রাজা মহাবলীকে বধ করে আর্যগণ বা
দেবতারা যে বহ্নি উৎসবে মেতে উঠেছিল দক্ষিণ ভারতে সেই উৎসবের নাম দীপাবলি।উত্তর
ভারতে আবার একে দেওয়ালি বলা হয়। এই দেওয়ালির সাথে যুক্ত করা হয়েছে কাল্পনিক রামের অযোধ্যা
প্রত্যাবর্তন কাহিনী। অদ্ভুত ভাবে কাহিনীগুলির সময় কাল কাতি মাসের(সংস্কৃত
কার্ত্তিক) অমানিশা। ব্রাহ্মন্যবাদী সাহিত্যে এই দেওয়ালী বা দীপাবলির উল্লেখ পাওয়া
যায় গুপ্ত যুগে অর্থাৎ অষ্টম শতকে। তার আগে লিখিত কোন আর্য গ্রন্থে কিন্তু এই
কার্তিক মাসের অমাবস্যা পালনের কোন উল্লেখ নেই।
শারদীয় অমানিশার দিনে দীপোদান করে সকল
জীবের সাথে একাত্ত(একাত্ম নয়)অনুভব করা অসুর (আহুর বা প্রজ্ঞা) সংস্কৃতির একটি
প্রাচীন পরম্পরা। অন্ধকার থেকে আলোর সন্ধান করাই এই উৎসবের মূল অভিধা। এই মৌলিক
অভিধাকে মান্যতা দিয়ে অসুর রাজাগণও প্রজাদের জন্য রাজকোষ উন্মুক্ত করে দিতেন। এমনকি
নিজের গাত্র ভূষণও খুলে কপর্দক শূন্য হয়ে ঘরে ফিরতেন। এই প্রসঙ্গে ভগবৎ পুরাণ
বর্ণীত রাজা মহাবলীর প্রসঙ্গ উল্লেখযোগ্য। রাজা হর্ষবর্ধনও এই দিনে প্রজার
মঙ্গলার্থে তার রাজকোষ উজাড় করে দিতেন। রাজ্যের প্রত্যেক ঘরেই যেন জ্ঞান ও সমৃদ্ধি
সমান ভাবে পৌঁছে যায় তার উপর যত্নবান ছিলেন রাজা
হর্ষবর্ধন।
কৃষি ছিল অতীত ভারতের অর্থনীতির মূল
ভিত্তি। ভারতের কৃষিজাত পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার ছিল। ভারতের সুগন্ধি চাল একসময়
গুজরাট, কেরল, তামিলনাড়ু, উড়িষ্যা এবং বাংলা থেকে রপ্তানি হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া
এবং মধ্য প্রাচ্যের বন্দরে বন্দরে পৌঁছে যেত। বাংলার চট্টগ্রাম, তাম্রলিপ্ত,
সমুদ্রগড়, সপ্তগ্রাম ছিল এই সমুদ্র যাত্রার অন্যতম প্রধান প্রধান বন্দর। ধানের
সঙ্গে বাঁশের শিল্প, বেতের শিল্প, হাতির দাঁতের কারু শিল্প, কাঁসা, পিতল, তামার
হরেক রকম সামগ্রী ছিল ভিনদেশী বণিকদের কাছে লোভনীয় বস্তু। বিশেষ করে বাংলার চাল
এবং মসলিনের জন্য বিদেশী বণিকেরা অপেক্ষা করে থাকতেন।
ভারতীয় প্রজাপুঞ্জের সমৃদ্ধির অন্যতম শোপান ছিল কৃষি। তাই কৃষিকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল লোকোৎসব। কেরলের ওনাম, বাংলার আড়ম বা আড়ং, সোহারায়, বাদনা এই জনপ্রিয় লোকোৎসবের পরম্পরা। চক্রাকারে আবর্তিত এই অসুর অভিধাই কালচক্রযান। গুপ্ত যুগে এসে প্রচলিত কৃষি উৎসব এবং কালচক্কযানের দীপদান উৎসবকে হাইজ্যাক করে ব্রাহ্মণ্য খাতে প্রবাহিত করে নাম দেওয়া হল দীপাবলি বা দেওয়ালি।
ভারতীয় প্রজাপুঞ্জের সমৃদ্ধির অন্যতম শোপান ছিল কৃষি। তাই কৃষিকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল লোকোৎসব। কেরলের ওনাম, বাংলার আড়ম বা আড়ং, সোহারায়, বাদনা এই জনপ্রিয় লোকোৎসবের পরম্পরা। চক্রাকারে আবর্তিত এই অসুর অভিধাই কালচক্রযান। গুপ্ত যুগে এসে প্রচলিত কৃষি উৎসব এবং কালচক্কযানের দীপদান উৎসবকে হাইজ্যাক করে ব্রাহ্মণ্য খাতে প্রবাহিত করে নাম দেওয়া হল দীপাবলি বা দেওয়ালি।
কপিলাবস্তুতে দীপদান উৎসবঃ
গোতমা বুদ্ধের তখন ৩৫ বছর বয়স।
বোধিসত্ত্ব লাভ করার ৪৯ দিন পরে তিনি নিব্বানা লাভ করেন। এর পরেই তিনি তাঁর গুরু
আরাদ কালামের কাছে উপনীত হন তাঁর নিব্বানা পথের সন্ধান জানাতে। কিন্তু এসে শুনতে
পান গুরু আরাদ কালাম বিগত হয়েছেন। এরপর তিনি আসেন বারানসিতে। সেখানে হিরন্য বনে
মিলিত হন তাঁর পূর্ব পরিচিত পাঁচ সহচরের সাথে। তাদের কাছেই বিনিময় করেন তাঁর
নিব্বানা পথের দিশা পরম সত্য, পঞ্চশীল এবং অষ্টাঙ্গিক মার্গ। আর এখান থেকেই শুরু হয়
ভিক্ষু সংঘের পথ চলা।
একদিন শুদ্ধোদন শুনতে পান গোতমা এবং
তাঁর ভিক্ষুগণ কপিলাবস্তুর কাছে অবস্থান করছেন। শুদ্ধোদন রথে আরোহণ করে গোতমাকে
দেখতে আসেন। গোতমা তখন এক পল্লী বধূর কাছ থেকে ভিক্ষা চাইছিলেন। পল্লীবধূটি একটি
পোড়া আলু তুলে দিচ্ছিলেন বুদ্ধের
ভিক্ষাপাত্রে। পিতা শুদ্ধোদনের চোখে জল। তিনি বুদ্ধের কাছে এগিয়ে আসেন। তিনি জানান
যে শাক্য সংঘের কোন পুরুষ কোনদিন এভাবে ভিক্ষা করেন নি।
বুদ্ধ উত্তর দেন, “মহাজ্ঞানীরা এ ভাবে ভিক্ষা করেছেন, এবং এই ভিক্ষার মধ্য দিয়েই তাঁরা ধনী ও দরিদ্রের পার্থক্য উপলব্ধি করতে পেরেছেন”।
বুদ্ধ উত্তর দেন, “মহাজ্ঞানীরা এ ভাবে ভিক্ষা করেছেন, এবং এই ভিক্ষার মধ্য দিয়েই তাঁরা ধনী ও দরিদ্রের পার্থক্য উপলব্ধি করতে পেরেছেন”।
পিতা শুদ্ধোদন বুদ্ধকে কপিলাবস্তুতে
আমন্ত্রণ জানান। বুদ্ধ এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
সেদিন কার্তিক মাসের অমাবস্যা। শুদ্ধোদন কপিলাবস্তুর সমস্ত গৃহগুলিকে ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলেন। প্রজ্বলিত করেন আকাশ প্রদীপ। সন্ধ্যায় নাগরিকেরা একে অন্যের মঙ্গল কামনা করে প্রজ্বলিত দীপ আদান প্রদান করেন। আলোর মালায় সাজিয়ে তোলা হয় সমস্ত গিরিকন্দর, পথ প্রান্তর। দীপদানের নেপথ্যে এটাই ভারতবর্ষের প্রথম ঐতিহাসিক ঘটনা।
সেদিন কার্তিক মাসের অমাবস্যা। শুদ্ধোদন কপিলাবস্তুর সমস্ত গৃহগুলিকে ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলেন। প্রজ্বলিত করেন আকাশ প্রদীপ। সন্ধ্যায় নাগরিকেরা একে অন্যের মঙ্গল কামনা করে প্রজ্বলিত দীপ আদান প্রদান করেন। আলোর মালায় সাজিয়ে তোলা হয় সমস্ত গিরিকন্দর, পথ প্রান্তর। দীপদানের নেপথ্যে এটাই ভারতবর্ষের প্রথম ঐতিহাসিক ঘটনা।
সম্রাট অশোকের দীপোৎসবঃ
বুদ্ধের দেশনায় ৮৪০০০ গাঁথা রয়েছে। সম্রাট অশোক এই
চুরাশি হাজার গাঁথাকে মান্যতা দিয়ে ৮৪০০০ বিহার, স্তুপ, জনকল্যাণকারী প্রতিষ্ঠান
নির্মাণ করে সমস্ত জীবের কল্যাণে উৎসর্গ করেন। পাটলিপুত্র কাছেই তিনি নির্মাণ করেন
অশোকারাম বুদ্ধ বিহার। কার্তিক অমাবস্যার রাতে তিনি ৮৪০০০ মাটির প্রদীপ প্রজ্বলিত
করে এই দীপোৎসবের সূচনা করেন। সমস্ত নগরী, বিহার, স্তূপগুলিকে পুষ্পমালা ও আলোর
মালা দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়। ভিক্ষুগণ বুদ্ধের ধম্ম দেশনা থেকে সমস্ত পৃথিবীর জীবের
কল্যাণের জন্য মহান গাঁথাগুলিকে উচ্চারিত করেন। উচ্চারিত করেন বসুধৈবকুটুম্বকম এর
বাণী।সকলকে এই দীপোদান, গাসি, সোহরায় এবং বাদনা পরবের সুভেচ্ছা জানাই।
নমো বুদ্ধায়, জয় ভীম।
No comments:
Post a Comment