোন আর্থ-সামাজিক বা রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হয়নি। ক্ষমতায়ন হয়েছে এই ৩ ক্যাটেগোরির বাইরের মানুষদের। আপনাকে আরো ধন্যবাদ জানানো যেত যদি আপনি এই তালিকার সাথে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরও জুড়ে দিতেন। তবেই বাংলার বহুজনকে চিহ্নিত করতে আমাদের সুবিধা হত।  

আপনার আলোচনা সূত্র ধরে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন এসে যায় যে, এই ৩ ক্যাটেগোরির বহুজন সমাজের বাইরের মানুষ কারা?

এবং বাংলার আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তাদের পরিচয় কি? বা অবস্থান কোথায়?
সেন্সাস, ২০০১ অনুশারে পশ্চিমবঙ্গে এসসি/এসটি ও ওবিসিদের জনসংখ্যাগত অবস্থান নিম্নরূপঃ
এসসি - মোট জনসংখ্যার- ২৩%
এসটি- মোট জনসংখ্যার- ৫.৫%
ওবিসি- মোট জনসংখ্যার- ৬০ % এর বেশী।          
ব্রাহ্মণ - মোট জনসংখ্যার- ২ %
কায়স্থ/বদ্দি -মোট জনসংখ্যার- ৩%
অন্যান্য- মোট জনসংখ্যার- ৬.৫%
এখানে অন্যান্য জনসংখ্যার মধ্যে আছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং অবাঙ্গালী মানুষেরা। যাদের অধিকাংশই আপনার উল্লেখিত শাসক

শ্রেনীর মানুষ নয়। অর্থাৎ নির্দ্বিধায় একথা বলা যায় যে,পশ্চিমবঙ্গের ৯৫% মূলনিবাসী বহুজন বাঙালীর ১০০ বছরের মধ্যে কোন

ক্ষমতায়ণ হয়নি। ক্ষমতায়ণ হয়েছে মাত্র ৫% মানুষের, যারা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে অবঙ্গীয়।  হয়  তারা আনিত,নতুবা

অনুপ্রবেশকারী অথবা বহিরাগত। তাই আপনার কথিত ১০০ বছর নয়, বরং পাল যুগ অবসানের পরবর্তী কাল থেকে বাংলার

মূলনিবাসী বহুজন কতিপয় অবাঙ্গালী শোষকদের কাছে পদানত,শৃঙ্খলিত অপমানিত।

এখন প্রশ্ন হল, আপনি কোন মাপক শলাকায় জরিপ করে দাবী করলেন যে,বাংলায় অবঙ্গীয় শাসকদের সুশাসনে দুর্নীতি কম।
এবং এই অবঙ্গীয়দের সুশাসনে বাংলার মূলনিবাসীরা দুধে-ভাতে প্রতিপালিত হচ্ছে। তাদের সন্তানেরা অপুষ্টি নিয়ে জন্মাচ্ছে না।
মহিলারা অ্যানিমিয়াতে ভুগছে না। তাদের সন্তানেরা সুশিক্ষিত  উঠছে। এবং অধিকাধিক সুযোগ পেয়ে বাংলাকে শ্মশান থেকে তুলে

এনে সোনার বাংলায় রূপায়িত করে ফেলেছে।
আপনি কি বোঝাতে চাইছেন যে,অবঙ্গীয় শাসকেরা যেহেতু মূলনিবাসীদের কাঙ্খিত ক্ষমতায়ানের সব কলস ভর্তি করে দিচ্ছে

তাই মূলনিবাসীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ানের কোন প্রয়োজন নেই। তেলা মাথায় বেশী করে তেল ঢাললে সে তেল গড়িয়ে গড়িয়ে

পায়ের তলার ধুলোকেও ভিজিয়ে দেবে। এতেই অনায়াশে ভর্তি হয়ে যাবে প্রান্তজনের পেট। কি দরকার এত কিছু বুঝে? কি

দরকার এত মাথাব্যাথার। বরং তারা সুশাসনের সুবাতাস নিয়ে মিলেনিয়াম, বিলেনিয়াম, সান সিটি বা ফ্যান সিটিতে ঘুরে

বেড়াক। জল-জঙ্গল -জমি বেঁচে দিক। চাষবাসের মত আদিম বৃত্তি ছেড়ে দিয়ে ন্যানো,ফিয়াট বা স্কর্পিওর চাকায় হাওয়া দিক।

রাস্তার পাশে দোকান খুলে বসুক। পিঁয়াজি, ফুলুরি মায় চাউমিন বিক্রি করুক । গ্রামের মেয়েগুলো ঘুঁটে গোবরের আল্পনা ছেড়ে

বিউটিপার্লার আর ম্যাসাজ সেন্টারে গিয়ে ট্রেনিং নিক। রাতের বেলা ব্রথেল গুলোতে অতিথিদের আপ্যায়ন করতে শিখুক।
উন্নয়নের এটাইতো গতিমুখ। সেটাই যখন তড়িৎ গতিতে তরান্বিত হচ্ছে, তখন মুলনিবাসীদের আলাদা সংরক্ষণ আলাদা করে

ক্ষমতায়ানের কোন দরকার নেই।  

ধন্য আশিস নন্দী। ব্রাহ্মন্যবাদীদের সাথে জলচলের সহবস্থানে আপনার এ অমোঘ পরিণতিতে আমরা বিস্মিত নই। বরং এটাই

কঙ্খিত। কেননা প্রসাদান্ন ভোগ করা ভৃত্যের কাছে প্রভুর মাহাত্ব কীর্তন নতুন কিছু নয়। দাসত্বের এ এক পুরাতনী বিধান। যেটা

আপনি স্বভক্তি পালন করেছেন। আপনার মঙ্গল ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি।          

আমি জানিনা আপনার সমাজতত্ত্বের বিনম্র অধ্যায়নে ইতিহাসের কতটা মূল্য আছে। শোষণ শাসনের কোন নীতি শ্রম এবং

উৎপাদক শ্রেণির কাছ থেকে তাদের জীবন-জীবিকা,আত্মপরিচয়,মান-মর্যাদা কেড়ে নিয়ে তাদের অপাঙ্কতেয়,অশুচি করে

দেয় তা আপনার আভিধানিক শব্দ সঞ্চয়নের মধ্যে আছে কিনা। আপনি হয়তো জেনে থাকবেন যে ১৯০৬ সালে মহাত্মা গুরু চাঁদের

নেতৃত্বে  বাংলা এবং আসামের লেপ্টেন্যান্ট ল্যান্সল টের কাছে একটি তালিকা দিয়ে বাংলার দলিত জাতিসমূহের জন্য ভাগিদারী

দাবী করা হয়। সেই তালিকায় বাংলার চন্ডাল সহ যে ৩১ টি জাতির নাম দেওয়া হয়েছিল সেখানে আপনার জাতি তিলি-নবশাখ

তালিকা ভুক্ত ছিল।        
১৯০৭ সালে আসাম বাংলার জন্য এই আইন কার্যকরী হয়। নেটিভরা শিক্ষা, চাকরী ও রাজকার্যে ভাগিদারী পায়।
১৯০৯ সালের মর্লি মিন্টো সংস্কার আইনে গুরচাঁদের দেখানো এই পথ সারা ভারতবর্ষের জন্য স্বীকার করে নেওয়া হয় এবং ১৯১৯

সালের মন্টেগু চেমস ফোরডের ভারত শাসন আইনে সমগ্র ভারতের জন্য তা কার্যকরী হয়। অর্থাৎ আপনার পূর্ব পুরুষদের শিক্ষা

সম্ভব হয়েছিল সংরক্ষণ আইনের জন্যই। আর আপনার এপর্যন্ত  অর্জিত সমস্ত সুখ্যাতির প্রতিটি পালকের গোড়া ছিল সংরক্ষিত।

কিন্তু,আপনি এখন সংরক্ষণ বিরোধী মঞ্চের প্রধান প্রবক্তা।
বেশ বেশ! সমগ্র মূলনিবাসীরা আপনাকে দেখে নিয়েছে! যা বোঝার বুঝে নিয়েছে। যা করবার করেছে। কিন্তু আমরা এখনো

অনেক উত্তর আপনার কাছ থেকে পাইনি।
আপনি কি আমাদের বুঝিয়ে বলবেন,কোন সুশাসনের কল্যাণে মূলনিবাসীদের সমস্ত সম্পদ, স্থাবর-অস্থাবর,জল-জঙ্গল

-জমি মুষ্টিমেয় অবঙ্গীয় শাসকদের হাতে পুঞ্জিভুত হয়? শ্রম এবং উৎপাদক শ্রেণীর পেটের উপর পা দিয়ে পরগাছা,

পরভোগীদের  স্বেচ্ছাচারের ইমারৎ ওঠে। এবং এই প্রক্রিয়াকে সুশাসন বলে মহিমান্বিত করার জন্য আপনার মত একজন জলচল

শূদ্রকে ময়দানে নামানো হয়। সময় পেলে বলবেন। অন্য কোথাও। অন্যখানে। আমরা মূলনিবাসী বঙ্গবাসী এসসি/এস টি,ওবিসি

সমাজ  আপনাকে গৌড়ীয় সুধা পান করতে দেখে ধন্য হব।
ধন্যবাদান্তে
শরদিন্দু উদ্দীপন
সোনারপুর, কোলকাতা-৭০০১৫০        

No comments:

Post a Comment