Pages

Thursday, 22 October 2015

ওরা বড় দূর্গা দেখতে দিল না... প্রবীর মজুমদার।

বাংলার কমিউনিস্টগণ একটা সময় গাইতেন "ওরা জীবনের গান গাইতে দেয় না।" কিন্তু তাঁরা কয়দিন ধরে গাইতে শুরু করেছেন, "ওরা বড় দূর্গা দেখতে দিল না...।" প্রগতিশীলতার স্বঘোষিত কান্ডারী কমিউনিস্টগণ তাঁদের পিতা মার্কসসাহেবের মার্কামারা বক্তব্য পরিহার করে ধর্ম-আফম সেবনের উপকারীতা অনুধাবন করেছেন। একটা ক্লাবের পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যেন জাতীয় শোক নেমে এসেছে! তাই ফেসবুকের পাতায় পাতায় কেঁদে ভাসাচ্ছেন কিছু দূর্গা-ভক্ত। ভক্তগণের তালিকায় উগ্র-হিন্দুত্ববাদীও যেমন আছেন, তেমন আছেন তথাকথিত প্রতিক্রিয়াশীল কিংবা সেকুলার ডানপন্থী। কিন্তু এই গড্ডলিকা প্রবাহে কমিউনিস্টদের দেখছি কেন? পুজো বন্ধ হওয়ায় অনেক কমিউনিস্টই নাকের জলে চোখের জলে ভাসছেন। কেউ কেউ বলছেন, পুলিস মন্ত্রী নাকি দেবীদূর্গাকে বোরখা পরিয়ে ছেড়েছেন! এই রকম মন্তব্য কি সম্প্রদায়িক উস্কানি মূলক নয়? রাজনৈতিক ক্ষুদ্র স্বার্থসর্বস্বতা নয়? নাস্তিকতা প্রকৃত কমিউনিস্টের একটা বৈশিষ্ট, কারণ ধর্ম শোষনের একটা যন্ত্র। তাহলে কি কমিউনিস্ট নামে যাঁরা নিজেদের পরিচয় দেন তাঁদের বেশির ভাগই আদৌ কমিউনিজমে বিশ্বাসী নন, কিংবা আদৌ কমিউনিজম জানেন না? নাকি, কমিউনিজম তাঁদের একটা মুখোস। মুখোসের আড়ালে রয়েছে উগ্র-হিন্দুতাবাদী মুখ?

আসলে ধর্মীয় উন্মাদনার মধ্যে যুক্তিবাদ অসহায় হয়ে পড়েছে, খুঁজে নিয়েছে কুযুক্তির সান্তনা। কী সেই কু-যুক্তি? পুজোর আনন্দ নাকি মৌলিক অধিকার! কিন্তু একজনের আনন্দ অন্যের অসুবিধার কারণ হতে পারে না। আনন্দ করার জন্য যদি পথ অবরোধ করা হয়, তাহলে সেই আনন্দ বর্জনীয়। পাড়ায় পাড়ায় পথ আটকে যে সব পুজো হচ্ছে সে-গুলোকে কী করে সরকার অনুমতি দেয়? পুজোর মন্ডপ যদি খোলা মাঠে গড়ে ওঠে তাতে আপত্তি করা সাজে না, কিন্তু পুজোর জন্য সাত-আটদিন রাস্তা আটকে রাখা কি সমর্থন করা যায়? অন্ততপক্ষে অ্যাম্বুল্যান্স কিংবা ফায়ার ব্রিগেডের গাড়িকে নির্বিগ্নে চলার পথ দেওয়া সম্ভব না হলে তা যথেষ্ট বিপজ্জনক নয় কি? পথ পথচারীর জন্য। পথচারীর গতিরোধ করা কোন ধর্মের অধিকারের মধ্যে পড়ে না। যদি কোন আন্দোলনকারী কিংবা ধর্মাবলম্বীদল সেই অপচেষ্টা করে তাহলে সরকার বল প্রয়োগ করুক। প্রকৃত প্রগতিবাদী শুভবুদ্ধ সম্পন্ন জনতা সরকারকে সাধুবাদ জানাবে। কিন্তু ভারতবর্ষ, যেখানে ভোটের চিন্তায় সকল নীতি নির্ধারণ করা হয়, সেখানে কোন সরকারের সেই হিম্মত হবে কী?
বড় চেয়ে বড় দূর্গা পুজো বন্ধ হল কেন, সরকারের কোন গাফিলতি আছে কিনা-- সে-সব ভিন্ন প্রশ্ন। আসল চিন্তার বিষয় হল, দূর্গা-পুজোর এই জাঁকজমক সামাজিক, মানসিক, অর্থনৈতীক ও আদর্শগত অবক্ষয়ের কারণ হয়ে উঠছে কিনা! বন্‌ধের বন্ধা সংস্কৃতির মতই দূর্গাপুজোর উন্মাদনাও অনর্থ বয়ে আনছে কিনা অনুগ্রহ করে একটু ভেবে দেখবেন।
-------------------------------------------------------------
© প্রবীর মজুমদার।

Sunday, 11 October 2015

সুরালোকে জয় জয় হে মহিষাসুর মর্দিনী !!!




বেদের সময় দেবতারা দুটো প্লানেট বানিয়েছিলেন।
স্বর্গলোক আর মর্তলোক।
দেবতারা আবার আকাশকে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন এই দুই লোকের মধ্যে।
কি বিশ্বাস হচ্ছেনা?

আরে বাবা বিশ্বাস করুন দেবতারা সব পারেন।
পারেন বলেই তারা আবার একটি প্লানেট তৈরি করলেন।
তার নাম দিলেন পিতৃলোক।
আপনারা বলতেই পারেন আবার “পিতৃলোক” কেন বাবা?
স্বর্গেতো খানাপিনার অভাব নেই!
অবাধ ফুর্তি আর অবাধ সুরা!
ওটাই তো দেবতাদের স্থায়ী ঠিকানা!

আরে বোঝেন না কেন?
ওটাতো অমর লোক!
ওখানে জন্ম নেই মৃত্যুও নেই!
আর ওখানে দেবতাদের সংখ্যা এতো বেশি!
বাপ রে বাপ অত সংখ্যায় উর্বশী নেই!
কোথাও না কোথাও দেবতাদের বংশ রক্ষা করতে হবেতো?

তাই দেবতারা মাঝে মাঝে মর্তলোকে আসেন।
লীলা করেন।
হাজার হাজার মর্তের নারীকে সুরাসংস্কৃতি শেখান।
দেবালয় স্থাপন করেন।
দেবদাসী সংগ্রহ করেন।
দেবালয়ের পাশেই সুরাপল্লী গড়ে তোলেন।
আবার এই সুরাপল্লীর সংস্কৃতিকে একেবারে অন্দরমহল পর্যন্ত নিয়ে যাবার জন্য পুরুতগিরি করতে হয়।
ঝক্কি তো কম নয় বাবা!
ঝুকিও আছে।
এই ঝুকি পূর্ণ কাজ করতে গিয়ে মর্তের নিয়মানুসারে দেবতাদের মৃত্যু হতে পারে।
ওহ থুড়ি! থুড়ি!
আগেই বলে রাখা উচিৎ ছিল যে, মর্তের বামুনেরা হল দেবতাদের এলিয়েন( যজুর্বেদ অনুসারে)।
তা এই মর্তের বাতাস লেগে দেবতাদের মৃত্যু হলেতো চলবেনা বাপু!
তাদের আবার স্বর্গলোকে ফিরতে হবে।
তাই স্বর্গলোকে ফেরার আগে বিশুদ্ধতা যাচাই করার প্রয়োজন।
কিন্তু ততদিন ওই দিদেহী এলিয়েনের একটা থাকার জায়গা করে দিতে হবে তো?
তাই পিতৃলোকের পরিকল্পনা।
ওই পিতৃলোকে অবস্থান কালে এলিয়েনেরা স্বর্গলোকে যাবার জন্য প্রেতাত্মা হয়ে ঘুরে বেড়াবে।
তাদের ক্ষেত্রজেরা পৃথিবীতে অবস্থানকারী আর একটা বামুন ডেকে আদ্যশ্রাদ্ধ করবেন।
গুষ্টির পিণ্ডী দেবেন।
তারপর পিতৃপক্ষের শেষ হবে।
সুচনা হবে মাতৃপক্ষের।
অর্থাৎ পৃথিবীতে আরো কত মাকে সুরা সংস্কৃতির আওতায় নিয়ে আসা যায়, আরো কত সুরাপল্লী বানানো যায়, সুরা সংস্কৃতিকে একেবারে প্রত্যহিক করে তোলা যায় তার প্রস্তুতি সুরু হবে। এই মহান কাজকে আলয় আলয় পর্যন্ত ধ্বনি প্রতিধ্বনিত করে তুলতে হবে। মানুষের ঘুম ভাঙবে মহালয়ার এই পূন্য সুরাসংস্কৃতির আহ্বানে। “ইয়া দেবী সর্ব ভুতেসু মাতৃরূপেন সংস্থিতা”।
১৯৩১ সালে মর্তের এলিয়েনরা বাংলার বুকে এমনি এক সুরা সংস্কৃতির অবতারণ করলেন। পিতৃকুলকে সুরালোকে পাঠানোর জন্য, মর্তের মাকে সুরাপল্লীর উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য তৈরি হল মহিষাসুর মর্দিনীর উপখ্যান।

www.durgautsav.com/mahalaya-mahishasura-mardini-full-mp3-download/
 
 https://www.google.co.in/url?sa=t&rct=j&q=&esrc=s&source=web&cd=12&cad=rja&uact=8&ved=0CE8QtwIwC2oVChMIy8SBkoC8yAIV0EqOCh3XwQAd&url=https%3A%2F%2Fwww.youtube.com%2Fwatch%3Fv%3D1X2kjzMjMC4&usg=AFQjCNHqEUrPmz-n_aRS3LlsSEjHr3295g&sig2=SCPSDLEj0KPCnDJyppHuHA
বানীকুমার রচনা করলেন স্তোত্র।
পঙ্কজ মল্লিক দিলেন সুর ও তাল।
বীরেন্দ্র কুমার ভদ্র দায়িত্ব নিলেন গ্রন্থনার।
গন্ধর্ব, কিন্নর, কিন্নরীদের সুললিত কণ্ঠে আকাশবাণীর মাধ্যমে ধ্বনিত হল “আয়ে গিরি নন্দিনী নন্দিতা মেদিনী... জয় জয় হে মহিষাসুর মর্দিনী...।।

Monday, 5 October 2015

বাজাও ডাংকা উড়াও নিশান : শরদিন্দু উদ্দীপন



 









শরীর জুড়ে ঘুন পোকা
অহরাত্র জীর্ণ করছে হাড়মাস
পঞ্চ ইন্দ্রিয় অসাড়
তাই রূপ রস গন্ধ বিবেচনা যুক্তিহীন।
এমন ঘোরের ঘরেই চোর ঢোকে বারবার
সিঁধেল ছিচকে নানা বেশে
লুটে নেয় পিতৃধন
সঞ্চিত পুঁজি
লুটে নেয় আত্তপরিচয়।
তারপর...
গায়ে ছেড়া কাঁথা
কাঁধে ভাঙ্গা ঢোল
পারের কান্ডারী খুঁজে এ ঘাট ওঘাট
অবিন্যস্ত দিশাহীন
মুখে হরিবোল!!

Thursday, 1 October 2015

অসুর ধম্ম ও দর্শনঃ




সুরাসুর ধারণা এবং দ্বন্দ্বটি ব্রাহ্মন্যবাদী সাহিত্যেরই উৎপাদিত ফসল। মূল ভারতীয় অসুর সাহিত্যে বিশেষ করে আজীবিকা, চার্বাক, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ বা মতুয়া সাহিত্যে এই দ্বন্দ্বকে একেবারে ধর্তব্য বিষয় হিসেবে দেখা হয়নি। মূল ভারতীয় দর্শনেরর ধারা বরং সমগ্র জগতের মূর্ত-বিমূর্ত, জীব-জড়, অক্ষয়-ক্ষয়িষ্ণু, অচল-চলমান বস্তু জগতের মধ্যে প্রেম, প্রীতি, দয়া, মায়া, করুনা ও ক্ষমার মধ্য দিয়ে বসুধৈবকুটুম্ব নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বুকের মাঝে বিশ্বলোকের সাড়া পাবার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে
শৈশব থেকেই উপলব্ধি করছি যে, সুর এবং অসুর দ্বন্দ্বটি বাংলা তথা ভারতবর্ষে একটি প্রবাহমান বিবাদের প্রকট অংশ। এটিও উপলব্ধি করতে পারছি যে এই দ্বন্দ্বদের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফলেই মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ সুরালোকে উন্নিত হয়ে সমস্ত মধুভান্ডকে চেটাপুটে খেয়ে সাবাড় করছে আর একদল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে অসুর বা অশুভ শক্তির প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারার চেষ্টা হচ্ছে। জীব সত্তার সার্বিক বিকাশের কারণেই এই সুর এবং অসুর দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।

সুর, সুরা ও সুরালোকঃ   
১।‘হে ইন্দ্র এবং অগ্নি ...হে সর্ব ক্ষেত্রের বীরগণ, এখানে আস এবং যে সুরা (সোমরস) ঢালা হয়েছে তা পান করো’।। ঋগ্বেদ ১।১০৮।৮
২। “হে ইন্দ্র! তুমি সুরাপানে মত্ত হয়ে যজ্ঞবিহীন জনসংঘদের পরস্পর বিরোধী করে উভয়কেই বিনাশ করো”। ঋগ্বেদ ৮।১৪।১৫
৩। “হে ইন্দ্র, যারা যজ্ঞাদি অনুষ্ঠান করে না, যারা ব্রাহ্মণ ও মন্ত্রাদির প্রতি বিদ্বেষ করে তারা সঙ্গতি সম্পন্ন হলেও তাদের অন্ধ করে বিনাশ কর”।
ঋগ্বেদ ৫।৪২।৯
৪। “হে ইন্দ্র, তোমার ঘূর্ণায়মান অস্ত্রের আঘাতে ঐ সব অস্ত্ররহিত অসুর যারা দেবতা ও ব্রাহ্মণ বিরোধী তাদের তাড়িয়ে দাও”।  ঋগ্বেদ ৮।৯৬।৯
৫। “হে ইন্দ্র, তুমি মহান। তুমি অসুরদের কাছ থেকে লুন্ঠন করা ভোগ্যবস্তু ও ধন সকল দান করে পুরোহিতদের ধনবান করো”। ঋগ্বেদ ৮।৯৭।১
সুরসমাজ বা দেবসমাজের চরিত্র এবং দর্শন বোঝাতে  ঋগ্বেদ থেকে  কয়েকটি শ্লোক এখানে দেওয়া হল। প্রিয় পাঠকদের এগুলিকে যাচাই করে নেবার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এগুলি থেকেই অনুমান করতে পারবেন যে সুরসমাজ ছিল লোভী, লুণ্ঠনকারী, ভোগী, বর্বর, যজ্ঞব্রতী, ব্রাহ্মন্যবাদী, অসহিষ্ণু এবং হত্যাকারী।

অসুর, অসুরা ও অসুরলোকঃ
বেদের বর্ণনা থেকেই পরিষ্কার যে অসুর সমাজ ছিল প্রজ্ঞাবান ও যুক্তিবাদী। অসুরেরা ছিলেন যজ্ঞরহিত, অস্ত্ররহিত বা নিরস্ত্র। এদের ধম্ম ছিল আলাদা। দেবসমাজ (এক জাতীয় বর্বর যাযাবর মানুষ। আবেস্তাতে দেবতাদের দুশ্চরিত্র বলে বর্ণনা করা হয়েছে) তাই এদের অন্য ব্রত বলে অভিহিত করেছে।

সব থেকে মজার ব্যাপার হল যে, সুরাপানের মধ্য দিয়ে দেবতারা যে শক্তি সঞ্চয় করত তা যাতে কিছুতেই অসুরদের হস্তগত না হয় তার জন্য দেবতারা সদা সতর্ক ছিল।
অর্থাৎ অসুর সমাজের মধ্যে যে সুরাপানের প্রচলন ছিলনা তা সহজেই বোঝা যায়। অথবা সমাজ বিবর্তনের কোন এক বাকে এসে অসুর সমাজের মধ্যে যে সুরাপানের অভ্যাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তা অনুমান করা যায়।   
অসুর রাজা ত্বস্টা আবার এই সুরা উৎপাদন করার চেষ্টা করলে ইন্দ্র ত্বষ্টার সব সুরা পাত্র ভেঙ্গে ফেলেছিল। (ঋগ্বেদ ১০।৮।৯) সমুদ্র মন্থন থেকে জানা যায় কি ভাবে সুধা বা মদ উৎপন্ন করার পরেও অসুরদের  বঞ্চিত করা হয়েছিল।
 
সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল আসুরেরা ছিলেন অস্ত্ররহিত। পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় যে অসুর দর্শন এমন উচ্চমার্গে উন্নিত হয়েছিল যে ন্যায়ের শাসন বলবত করতে কোন অস্ত্রের প্রয়োজন হত না। প্রজ্ঞা এবং ন্যায় দণ্ডই ছিল অসুর শাসনব্যবস্থার মূল স্তম্ভ।

মানুষে মানুষে বিভেদের বেড়া ভেঙ্গেছিল অসুর সমাজ। সাম–দাম-দন্ড-ভেদ নয়, বৈরি দিয়ে বৈরিতাকে ধ্বংস নয়, বরং ভালবাসার মধ্য দিয়ে হৃদয় জয় করে শত্রুতার অবসান ঘটানোই ছিল অসুর সমাজের সনাতন বিশ্বাস। এই সনাতন বিশ্বাস বা ধম্মের বানীই আমরা শুনতে পেয়েছিলাম মহামতি গোতমা বুদ্ধের কাছে। রোহিনী জল বিবাদ নিয়ে শাক্য ও কৌল্য সংঘের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ আসন্ন হলে তিনি শুনিয়েছিলেন অমর ভালবাসার সেই চিরন্তন বাণী।           
নাহি বেরানা বেরানি সম্মন্তিধ কুদাচনং
অবেরেনা সম্মন্তি এস ধম্ম সনাতন, আত্তদন্ড সূত্ত
 “Dhamma as I understand it consists in recognizing that enmity does not disappear by enmity. It can be conquered by love only”
বৈরি দিয়ে বৈরিতাকে ধ্বংস করা যায় না। একে কেবলমাত্র প্রেম ও ভালবাসার মধ্য দিয়ে জয় করা সম্ভব। সমস্ত সত্তার পারস্পরিক সম্পর্কের মূলাধার হল প্রেম। প্রেমই আসল ধর্ম। হত্যা কখনো কারো ধর্ম হতে পারেনা। ক্রোধ, ঘৃণা কখনো ধর্মের পরিভাষা হতে পারেনা, পরন্তু প্রেম, ভক্তি, দয়া, করুণাই হল ধর্মের আকর।

অসুর ধম্মের এই বেগবান প্রবাহ যুগে যুগে নিষ্পেষিত হলেও ফল্গুধারার মত বয়ে চলেছে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের কদাকারের গ্লানি ঝেড়ে ফেলার জন্য ভগবতো হয়েছেন যুগ পুরুষেরা। ( ভগ শব্দের অর্থ যোনি বা সৃজন ক্ষেত্র। এখানে ভগবতো কথাটির অর্থ হল যিনি পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাই তিনি ভগবান। ভগবান ঈশ্বরের প্রতিশব্দ নয়)। এবং এই সব যুগ পুরুষেরাই তাদের নিজেদের কর্ম ধারার মাধ্যমে ধম্ম বা জীবন শৈলীকে আবার কলুষ মুক্ত করেছেন। ক্যাটালহক, মেহেরগড়, সুমের, মেসোপটেমিয়া, হরপ্পা, মহেঞ্জোদড়ো, গঙ্গারিডি প্রভৃতি সভ্যতার ধাপে এসে তারাই উড়িয়েছেন জীব ধম্মের সেই সনাতন নিশান।
জীবে দয়া নামে রুচি মানুষেতে নিষ্ঠা।
ইহা ছাড়া আর যত সব ক্রিয়া ভ্রষ্টা।।