ধম্ম
বিজয়ার দিনে কেন এই দশেরা বা দশহরা ?কলিঙ্গ বিজয় সম্রাট অশোকের জীবনে ধম্মানুভুতির একটি মাইলস্টোন। শোকাহত রাজা ঘোষণা করলেন তিনি আর যুদ্ধ বিজয় করবেন না করবেন ধম্ম-বিজয়। মানবতা ও সখ্যতার মাধ্যমে গুড়িয়ে দেবেন জাত-পাতের প্রাচীর ও দেশ
কালের সীমানা। বিশ্বভ্রাতৃত্ব এবং বসুধৈবকুটুম্বকম এর নিবিড় বন্ধনে সব মানুষের মন জয় করবেন। সম্রাট অশোকের নেতৃত্বে এবং তার গুরু
ভন্তে মোগলীপুত্ত তিস’র সভাপতিত্বে পাটলিপুত্রে সংঘটিত হল তৃতীয় বুদ্ধ ধম্ম
সম্মেলন “ধম্ম বিজয়”। ১৩ নং রক এডিক্ট –এ সম্রাট ঘোষণা করেন “'অসুপুত্ত পপৌত্ত মে নবম্ বিজয়ম বিজিতব্যম”। আমার পুত্র এবং প্রপৌত্ররাও কোন নতুন রাজ্য যুদ্ধ বিজয় করবেনা । যদি বিজয় করতে হয় তা হবে ধম্ম-বিজয়।অসুর দর্শনের
এই মূল বাণীকে ধ্বংস করার জন্যই ভুদেবতারা
এই দিনে দশেরা বা বিজয়া দশমী পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
আজও এই মূলনিবাসী গণনায়কদের প্রতিকী পুতুল পুড়িয়ে ব্রহ্মণ্যবাদী বর্বরেরা বিজয় উল্লাস পালন করে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ৮৫% অসুর ভারতবাসীর রক্ত শুষে এই পৈশাচীক উৎসব মূলনিবাসীদের আত্মমর্যাদা, আত্মপরিচয় ও স্বধম্মের উপর এক সামাজিক বলাৎকার এবং ঘৃণ্য চক্রান্ত। মানুষকে জ্বালানো, মানুষকে হত্যা করার এই প্রতীকি উৎসব পালন করতে
ওরা কুন্ঠিত হয় না কেননা মূলনিবাসী অসুরদের পরাজয়ের মধ্যেই দেবতাদের বিজয় উল্লাস
প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই দশহরাই বাংলায় “বিজয়া দশমী” বাংলায় এই দেবায়ন সুরু হয় হর্ষবর্ধনের
মৃত্যুর পর। কনৌজ তখন বৈদিক ধর্মের প্রধান ঘাঁটিতে পরিণত । কুমারিল ভট্টের
নেতৃত্বে ব্রাহ্মণেরা পৈশাচিক হত্যালীলায় মেতে ওঠে। হাজার হাজার বৌদ্ধ শ্রমণের মাথা
ধড় থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বৌদ্ধ শাস্ত্র রাশি। অনেক বৌদ্ধ শ্রমণ
পুঁথিগুলি বাঁচানোর জন্য হিমালয়ের রাজ্যগুলিতে আশ্রয় নিতে বাদ্ধ হয়।
কনৌজ তখন বিজয়ী ব্রাহ্মণদের রাজধানী। কূমারিল
ভট্ট তাঁদের প্রধান। কূমারিল ভট্ট মীমাংসা সূত্রের উপড় একটি কমেন্টরই লেখেন। এই সময়
থেকে সারা ভারতবর্ষে কনৌজ থেকে ব্রাহ্মণ সরবরাহ করা হতো। অসুর বাংলায় এই সময় থেকেই
ব্রাহ্মণের চালান শুরু হয়। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বহুবিবাহ এবং সম্বন্ধ নির্ণয়
গ্রন্থে বাংলায় চালান হওয়া ৫জন ব্রাহ্মণ ও তাদের চাকরের তালিকা দেওয়া হয়েছে ঃ১) ভট্টনারায়ণ২) শ্রীহর্ষ ৩) দক্ষ৪) বেদগর্ভ৫) ছান্দড়এদের সঙ্গে আসা চাকরগুলো যথাক্রমে ঃ১) মুকুন্দ ঘোষ২) বিরাট/দাশরথী গুহ৩) দশরথ বসু৪) কালিদাস মিত্র৫) পুরুষোত্তম দত্তবল্লাল সেন অসুর বাংলাকে কৌলীন্য প্রথার চোলাই গেলাতে শুরু করেন এবং বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ভুদেবতা ও
তাদের ভৃত্যদের ভূদান, গাঁই দান, গোত্র দান করে দেব সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা
করেন। ভুদেবতারা ১৫শ শতকে বাংলায় এই দশেরা বা
দশহরা কে নতুন কলেবরে প্রতিষ্ঠা করার তোড়জোড় শুরু করেন।
বাংলায় প্রথম দুর্গা পূজা ঃ ইংরাজী সংবাদপত্র- এর ২৮/১০/১৯৬১ সালের
চিঠিপত্র কলমে শ্রী সুরথ চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তির একটি চিঠি প্রকাশিত হয়। তিনি
দাবি করেন যে, রাজসাহী জেলার তাহেরপুরে রাজা কংস-নারায়ণ পঞ্চদশ শতাব্দীতে প্রথম দুর্গোৎসব
করেন। সেই সময় কবি কৃত্তিবাস ওঝা নাকি রাজা কংসনারায়ণের সভাকবি ছিলেন। কবি কৃত্তিবাস
রচিত বাংলা রামায়ণে এই দুর্গাপূজাকে “অকাল বোধন” হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।ডাঃ দীনেশচন্দ্র সেনের উল্লেখ করেনঃ‘কেহ কেহ অনুমান করেন, কৃত্তিবাস তাহেরপুরে রাজা বা
জমিদার কংস-নারায়ণের সভায় উপস্থিত হইয়াছিলেন। কিন্তু, কংস-নারায়ণের শেষে যে বংশাবলী
পাওয়া গিয়াছে, তাহাতে তাঁহাকে ষোড়শ শতাব্দীর লোক বলিয়া অনুমিত হয়। সুতরাং, ‘রাজা কংস-নারায়ণ পঞ্চদশ শতাব্দীতে
প্রথম দুর্গোৎসব করেন বলে জানা যায়’, এই কথাটার মধ্যে দিনাঙ্কের একটা ভালো রকম গণ্ডগোল পাওয়া যাচ্ছে।মুসলমান বিজয়ের/আক্রমণের পর হিন্দু রাজা গণেশের গৌড়ের সিংহাসনে আরোহন করেন। তিনি
১৩৯৮ খ্রী. পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। কবি কৃত্তিবাস জন্মেছিলেন ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দের
আশেপাশে। তিনি হয়ত এই সময়ে রাজা গণেশের সভায় এসে থাকবেন।
খোদ কোলকাতায় দেবী পূজা ঃ
শঙ্কর রায়ের একটি লেখা থেকেই তুলে দিলাম –
“Imagine Calcutta in 1757, when it looked like a village with
huge vacant spaces strewn haphazardly. A grandiloquent Durga puja was underway.
The venue was a newly-built pucca house built upon a four-acre strip by the
yet-to-be crowned Nabakrishna Deb, who named the palatial residence as
Shobhabazar Rajbari. There was a VVVIP at the
centre of a podium, an Englishman, colonel Robert Clive of the English East
India Company (EEIC), who had conquered Bengal by defeating Nawab Mirza
Muhammad Siraj-ud-doula in the Battle of Plassey on June 23 that year. Clive was the chief guest.
Religious scruples were on the wayside and nautch girls, mostly from Muslim gharanas,
entertained the Englishmen attending the dance-parties. For the new rulers,
beef and ham were bought from Wilson’s Hotel, let alone unlimited drinks that
inebriated them. Unbelievable as it may seem,
Deb had the nod from orthodox Sanskrit pundits in bringing Clive, a firinghee,
to grace a Hindu religious event in those days. Literary historian and poet,
Abanti Kumar Sanyal, throws light on the situation in a small book, Baboo.
Clive’s Sanskrit tutor was Jagannath Tarkapanchanan, according to Sanyal,
submitted to Clive for a handsome pension. As a result, there was no clamour
from the erudite-but-conceited Sanskrit pundits of Bhatpara (now in the North
24 Parganas district). Deb was conferred the title
of ‘Maharaja’ by Warren Hastings in 1766 for his unflinching loyalty and
services rendered to the company. This included the drafting of the infamous
1775 agreement between the EEIC and a group of ‘aggrieved’ royal officials, for
dethroningSiraj-ud-Doula, the last king of greater Bengal. The agreement was
signedat the palace of Jagat Seth, one of the signatories and the largest
banker of Asia in those days (financially several times larger than the first
ten bankers of Britain together). Other signatories included Siraj-ud-doula’s
commander-in-chief, Mir Jaffar, Roy Durlabh and Umichand. Also present was the
Maharaja of Krishnagar, portrayed as a patron of art and culture, whom social
historian Benoy Ghosh described as the initiator of ‘dependent and colonial
culture’, hybridised with feudal grandeur. The conspirators alleged that
the young Nawab had instituted an unbearable misrule and was atrociously
lascivious, making beautiful damsels insecure, and was a drunkard. This canard
was later refuted by Luke Scrafton, the director of the East India Company
between 1765 and 1768, “The name of Siraj-ud-daula stands higher in the scale
of honour than does the name of Clive. He was the only one of the principal
actors who did not attempt to deceive.” He wrote that the young Siraj had taken
an oath on the Quran at his father’s deathbed that he would thenceforth not
touch liquor – and that he had kept his promise. The conspirators gradually
became a symbol of hatred when anti-colonial sentiment grew during the national
freedom struggle. It is said that the land Deb’s house was built on belonged to
Sobharam Basak, who was much wealthier, and that Deb pressurised Basak using
his proximity to Clive. The new palace had a big dancing hall, an entrance
where shehnai tunes used to welcome the guests, a large library of Sanskrit,
Farsi, Arabic and English titles, and a mammoth dinner room, apart from scores
of living rooms. Much of this is now on the pages of history textbooks. Deb’s ceremony of 1757 might
have set a pattern for the Durga puja, which became a fashion andstatus symbol
among the upcoming merchant class of Kolkata. Deb and his descendants, like
Raja Radhakanta Deb, considered the aliens attending the family Durga Puja as
an index of social prestige. Over two centuries, the
festival turned into a socio-religious celebration, more dispersive perhaps
than Ganesha Chaturthi in Maharashtra or Dussera in northern India”.http://www.dnaindia.com/lifestyle/report_durga-pujas-colonial-roots_1754517 দাশাই পরব ঃদাশাই পরব অসুর-আদিবাসীদের একটি শোকপালনের পরব। পাঁচদিন ধরে চলে এই শোক পালন। কারণ বিদেশী দেবতারা তাদের প্রিয় রাজাকে নারীকে দিয়ে হত্যা করেছে অথবা বন্দী করে নিয়ে গেছে কোন গোপন ডেরায়। অসুর যোদ্ধারাও তাই নারীর ছদ্মবেশ ধারন করে। বেরিয়ে পড়ে তাঁদের রাজাকে খুঁজতে । শুরু করে ভুয়াং নাচ। হাতে ভুয়াং বাদ্য
যন্ত্র। ভুয়াং আসলে তীর ধনুকের ছদ্ম যন্ত্র। যাতে সন্ধিক্ষনে যুদ্ধ বিজয়ে সেগুলো কাজে লাগে। মুন্ডা,কোল আদিবাসীরা দাবী করেন দুর্গা তাদের মেয়ে। দেবতারা তাকে দুর্গে ধরে
নিয়ে যায়। বেশ্যা বানায়। হাঁড়ি সম্প্রদায়ের দাবী চণ্ডী তাঁদের মেয়ে। দেবতারা তাকে দিয়ে তাঁদের রাজাকে হত্যা করে। আজও বুক চাপড়ে ও হায়রে-ও হায়রে আওয়াজ করে ভুয়াং নাচের মাধ্যমে আদিবাসীরা তাঁদের রাজাকে খুঁজে বেড়ায়।বেশ্যা দুর্গার হাতে বৃহৎ বঙ্গের রাজা বঙ্গাসুরের হত্যা কাহিনী এভাবেই লোকায়ত হয়ে আছে আদিবাসীদের মধ্যে। আদিবাসী সত্তায় রাজত্ব হারানোর স্মৃতি এখনও সমান ভাবেই বর্তমান। বিদেশী দেবতারা এখনো মানব হত্যার মন্ত্রগুলি বিজয় উল্লাসে উচ্চারণ করে চলছে। প্রতি বছর কুমারী পূজার নাম করে চলছে দুর্গা বানানোর প্রতিযোগিতা। ধর্মীয় মোড়কে পরিবেশন করা হচ্ছে জিঘাংসার বিষ। কাত্যায়নী, চামুণ্ডা ও ভৈরবীদের মোহে আচ্ছন্ন করে রাখা হচ্ছে অসুর
বাঙালীকে। বাঙ্গালী তাই আত্মবিস্মৃত। ভূদেবতাদের উল্লাস, ঢাকের গগন ভেদী গর্জনে
ঢাকা পড়ে গেছে তাদের পূর্বপুরুষের আর্তনাদ। ধুপের ধোঁয়া আর ফুল বেলপাতার গন্ধে ঝাপসা
হয়ে গেছে তার দৃষ্টি। দেবায়ন ও দেব দর্শনের হাঁড়িকাঠে অসুর বাঙালীর নির্বীর্য করণ ও নরমেধের এটাই এখন
সব থেকে শক্তিশালী নিধন যজ্ঞ।