হোলি উৎসবের নেপথ্য কাহিনী
“কাড়া কাডায় জবে আকান গাং নাইরে,
গাং নাইরে হালে জোড়া সামুদ্রে”
এর পরেই চলবে জল খেলা আর বসন্ত ঋতুকে আবাহনের সুরেলা সেরেং,
“বাহাবোঙ্গা মুলু এনা সারজোমদারে রে বাহাবোঙ্গা মুলু এনা”......।
মাঝি জাহের এরাকে সন্তুষ্ট করবেন নতুন পল্লব নতুন ফুল দিয়ে। তারপর সারাদিন রাত ধরে নাচ আর গান। প্রকৃতির সাথে নিজেদের একাত্মতা অনুভব করার এই উৎসব বাহা। কোন কোন কৌমিক সমাজে এটিই আবার শারুল বা শারুল পরব।
কিন্তু এই উৎসবই এখন হোলি উৎসব নামে এক জিঘাংসার উৎসব হয়ে দাড়িয়েছে এবং জাতপাত ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের স্বেচ্ছাচারে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি ব্রাহ্মন্যবাদীরা হোলি উৎসবের মধ্যে এমন কিছু আচার ঢুকিয়ে দিয়েছে যা মূলনিবাসীদের কাছে অত্যন্ত অমর্যাদাকর ও তাদের প্রতি ঘৃণার প্রতীক। এর একটি আচার হল দোল বা হোলির আগের দিন বুড়ির ঘর জ্বালানো।
কী আছে এই বুড়ীর ঘর জ্বালানোর নেপথ্যে?
কে এই হোলি বা হোলিকা?
বাঙালীর জানার দরকার নেই। কারণ জানতে পারলে আকন্ঠ মদ্যপান করা যাবেনা অথবা বাধ সাধবে তার আক্রান্ত বিবেক। বিবেকহীন বাঙালীর এই ভীমরতি আজ তার আত্তপরিচয় ও আত্তগৌরব ফিরে পাওয়ার পথে সবচেয়ে কঠিন অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শোনা কথায় বিশ্বাস করা মূলনিবাসীদের এক দুরারোগ্য ব্যাধি। এবিষয়ে তারা কাছাখোলাও বটে। ফলে গালগল্পের জাল বুনে এই কাছাখোলাদের সার্বিক বেড়ি পরাতে পেরেছে বামুনেরা। নিপুন দক্ষতায় মূলনিবাসীদের উপর প্রতিটি আক্রমণকে তারা পরিবর্তিত করেছে ধর্মীয় আখ্যানে। এবং মূলনিবাসীদেরই কোন বড় উৎসবের দিনে তাদের বিজয়বার্তা কে প্রতিষ্ঠিত করে একদিকে ধ্বংস করে দিয়েছে লোকায়ত সংস্কৃতি অন্যদিকে হাইজ্যাক করে নিয়েছে প্রবাহমান প্রম্পরা। বেদ, উপনিষদ, রামায়ন, মহাভারত বা পুরাণগুলি এই চুরি বিদ্যার সংকলিত গুপ্তধন।
হোলিকা এই গুপ্তধনের অন্যতম কাহিনী। যা মহাভারত ও পুরাণগুলিতে সংকলিত হয়েছে।
.jpg)
রাজা হিরন্যকের বোন ছিলেন হোলিকা। এই ষড়যন্ত্রের কথা তিনি জানাতে পেরে যান এবং প্রহল্লাদকে বাঁচানোর জন্য তাকে নিয়ে তিনি সুরক্ষিত স্থানে চলে যান। কিন্তু আর্য দস্যুদের কুটিল নজর এড়িয়ে যেতে তিনি ব্যর্থ হন। দস্যুরা তাঁকে ঘিরে ফেলে। তাঁকে ধর্ষণ করে। তার রক্ত নিয়ে খেলতে থাকে এবং গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়।

এই ভাবে বামুনদের দ্বারা প্রতিটি হত্যা ও জিঘাংসাকে ঐশ্বরিক মহিমায় অলংকৃত করা হয়েছে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে আমাদের সংস্কৃতি। মিথ্যাচারীদের ধাপ্পায় বিভ্রান্ত হয়ে আমরা প্রকৃতি ও নিজেদের সংস্কৃতি থেকে দূরে চলে গেছি।