বাংলার কমিউনিস্টগণ একটা সময় গাইতেন "ওরা জীবনের গান গাইতে দেয় না।"
কিন্তু তাঁরা কয়দিন ধরে গাইতে শুরু করেছেন, "ওরা বড় দূর্গা দেখতে দিল
না...।" প্রগতিশীলতার স্বঘোষিত কান্ডারী কমিউনিস্টগণ তাঁদের পিতা
মার্কসসাহেবের মার্কামারা বক্তব্য পরিহার করে ধর্ম-আফম সেবনের উপকারীতা
অনুধাবন করেছেন। একটা ক্লাবের পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যেন জাতীয় শোক নেমে
এসেছে! তাই ফেসবুকের পাতায় পাতায় কেঁদে ভাসাচ্ছেন কিছু দূর্গা-ভক্ত।
ভক্তগণের তালিকায় উগ্র-হিন্দুত্ববাদীও যেমন আছেন, তেমন আছেন তথাকথিত
প্রতিক্রিয়াশীল কিংবা সেকুলার ডানপন্থী। কিন্তু এই গড্ডলিকা প্রবাহে
কমিউনিস্টদের দেখছি কেন? পুজো বন্ধ হওয়ায় অনেক কমিউনিস্টই নাকের জলে চোখের
জলে ভাসছেন। কেউ কেউ বলছেন, পুলিস মন্ত্রী নাকি দেবীদূর্গাকে বোরখা পরিয়ে
ছেড়েছেন! এই রকম মন্তব্য কি সম্প্রদায়িক উস্কানি মূলক নয়? রাজনৈতিক ক্ষুদ্র
স্বার্থসর্বস্বতা নয়? নাস্তিকতা প্রকৃত কমিউনিস্টের একটা বৈশিষ্ট, কারণ
ধর্ম শোষনের একটা যন্ত্র। তাহলে কি কমিউনিস্ট নামে যাঁরা নিজেদের পরিচয় দেন
তাঁদের বেশির ভাগই আদৌ কমিউনিজমে বিশ্বাসী নন, কিংবা আদৌ কমিউনিজম জানেন
না? নাকি, কমিউনিজম তাঁদের একটা মুখোস। মুখোসের আড়ালে রয়েছে
উগ্র-হিন্দুতাবাদী মুখ?
আসলে ধর্মীয় উন্মাদনার মধ্যে যুক্তিবাদ অসহায় হয়ে পড়েছে, খুঁজে নিয়েছে কুযুক্তির সান্তনা। কী সেই কু-যুক্তি? পুজোর আনন্দ নাকি মৌলিক অধিকার! কিন্তু একজনের আনন্দ অন্যের অসুবিধার কারণ হতে পারে না। আনন্দ করার জন্য যদি পথ অবরোধ করা হয়, তাহলে সেই আনন্দ বর্জনীয়। পাড়ায় পাড়ায় পথ আটকে যে সব পুজো হচ্ছে সে-গুলোকে কী করে সরকার অনুমতি দেয়? পুজোর মন্ডপ যদি খোলা মাঠে গড়ে ওঠে তাতে আপত্তি করা সাজে না, কিন্তু পুজোর জন্য সাত-আটদিন রাস্তা আটকে রাখা কি সমর্থন করা যায়? অন্ততপক্ষে অ্যাম্বুল্যান্স কিংবা ফায়ার ব্রিগেডের গাড়িকে নির্বিগ্নে চলার পথ দেওয়া সম্ভব না হলে তা যথেষ্ট বিপজ্জনক নয় কি? পথ পথচারীর জন্য। পথচারীর গতিরোধ করা কোন ধর্মের অধিকারের মধ্যে পড়ে না। যদি কোন আন্দোলনকারী কিংবা ধর্মাবলম্বীদল সেই অপচেষ্টা করে তাহলে সরকার বল প্রয়োগ করুক। প্রকৃত প্রগতিবাদী শুভবুদ্ধ সম্পন্ন জনতা সরকারকে সাধুবাদ জানাবে। কিন্তু ভারতবর্ষ, যেখানে ভোটের চিন্তায় সকল নীতি নির্ধারণ করা হয়, সেখানে কোন সরকারের সেই হিম্মত হবে কী?
বড় চেয়ে বড় দূর্গা পুজো বন্ধ হল কেন, সরকারের কোন গাফিলতি আছে কিনা-- সে-সব ভিন্ন প্রশ্ন। আসল চিন্তার বিষয় হল, দূর্গা-পুজোর এই জাঁকজমক সামাজিক, মানসিক, অর্থনৈতীক ও আদর্শগত অবক্ষয়ের কারণ হয়ে উঠছে কিনা! বন্ধের বন্ধা সংস্কৃতির মতই দূর্গাপুজোর উন্মাদনাও অনর্থ বয়ে আনছে কিনা অনুগ্রহ করে একটু ভেবে দেখবেন।
-------------------------------------------------------------
© প্রবীর মজুমদার।
আসলে ধর্মীয় উন্মাদনার মধ্যে যুক্তিবাদ অসহায় হয়ে পড়েছে, খুঁজে নিয়েছে কুযুক্তির সান্তনা। কী সেই কু-যুক্তি? পুজোর আনন্দ নাকি মৌলিক অধিকার! কিন্তু একজনের আনন্দ অন্যের অসুবিধার কারণ হতে পারে না। আনন্দ করার জন্য যদি পথ অবরোধ করা হয়, তাহলে সেই আনন্দ বর্জনীয়। পাড়ায় পাড়ায় পথ আটকে যে সব পুজো হচ্ছে সে-গুলোকে কী করে সরকার অনুমতি দেয়? পুজোর মন্ডপ যদি খোলা মাঠে গড়ে ওঠে তাতে আপত্তি করা সাজে না, কিন্তু পুজোর জন্য সাত-আটদিন রাস্তা আটকে রাখা কি সমর্থন করা যায়? অন্ততপক্ষে অ্যাম্বুল্যান্স কিংবা ফায়ার ব্রিগেডের গাড়িকে নির্বিগ্নে চলার পথ দেওয়া সম্ভব না হলে তা যথেষ্ট বিপজ্জনক নয় কি? পথ পথচারীর জন্য। পথচারীর গতিরোধ করা কোন ধর্মের অধিকারের মধ্যে পড়ে না। যদি কোন আন্দোলনকারী কিংবা ধর্মাবলম্বীদল সেই অপচেষ্টা করে তাহলে সরকার বল প্রয়োগ করুক। প্রকৃত প্রগতিবাদী শুভবুদ্ধ সম্পন্ন জনতা সরকারকে সাধুবাদ জানাবে। কিন্তু ভারতবর্ষ, যেখানে ভোটের চিন্তায় সকল নীতি নির্ধারণ করা হয়, সেখানে কোন সরকারের সেই হিম্মত হবে কী?
বড় চেয়ে বড় দূর্গা পুজো বন্ধ হল কেন, সরকারের কোন গাফিলতি আছে কিনা-- সে-সব ভিন্ন প্রশ্ন। আসল চিন্তার বিষয় হল, দূর্গা-পুজোর এই জাঁকজমক সামাজিক, মানসিক, অর্থনৈতীক ও আদর্শগত অবক্ষয়ের কারণ হয়ে উঠছে কিনা! বন্ধের বন্ধা সংস্কৃতির মতই দূর্গাপুজোর উন্মাদনাও অনর্থ বয়ে আনছে কিনা অনুগ্রহ করে একটু ভেবে দেখবেন।
-------------------------------------------------------------
© প্রবীর মজুমদার।