অসুর-বাঙ্গালী নিধনের জন্য ভৈরবী প্রথা
বাজারে ধর্মের ষাঁড় ছেড়ে দেবার একটা লোকায়ত প্রথা আছে। নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভিতর এইসব ষাঁড়েরা ঋতুবতী গাভীদের নিষিক্ত করে। কৃষিজীবী মানুষেরা উন্নতমানের গোকুল বাড়ানোর জন্য সহমতের ভিত্তিতে এটা করে থাকতো। বিনিময়ে ষাঁড় পেত অবারিত মাঠ। যত্র তত্র বিচরণের অবাধ ছাড়ত্র। ঋতুবতী গাভীদের সঙ্গে সহবাসের অধিকার। এইসব ষাঁড়গুলোকে ভৈরবের প্রতিনিধি হিসেবে সমীহ করার বিষয়টাও লোকায়ত। মেয়ে ষাঁড় বা ষাঁড়নী ছেড়ে দেবার প্রচলন বাংলাতে অন্ততঃ দেখিনা।
বল্লাল সেন অসুর বাংলাকে কৌলীন্য প্রথার চোলাই গেলাতে শুরু করলে এরকম একটি প্রথা চালু হয় একেবারে মানুষের জন্য। ধর্মের ষাঁড় ছেড়ে দেবার মতো কৌম সমাজ থেকে রূপবতী যুবতী বাছাই করে তৈরী হয় ভৈরবীদের বাহিনী । এরা একদিকে যৌনাচারী কাপালিকের সাধন সঙ্গী। অন্যদিকে দেহপসারিনী । রূপের জালে সুগঠিত যুবককে ধরে এনে কাপালিকের হাতে তুলে দেওয়া ছিল এদের কাজ। কাপালিকের খড়্গ এরকম সহস্র বাঙ্গালী যুবকের শিরোচ্ছেদ ঘটিয়েছে তার অনেক প্রমাণ আছে। প্রেমের জালে ফাঁসাতে গিয়ে অনেক ভৈরবী নিজেও ফেঁসে গিয়েছে এমন প্রমাণতো কপালকুণ্ডলা। দু একটি অঘটন ছাড়া এই প্রথা যে দারুণ ভাবে অসুরদের নির্বংশ করতে সক্ষম হয়েছিল তাতো ব্রিটিশ পূর্ব ভারতে সবক্ষেত্রে অসুরদের অনুস্থিতি থেকেই অনুমেয়।
দুর্গা আবার ভৈরবীদের সর্দারনী। তিনি দেহপসারিণী মেনকার কন্যা। ইন্দ্রপ্রস্ত বিনিময়ের সন্ধিতে অসুর গিরিরাজ মেনকাকে পেয়েছিলেন। দেবতারা তাকেই মহিশাসুর নিধনের জন্য বিষকন্যা হিসেবে প্রেরণ করে। কিন্তু দুর্গা মহিশাসুরের রূপ,গুন ও খ্যাতি দেখে তার প্রতি আকৃষ্ট হয় । সধর্মিণী হিসেবে অসুরপুরীতে সন্তানদের নিয়ে দিন কাটায়। কাপালিক ইন্দ্র ও ব্রহ্মা এতে ভয়ানক ক্ষেপে যায়। এর পরেই ঘটে বালক শুম্ভ-নিশুম্ভের হত্যা লীলা ও মহিশাসুর বধ।
আজও আত্মবিস্মৃত অসুর বাঙ্গালী ভৈরবীর মোহে আচ্ছন্ন। ঢাকের গগন ভেদী গর্জনে ঢাকা পড়ে গেছে তাঁদের পূর্বপুরুষের আর্তনাদ। ধুপের ধোঁয়া আর ফুল বেলপাতার গন্ধে ঝাপসা হয়ে গেছে দৃষ্টি। ব্রাহ্মন্যবাদের হাড়িকাঠে অসুর বাঙ্গালীর নির্বীর্য করনের এটাই এখন সব থেকে শক্তিশালী নিধন যজ্ঞ ।