Pages

Monday, 11 February 2019

খাস বালান্দা বুদ্ধ বিহার এখন লাল মসজিদ নামে পরিচিত



ইউরেকা !!!
এমন কিছু তথ্যের সন্ধানে আমি ছিলাম যা খুঁজে পেতে আবার চন্দ্রকেতু গড়ে পৌঁছে গেলাম। পৌঁছে গেলাম বেড়াচাঁপা থেকে ডান দিকে হাড়োয়ায় । আসতে আসতে অদ্ভুত ভাবে চোখে পড়েছে রাস্তার দুপাশে পীর গোরাচাঁদের নামে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। যেমন পীর গোরাচাঁদ বস্ত্রালয়, পীর গোরাচাঁদ হোটেল, পীর গোরাচাঁদ স'মিল, পীর গোরাচাঁদ ভবন, পীর গোরাচাঁদ মোটর ট্রেনিং সেন্টার। প্রতিষ্ঠানের এমন নাম দেখে নিশ্চয়ই বোঝা যায় যে কোন এক সময় পীর গোরাচাঁদ নামে একজন ইসলাম প্রচারক এই অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তার নামই মানুষের কাছে এক ভরসা। অনেকটা অন্ধবিশ্বাসও বটে।
হাড়োয়াতে বিদ্যাধরী নদীর উত্তর পাড়ে পীর গোরাচাঁদের মাজার। মাজারের সামনে শ্বেতপাথরে আরবী, বাংলা এবং ইংরেজীতে লেখা আছে এই পীর গোরাচাঁদের জন্ম এবং মৃত্যু তারিখ। এখানে লেখা আছে সৈয়দ আব্বাস আলি (রহঃ) ওরফে পীর গোরাচাঁদ(১২৬৫-১৩৪৫)। অর্থাৎ ধরে নেওয়া যায় যে তিনি সুলতান আমলে আরো ২২জন আউলিয়ার সাথে বাংলায় ইসলাম প্রচার করতে আসেন। হাড়োয়া থেকে বাদিকে আরো প্রায় দুকিলোমিটার এগিয়ে গেলে খাস বালান্ডা গ্রাম। এই গ্রামেই অবস্থান করছে এই লাল মসজিদ।
বাংলায় সেন রাজত্ব চলে প্রায় ১৫০ বছর। এই সেনেরাই প্রবুদ্ধ বাংলায় প্রথম ব্রাহ্মণ্যবাদী শাসন কায়েম করে। তাঁরা বাঙালীর সমুদ্র যাত্রা বন্ধ করে দেয়। কৌলীন্য প্রথা কায়েম করে বাংলার মানুষকে গোলামে পরিণত করে। এই সময়ই বিশ্বভ্রাতৃত্বের বানী নিয়ে ইসলামের প্রচার করতে আসেন আউলিয়াগণ। এরা সকলেই অনেকটা সুফি মনোভাবাপন্ন। এদের শান্তির বানী সাথে বুদ্ধের অহিংসা অনেকটা মিলে যায়। ফলে প্রবুদ্ধ বাঙ্গালী রাজধর্ম হিসেবে ইসলামকেই হিন্দু ধর্ম থেকে শ্রেষ্ঠ বলে মেনে নেয়। অনেক জায়গায় মানুষ পীরদের সহায়তায় তাঁদের পুরাতন বুদ্ধ বিহারকে সংস্কার করে ইসলাম উপাসনা স্থল বানিয়ে নেয়। এমনই একটি বুদ্ধ বিহার এই লাল মসজিদ। বুদ্ধ বিহারটি চন্দ্রকেতু গড়ের সমসাময়িক কালের নির্মাণ। এর গায়ে বুদ্ধ যুগের শিল্পকলা এখনো বিদ্যমান। বিহারটির প্রবেশ দ্বারে যে দুটি পাথরের পিলার পাওয়া গেছে তাতে পালি এবং ব্রাহ্মী লিপিতে কিছু লেখা আছে। ঐতিহাসিকরা মনে করছেন হিন্দু রাজা চন্দ্রকেতুর দখলে থাকা প্রাচীন এই বুদ্ধ বিহারকে সাধারণ মানুষ রাতারাতি দখল করে নেওয়া হয় এবং এটিকে লাল মসজিদ (প্রাচীন টেরাকোটা দিয়ে সজ্জিত) হিসেবে ঘোষণা করে দেওয়া হয়।
না এখানে কেউ নামজ পড়েতে আসেন না। শুধু ফালগুণ মাসে সর্ব ধর্মের মানুষ এখানে মোমবাতী জ্বালাতে আসেন।
আজ এই লাল মসজিদ থেকে পাওয়া কিছু নিদর্শন এবং লোকমুখে এখানকার প্রাচীন নাম শুনে আমি এক আবিষ্কারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। সেটি অবশ্যই অন্যত্র আপনাদের জানব।