Pages

Monday, 13 January 2025

ফতিমা শেখ মুসলমান বলেই তাঁর অস্তিত্ব মুছে দিতে চাইছে সংঘ পরিবারঃ শরদিন্দু বিশ্বাস

 

ফতিমা শেখ মুসলমান বলেই তাঁর অস্তিত্ব মুছে দিতে চাইছে সংঘ পরিবারঃ
শরদিন্দু বিশ্বাস, কোলকাতা-৮৪  

ভারতে সার্বজনীন শিক্ষা আন্দোলন থেকে মুসলিম সমাজের প্রথম শিক্ষিকা ফতিমা শেখের নাম মুছে দেবার পরিকল্পনা নিয়েই  কি ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অন্যতম উপদেষ্টা দিলীপ মণ্ডল তার ট্যুইটার ব্যবহার করেছিলেন! নাকি হিন্দুত্ববাদী ঝান্ডা উড়িয়ে মূলনিবাসী-বহুজন ঐক্যে ফাটল ধরাতে চাইছিলেন তিনি ! আমি বাজি রেখে বলতে পারি উদ্দেশ্যটি ছিল হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে একটি বিভ্রান্তি তৈরি করা এবং হিংসার বাতাবরণ তৈরি করে একে অন্যের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া।  

গত ৩রা জানুয়ারী সারা দেশে পালিত হয়েছে সাবিত্রীবাই ফুলের ১৯৫তম জন্মদিন। একই ভাবে ৯ই জানুয়ারী বহুজন সংগঠনগুলি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক এবং সাবিত্রীবাই ফুলের সহযোদ্ধা ভারতে মুসলিম সমাজের প্রথম শিক্ষিকা ফতিমা শেখের জন্মদিন পালন করেছে।  পশ্চিমবঙ্গে এই সম্প্রীতির বন্ধনকে মজবুত করতে  জয় ভীম ইন্ডিয়া  নেটওয়ার্কে মুখপত্র ভয়েস অফ বহুজনের পক্ষে থেকে কোলকাতা প্রেস ক্লাবে সমাজ সেবায় অনন্য অবদানের জন্য বীরভুম কন্যা আয়েশা খাতুনকে প্রথম সাবিত্রী-ফতিমা উৎকর্ষ সম্মান প্রদান করা হয়। এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ, সমাজসেবী এবং সাহিত্যকেরা।  বহু পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এই খবর। আর ঠিক এরকম সময়ে ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের উপদেষ্টা দিলীপ মণ্ডল তার ট্যুইটারে ফতিমা শেখকে অবাস্তব চরিত্র বলে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করে। 

তিনি তাঁর ট্যুইটে লেখেন, “আমি একটি গল্প বা বানানো চরিত্র নির্মাণ করেছিলাম এবং তাঁর নাম দিয়েছিলাম ফতিমা শেখ। আমাকে মার্জনা করবেন। সত্য হল, এই ফতিমা শেখ বাস্তবে ছিলেন না। তিনি কোন ঐতিহাসিক চরিত্র নয়। কোন বাস্তব মানুষ নয়।

এটা আমার ভুল যে জেনেবুঝেই কোন এক পরিস্থিতিতে আমি এই চরিত্রটি নির্মাণ করে আলতো ভাবে ছেড়ে দিয়েছিলাম। আপনারা গুগল সার্চ করে এর আগে ফতিমা সম্পর্কে একটি তথ্যও পাবেন না। তাঁর সম্পর্কে কোন বই নেই। কিচ্ছু নেই। জিজ্ঞাসা করবেন না কেন আমি এই চরিত্র নির্মাণ করেছিলাম। এটা ছিল সময় ও পরিস্থিতি অনুসারে একটি নির্মাণ। তাই আমি ফতিমা চরিত্রটি তৈরি করেছিলাম। হাজার হাজার মানুষ এই কাহিনী মেনে নিয়েছিলেন এবং তাঁরা আমার কাছ থেকেই প্রথমে এই নাম শুনেছিলেন। কি করে একটি কাহিনী এবং একটি ছবি নির্মাণ করতে হয় আমি জানি। আমি এই বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলাম। সুতরাং এটা আমার কাছে দুঃসাধ্য ছিল না। একটি কাল্পনিক ছবি আঁকা হয়েছিল, কারণ ফতিমার কোন পূরানো ছবি ছিলনা। আমি নানা ধরণের কাহিনী ছড়িয়েছিলাম জন্য ফতিমা বাস্তবায়িত হয়েছিল। সাবিত্রিবাই ফুলে এবং জ্যোতিরাও ফুলেকে নিয়ে যে রচনা সমগ্র প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে ফতিমার নাম উল্লেখ নেই। এমনকি বাবাসাহেব আম্বেদকরও তাঁর তাম উল্লেখ করেননি। ব্রিটিশ ডকুমেন্টে জ্যোতিরাও ফুলে এবং সাবিত্রীবাই ফুলের নাম উল্লেখ থাকলেও ফতিমার নাম উল্লেখ নেই। এমনকি কোন মুসলিম স্কলার তাঁর নাম উল্লেখ করেনি। সে কোথাও নেই, কোত্থাও নেই”।

একদা আম্বেদকরবাদী বলে সুপরিচিত একজন সাংবাদিকের এ হেন ট্যুইট দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বহুজন আন্দোলনের মানুষেরা। দিলীপ মণ্ডলের ট্যুইটারেই তাঁকে নাস্তানাবুদ করা হয়। এই মিথ্যার জবাব দিতে উঠে আসে নানা প্রকাশিত সত্য এবং ফতিমাকে নিয়ে সাবিত্রীবাই ফুলের নিজের চিঠি।    

এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল নিয়েই সংঘ পরিবার দিলীপ মণ্ডলের মত একজন প্রতিষ্ঠিত দলিত ইন্টেলেকচুয়ালকে দিয়ে ভারতের প্রথম মুসলমান শিক্ষিকা ফতিমা শেখের উপর আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। উদ্দেশ্য সার্বজনীন শিক্ষায় ফতিমার মত একজন মুসলমান নারীর অস্তিত্ব এবং অবদান মুছে ফেলা এবং দলিত-মুসলিমদের মধ্যে একটি চিরস্থায়ী বৈচারিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা। ইতিমধ্যেই সংঘ পরিবার বুঝে নিয়েছে যে দলিত-মুসলিম জনাধারই ভারতের রাজনৈতিক উত্থান পতনের নিয়ন্ত্রক। মণ্ডল কমিশনের মতে এরাই সংখ্যায় ৮৫ শতাংশ। এদের ঐক্যমতকে ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে বহুজন বিচার ধারা। আর এই বহুজন বিচার ধারাই হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের সব থেকে বড় বাঁধা। এই জনাধার অটুট থাকলে ১৫ শতাংশ ব্রাহ্মণবাদীরা কোনদিনই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবেনা। ফলে যে ভাবেই হোক না কেন দলিত-মুসলিম ঐক্যে ফাটল ধরাতে হবেই। পোষমানা  কুনকি হাতি দিয়ে জঙ্গলের হাতিদের বশ করতে হবে। দিলীপ মণ্ডল সেই কুনকি হাতি যাকে দিয়ে দলিত জনাধারকে বাগে আনতে চাইছিল বিজেপি বা সংঘ পরিবার।                             

কিন্তু এই চাল সার্থক হয়নি। দলিত বুদ্ধিজীবীরাই প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলে দিলীপ মণ্ডলের সমস্ত অভিসন্ধিকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন। আমরা ভয়েস অফ বহুজন থেকে একাধিক তথ্য এনে প্রমাণ করেছি যে দিলীপ মণ্ডল যে স্বীকারোক্তি করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিমূলক। তিনি দাবী করেছিলেন যে, ফতিমা শেখের কোন বাস্তবতা নেই। একটা গল্প রচনা করে তিনি এই নামকরণ করেছেন। এটা যে কতবড় মিথ্যা তাঁর প্রমাণ তার প্রথম প্রমাণ সাবিত্রীবাই ফুলের নিজের লেখা একটি চিঠি। ১৮৫৬ সালের ১০ই অক্টোবর সাবিত্রীবাই ফুলে তার স্বামী জ্যোতিরাও ফুলেকে লিখছেন, “This must be causing a lot of trouble to Fatima. But I am sure she will understand and won’t grumble”

১৯৮৮ সালে সাবিত্রী ফুলের এই চিঠি প্রথম মারাঠী ভাষায় প্রকাশ করেন এম জে মালি। পরে মহারাষ্ট্র স্টেট বোর্ড অফ লিটের‍্যাচার এন্ড কালচার  “সাবিত্রী ফুলে সমগ্র” নামে এটি প্রকাশ করে। প্রকাশিত এই গ্রন্থগুলিতে ছাপা হয়েছে সাবিত্রীবাই ফুলে এবং ফতিমা শেখের একমাত্র ছবি। এই ছবিতে তাঁদের পাশে দুইজন পাঠরত বালিকাও দৃশ্যমান রয়েছে। 

 

১৯৯১ সালে ইংরেজীতে প্রকাশিত হয় থারু এবং ললিতকা সম্পাদিত খ্রীস্ট পূর্ব ৬০০ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত ভারতীয় নারীদের লেখা সমগ্র। একাডেমিক স্তরে এটাই ভারতের নারী সমাজের লেখালিখি নিয়ে প্রথম কাজ। এই রচনা সমগ্রে ফতিমা শেখকে সাবিত্রীবাই ফুলের সহকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। থারু এবং ললিতা লিখেছেন যে, জ্যোতিরাও ফুলে এবং সাবিত্রীবাই ফুলে পুনেতে পিছিয়ে রাখা ছেলেমেয়েদের জন্য যে সব বিদ্যালয়গুলি শুরু করেছিলেন, তাঁদের সহকর্মী ছিলেন ফতিমা শেখ। 

২০১০ সালে বিখ্যাত ব্রিটিশ স্কলার “A Cry for Dignity: Religion, Violence and the Struggle of Dalit Women in India” নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থে তিনি উল্লেখ করেন যে,    “Savitribai graduated from her Training College with flying colours (along with a Muslim woman Fatima Sheikh), with her husband, she opened five schools in and around Pune in 1848…”

সাবিত্রীবাই ফুলে এবং ফতিমা শেখের একমাত্র ছবি যাকে দিলীপ মণ্ডল সন্দেহজনক অংকন বলে উড়িয়ে দিতে চাইছিলেন সেই ছবি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল “মজুর” নামে একটি মাসিক পত্রিকায়। ১৯২৪-৩০ সাল পর্যন্ত এর সম্পাদক ছিলেন রানা লাড।

এই সমস্ত লিখিত গ্রন্থ এবং তথ্য প্রমাণ করে যে বিজেপি এবং সংঘ পরিবার তাঁদের পালিত দিলীপ মণ্ডলকে দিয়ে যে পদ্ধতিতে ভারতের প্রথম সার্বজনীন শিক্ষায় মুসলমান নারী ফতিমা শেখ উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন তা মুছে ফেলতে চায়। কিন্তু এটা ব্যর্থ হয়েছে জাগ্রত বহুজন সমাজের জোরালো প্রতিরোধে।

আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে মুসলিম সমাজের মধ্যে ফতিমা শেখের মত মহিয়সী নারীকে এখনো সেই ভাবে সম্মানিত করা হয়নি। আয়োজন করা হয়নি কোন আলোচনা সভা। এই নীরবতার সুযোগ নিয়েই বিজেপি এবং সংঘ পরিবার ভারতের ইতিহাস থেকে ম্যসলমানের অবদান মুছে ফেলার বা নিদর্শনগুলি ধ্বংস করার সাহস পাচ্ছে। আদিবাসী-মূলনিবাসী ঐক্য মজবুত হলে এবং ৮৫ শতাংশ মানুষের ঐক্য এবং প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত হলে বিভ্রান্তিকারীরা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেনা।            

Sunday, 5 January 2025

সমাজ সেবায় অনন্য অবদান রাখার জন্য সাবিত্রী-ফতিমা উৎকর্ষ সম্মান-২৫ পেলেন বীরভূম কন্যা আয়েশা খাতুন

সমাজ সেবায় অনন্য অবদান রাখার জন্য সাবিত্রী-ফতিমা উৎকর্ষ সম্মান-২৫ পেলেন বীরভূম কন্যা আয়েশা খাতুন    

শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজ সংস্কার এবং যুক্তিবাদের প্রসার ঘটাতে যে দুই মহীয়সী নারী, সাবিত্রীবাই ফুলে এবং ফতিমা শেখ যে অনন্য ভুমিকা স্থাপন করেছিলেন অজ্ঞাত কারণে আজও তা উন্মোচিত হয়নি। তাঁদের আন্দোলনের সুফল ভোগ করলেও আজও সমাজের কাছে তাঁরা অপরিচিত রয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই দুই নারীকে জানানো হয়নি যথার্থ সম্মান।

এই ঢেকে রাখা ইতিহাসকে স্বমহিমায় তুলে এনে সাবিত্রীবাই এবং ফতিমা শেখের অবদানকে সম্মান জানানোর জন্য ভয়েস অফ বহুজন  “SAVITRI-FATIMA AWARD OF EXCELLENCE” নামে একটি সম্মাননা ঘোষণা করে। ৯ জন বিশিষ্ট সমাজসেবী এবং শিক্ষাবিদদের নিয়ে ঘঠিত হয় একটি কমিটি। প্রাপ্ত ৬টি বায়োডাটার উৎকর্ষতা বিচার করে এবং নানাবিধ উপায়ে তথ্য সংগ্রহ করে বিচারকেরা আয়েশা খাতুনকে “SAVITRI-FATIMA AWARD OF EXCELLENCE-25” এর জন্য মনোনীত করেন।
“Go, Get Education

Be self-reliant, be industrious

Work, gather wisdom and riches,

All gets lost without knowledge

We become animal without wisdom,

Sit idle no more, go, get education

End misery of the oppressed and forsaken,

You’ve got a golden chance to learn

So learn and break the chains of caste.

Throw away the Brahman’s scriptures fast”.

— Poem by Savitribai Phule (More poems at Poems by Savitribai Phule)

৮ই মার্চ, পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দুনিয়া জুড়ে নারীদের সমানাধিকারের এই মাইল ফলক প্রথিত হওয়ার অর্ধশত বছর আগে ভারতের মাটিতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সমস্ত নিপীড়ন থেকে নারীকে মুক্ত করার জন্য, জাত ব্যবস্থা এবং ব্রাহ্মণবাদের শিকড় শুদ্ধ উপড়ে ফেলার জন্য যারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছিলে এমন দুই মহীয়সী নারী হলেন সাবিত্রীবাই ফুলে এবং ফতিমা শেখ।      

 সাবিত্রীবাই ফুলে জন্মগ্রহণ করেন ১৮৩১ সালের ৩রা জানুয়ারী এবং ফতিমা শেখ জন্মগ্রহণ করেন ১৮৩১ সালের ৯ই জানুয়ারী। সার্বজনীন শিক্ষার দাবী নিয়ে আন্দোলন শুরু করার আগে জ্যোতিরাও ফুলে সাবিত্রীবাই এবং ফতিমাকে সিন্থিয়া ফারার নামে একটি অ্যামেরিকান মিশনে শিক্ষা সহায়ক প্রশিক্ষণ নিতে পাঠান। ১৮৪৭ সালে সাবিত্রী ফুলে প্রথম বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলে সেখানেই শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন ফতিমা শেখ। ১৮৪৮ থেকে ১৮৫৩ তাঁরা মাহার, মাংগ, মুসলিম, শূদ্র এবং অতিশুদ্রদের জন্য ১৮টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়ের পাশাপাশি দুই জনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৮৫২ সালে গড়ে ওঠে মহিলা সেবা মণ্ডল। বিধবা হলেই নারীর মাথা মুন্ডন করে দেওয়া, স্বামীর সাথে সহমরণে বাধ্য করা, অবাঞ্ছিত সন্তান আসলেই তাঁকে হত্যা করা অথবা নৃশংস নির্যাতন করে সমাজ থেকে দূর করে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রবল আন্দোলন শুরু করেন সাবিত্রী ফুলে এবং ফতিমা শেখ। আওয়াজ তোলেন, “হাম ভারত কি নারী হ্যায়, ফুল নাহি, চিঙ্গারী হ্যায়”।
বাল্য বিবাহের কারণে এই সময়ে বাল্য বৈধব্য একটি প্রবল সমস্যা ছিল। ছিল অবাঞ্ছিত মাতৃত্বের সমস্যা। সাবিত্রীবাই ফুলে এবং ফতিমা শেখ কন্যা সন্তান হত্যা, শিশু হত্যা এবং অবাঞ্ছিত মাতৃত্বের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য “বাল হত্যা প্রতিবন্ধক গৃহ” নামে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এমনই এক কুমারী কন্যা কাঁসিবাইয়ের সন্তান যশবন্তকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করেন সাবিত্রীবাই ফুলে।           

১৮৭৩ সালে জ্যোতিরাও ফুলে সত্য শোধক সমাজ গঠন করলে সাবিত্রী ফুলে এবং ফতিমা শেখ এই সংগঠনের নারী শাখার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সাবিত্রী ফুলে নারী বাহিনীর সভানেত্রী হিসেবে সমাজ সংস্কারের কাজ শুরু করেন।  

অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, এমন দুই মহামানবী আজও ইতিহাসে উপেক্ষিত থেকে গেছেন। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাঁদের স্মরণ করে এবং তাঁদের আরদ্ধ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কোন উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বহুজন সমাজের এই অনালোকিত অধ্যায়কে তুলে ধরতে এবং এই দুই মহীয়সী নারীর অবদানকে যথাযথ মর্যাদা দিতে Voice of Bahujan এর পক্ষ থেকে ২০২৫ সাল থেকে শুরু করা হল SAVITRI- FATIMA Award of Excellence প্রদান। 

 

সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ দেবী চ্যাটার্জী, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ডিন  অধ্যাপক ডঃ সনৎ নস্কর, অধ্যাপিকা ডঃ মেরুনা মুর্মু, নৃতাত্ত্বিক কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়, সমাজসেবী মহঃ নুরুদ্দিন শাহ, কবি কল্যাণী ঠাকুর, নারী আন্দোলনকর্মী চন্দ্রাস্মিতা এবং ইউআরআই এর রিজিওনাল সঞ্চালক বিশ্বদেব চক্রবর্তী।
শিক্ষাবিদ দেবী চ্যাটার্জী বলেন যে, “সাবিত্রীবাই ফুলে এবং ফতিমা শেখ নারী শিক্ষা এবং সমাজ সংস্কারে যে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছিলেন তা বিরল। আজও তার যথার্থ স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে এই দুই নারী যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন সেটাই ভারত, সেটাই আমাদের দেশ। এই দুই নারীকে যথাযথ মর্যাদা দেবার জন্য Voice of Bhujan যে “SAVITRI-FATIMA AWARD OF EXCELLENCE” ঘোষণা করেছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।  
শিক্ষাবিদ ডঃ সনৎ নস্কর উল্লেখ করেন যে, “উৎকর্ষতা এবং সময়ের নিরিখে সাবিত্রী ফুলে সার্বজনীন শিক্ষা ক্ষেত্রে যে নজির সৃষ্টি করেছিলেন তার জন্যই ৩রা জানুয়ারী অর্থাৎ সবিত্রীবাই ফুলের জন্মদিনকে শিক্ষক দিবস হিসেবে মান্যতা দেওয়া হোক”।
অধ্যাপিকা মেরুনা মুর্মু জানান যে, আয়েশা খাতুনকে মনোনীত করে সুযোগ্য হাতেই তুলে দেওয়া হচ্ছে   SAVITRI-FATIMA AWARD OF EXCELLENCE-25 ।

“আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি। আরো, আরো অনেক আগেই সাবিত্রীবাই ফুলে এবং ফতিমা শেখকে আমাদের সম্মান জানানো উচিৎ ছিল। ভয়েস অফ বহুজন এই দুই নারীর নামে অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করে এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।                  

 VOICE OF BAHUJAN এর অধিকর্তা শরদিন্দু বিশ্বাস জানালেন যে,       

“সমাজ সেবা, সমাজ সংস্কার এবং সাহিত্যে অসামান্য কৃতিত্ব রাখার জন্য আয়েশা খাতুনকে SAVITRI- FATIMA Award of Excellence-25 দিতে পেরে আমরা গর্ব অনুভব করছি। আমরা মনে করি শিক্ষিত এবং আদর্শ নারী, আদর্শ সমাজ, আদর্শ জাতি, আদর্শ দেশ গড়ে তুলতে পারে। দুই মহীয়সী নারীর নামে এই সম্মাননা সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং বৌদ্ধিক কাজের জগতে নারীদের উৎসাহিত করবে।“    

প্রতিবছর ৪ঠা জানুয়ারীতে একজন নারীকে এই সম্মান প্রদান প্রদান করা হবে। যে নারীরা শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সমাজসেবায় অনন্য অবদান রাখছেন তাঁদেরকে বায়োডাটা সহ কাজের তথ্য পাঠাতে অনুরোধ জানান সংগঠকেরা।