সমাজ সেবায় অনন্য অবদান রাখার জন্য সাবিত্রী-ফতিমা উৎকর্ষ
সম্মান-২৫ পেলেন বীরভূম কন্যা আয়েশা খাতুন
শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজ সংস্কার এবং যুক্তিবাদের
প্রসার ঘটাতে যে দুই মহীয়সী নারী, সাবিত্রীবাই ফুলে এবং ফতিমা শেখ যে অনন্য ভুমিকা
স্থাপন করেছিলেন অজ্ঞাত কারণে আজও তা উন্মোচিত হয়নি। তাঁদের আন্দোলনের সুফল ভোগ
করলেও আজও সমাজের কাছে তাঁরা অপরিচিত রয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই দুই নারীকে
জানানো হয়নি যথার্থ সম্মান।
এই ঢেকে রাখা ইতিহাসকে স্বমহিমায় তুলে
এনে সাবিত্রীবাই এবং ফতিমা শেখের অবদানকে সম্মান জানানোর জন্য ভয়েস অফ বহুজন “SAVITRI-FATIMA AWARD OF EXCELLENCE” নামে
একটি সম্মাননা ঘোষণা করে। ৯ জন বিশিষ্ট সমাজসেবী এবং শিক্ষাবিদদের নিয়ে ঘঠিত হয়
একটি কমিটি। প্রাপ্ত ৬টি বায়োডাটার উৎকর্ষতা বিচার করে এবং নানাবিধ উপায়ে তথ্য
সংগ্রহ করে বিচারকেরা আয়েশা খাতুনকে “SAVITRI-FATIMA AWARD OF EXCELLENCE-25” এর
জন্য মনোনীত করেন।
“Go,
Get Education
Be self-reliant, be industrious
Work, gather wisdom and riches,
All gets lost without knowledge
We become animal without wisdom,
Sit idle no more, go, get education
End misery of the oppressed and forsaken,
You’ve got a golden chance to learn
So learn and break the chains of caste.
Throw away the Brahman’s scriptures fast”.
— Poem by Savitribai Phule (More poems at Poems by
Savitribai Phule)
৮ই
মার্চ, পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দুনিয়া জুড়ে নারীদের সমানাধিকারের এই মাইল
ফলক প্রথিত হওয়ার অর্ধশত বছর আগে ভারতের মাটিতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সমস্ত
নিপীড়ন থেকে নারীকে মুক্ত করার জন্য, জাত ব্যবস্থা এবং ব্রাহ্মণবাদের শিকড় শুদ্ধ উপড়ে
ফেলার জন্য যারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছিলে এমন দুই মহীয়সী নারী হলেন সাবিত্রীবাই ফুলে এবং ফতিমা শেখ।
সাবিত্রীবাই ফুলে জন্মগ্রহণ করেন ১৮৩১ সালের ৩রা জানুয়ারী এবং ফতিমা শেখ জন্মগ্রহণ করেন ১৮৩১ সালের ৯ই জানুয়ারী। সার্বজনীন শিক্ষার দাবী নিয়ে আন্দোলন শুরু করার আগে জ্যোতিরাও ফুলে সাবিত্রীবাই এবং ফতিমাকে সিন্থিয়া ফারার নামে একটি অ্যামেরিকান মিশনে শিক্ষা সহায়ক প্রশিক্ষণ নিতে পাঠান। ১৮৪৭ সালে সাবিত্রী ফুলে প্রথম বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলে সেখানেই শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন ফতিমা শেখ। ১৮৪৮ থেকে ১৮৫৩ তাঁরা মাহার, মাংগ, মুসলিম, শূদ্র
এবং অতিশুদ্রদের জন্য ১৮টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়ের পাশাপাশি দুই জনের
ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৮৫২ সালে গড়ে ওঠে মহিলা
সেবা মণ্ডল। বিধবা হলেই নারীর মাথা মুন্ডন করে দেওয়া, স্বামীর সাথে সহমরণে বাধ্য
করা, অবাঞ্ছিত সন্তান আসলেই তাঁকে হত্যা করা অথবা নৃশংস নির্যাতন করে সমাজ থেকে দূর
করে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রবল আন্দোলন শুরু করেন সাবিত্রী ফুলে এবং
ফতিমা শেখ। আওয়াজ তোলেন, “হাম ভারত কি নারী হ্যায়, ফুল নাহি, চিঙ্গারী হ্যায়”।
বাল্য বিবাহের কারণে এই সময়ে বাল্য বৈধব্য একটি প্রবল সমস্যা ছিল। ছিল অবাঞ্ছিত মাতৃত্বের
সমস্যা। সাবিত্রীবাই ফুলে এবং ফতিমা শেখ কন্যা সন্তান হত্যা, শিশু হত্যা এবং অবাঞ্ছিত
মাতৃত্বের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য “বাল হত্যা প্রতিবন্ধক গৃহ” নামে একটি আশ্রম
প্রতিষ্ঠা করেন। এমনই এক কুমারী কন্যা কাঁসিবাইয়ের সন্তান যশবন্তকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ
করেন সাবিত্রীবাই ফুলে।
১৮৭৩
সালে জ্যোতিরাও ফুলে সত্য শোধক সমাজ গঠন
করলে সাবিত্রী ফুলে এবং ফতিমা শেখ এই সংগঠনের নারী শাখার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সাবিত্রী
ফুলে নারী বাহিনীর সভানেত্রী হিসেবে সমাজ সংস্কারের কাজ শুরু করেন।
অত্যন্ত
দুঃখের বিষয় যে, এমন দুই মহামানবী আজও ইতিহাসে উপেক্ষিত থেকে গেছেন। রাষ্ট্রের পক্ষ
থেকে তাঁদের স্মরণ করে এবং তাঁদের আরদ্ধ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কোন উল্লেখযোগ্য
উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বহুজন সমাজের এই অনালোকিত অধ্যায়কে তুলে ধরতে এবং এই দুই মহীয়সী
নারীর অবদানকে যথাযথ মর্যাদা দিতে Voice of Bahujan এর পক্ষ থেকে ২০২৫ সাল থেকে শুরু
করা হল SAVITRI- FATIMA Award of Excellence প্রদান।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট
শিক্ষাবিদ দেবী চ্যাটার্জী, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ডঃ সনৎ নস্কর, অধ্যাপিকা ডঃ মেরুনা মুর্মু,
নৃতাত্ত্বিক কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়, সমাজসেবী মহঃ নুরুদ্দিন শাহ, কবি কল্যাণী ঠাকুর,
নারী আন্দোলনকর্মী চন্দ্রাস্মিতা এবং ইউআরআই এর রিজিওনাল সঞ্চালক বিশ্বদেব
চক্রবর্তী।
শিক্ষাবিদ দেবী চ্যাটার্জী বলেন যে, “সাবিত্রীবাই ফুলে এবং ফতিমা শেখ নারী শিক্ষা
এবং সমাজ সংস্কারে যে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছিলেন তা বিরল। আজও তার যথার্থ স্বীকৃতি
দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে এই দুই নারী যে দৃষ্টান্ত
স্থাপন করেছিলেন সেটাই ভারত, সেটাই আমাদের দেশ। এই দুই নারীকে যথাযথ মর্যাদা দেবার
জন্য Voice of Bhujan যে “SAVITRI-FATIMA AWARD OF EXCELLENCE” ঘোষণা করেছে তা
অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
শিক্ষাবিদ ডঃ সনৎ নস্কর উল্লেখ করেন যে, “উৎকর্ষতা এবং সময়ের নিরিখে সাবিত্রী ফুলে
সার্বজনীন শিক্ষা ক্ষেত্রে যে নজির সৃষ্টি করেছিলেন তার জন্যই ৩রা জানুয়ারী অর্থাৎ
সবিত্রীবাই ফুলের জন্মদিনকে শিক্ষক দিবস হিসেবে মান্যতা দেওয়া হোক”।
অধ্যাপিকা মেরুনা মুর্মু জানান যে, আয়েশা খাতুনকে মনোনীত করে সুযোগ্য হাতেই তুলে
দেওয়া হচ্ছে SAVITRI-FATIMA AWARD OF
EXCELLENCE-25 ।
“আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি। আরো, আরো অনেক আগেই
সাবিত্রীবাই ফুলে এবং ফতিমা শেখকে আমাদের সম্মান জানানো উচিৎ ছিল। ভয়েস অফ বহুজন
এই দুই নারীর নামে অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করে এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।
VOICE OF BAHUJAN এর অধিকর্তা শরদিন্দু বিশ্বাস জানালেন যে,
“সমাজ সেবা, সমাজ সংস্কার এবং সাহিত্যে অসামান্য কৃতিত্ব রাখার জন্য আয়েশা খাতুনকে SAVITRI- FATIMA Award of Excellence-25 দিতে পেরে আমরা গর্ব অনুভব করছি। আমরা মনে করি শিক্ষিত এবং আদর্শ নারী, আদর্শ সমাজ,
আদর্শ জাতি, আদর্শ দেশ গড়ে তুলতে পারে। দুই মহীয়সী নারীর নামে এই সম্মাননা সামাজিক,
সাংস্কৃতিক এবং বৌদ্ধিক কাজের জগতে নারীদের উৎসাহিত করবে।“
প্রতিবছর ৪ঠা জানুয়ারীতে একজন নারীকে এই সম্মান প্রদান প্রদান করা হবে। যে নারীরা শিক্ষা,
সংস্কৃতি ও সমাজসেবায় অনন্য অবদান রাখছেন তাঁদেরকে বায়োডাটা সহ কাজের তথ্য পাঠাতে অনুরোধ
জানান সংগঠকেরা।